প্রোফাইল ছবি থেকে ভালবাসা, অতঃপর বিয়ে
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া সম্প্রতি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তাতিয়ানার সঙ্গে। বলা যায় অনেকটা হঠাৎ করেই প্রেমে পড়ে যান জামাল। মুঠোফোনের পর্দায় ভেসে ওঠা ছবি থেকে ভালো লাগা, তারপর প্রেম ও শেষ পরিণতি বিয়ে। কিভাবে হয়ে গেলো এতকিছু? বেশ খোলামনেই সব জানিয়েছেন তিনি।
জামাল ভূঁইয়ার ভালবাসার মানুষকে প্রথম দেখার গল্পটা অনেকটা কাকতালীয়। প্রথম দেখার বিষয়ে তিনি জানান, ‘পরিবার থেকে বিয়ের চাপ থাকলেও ফুটবল নিয়েই বেশ মেতে ছিলাম। একদিন বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মনির চাচা মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, আমার বন্ধুর সুন্দরী এক মেয়ে আছে। তোমার ভালো লাগতে পারে।’
তখন সেই নাম্বার ফোনে টুকে রাখেন জামাল ভূঁইয়া। এরপর হোয়াটসঅ্যাপে খুঁজতে গিয়ে প্রোফাইল পিকচারে চোখ পড়তেই হৃদয়ে দোল খেলে যায় তার। ছোট ছোট বার্তায় দুজন দুজনের পরিচিত হয়ে ওঠেন। চেষ্টা চলতে থাকে পছন্দ-অপছন্দ জানার। ভালো-মন্দের খোঁজ নিতে নিতে মুঠোফোনেই দুজনের ভাব বিনিময় জমে গেল দারুণ।
প্রেমে পড়লে ভালোবাসার মানুষকে পাশে বসে দেখার আকুতি জেগে ওঠা স্বাভাবিক। এমনটি হয়েছিল জামালেরও। ওপারে বার্তা পাঠানল, ‘আমরা কি দেখা করতে পারি?’ অপর প্রান্ত থেকে ‘হ্যাঁ’ জবাব আসতেই ঢাকা থেকে ডেনমার্কের বিমানে চেপে বসা। সেখান থেকে এক ঘণ্টার রাস্তা পাড়ি দিয়ে জার্মানি গিয়েই সেরে ফেলেন শুভদৃষ্টি বিনিময়।
প্রথম দেখার তারিখটা বেশ ভালোভাবেই মনে আছে জামালের। ২০১৯ সালের ৮ আগস্ট জার্মানির এক কফি হাউসে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বসেন অন্তর্জালে প্রেমে পড়া যুগল। ছেলে উত্তেজনায় এদিক-ওদিক তাকায়। মেয়েটি লজ্জায় মাথা নিচু করে টেবিলে আঁকিবুঁকি কাটে। ক্যাফেতে দুই ঘণ্টার প্রেমের অনুশীলনেই ভালোবাসার প্রস্তাব দিয়ে বসলেন জামাল। সে মূহুর্তের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ইউরোপে ওটাই আমার প্রথম কোনো বাংলাদেশি মেয়ের সঙ্গে বসা। খুব লজ্জা পাচ্ছিলাম, নার্ভাস লাগছিল। সামনাসামনি সেদিনই প্রথম ভালোবাসার প্রস্তাব দেওয়া। এরপর তো সবকিছুই দ্রুতই ঘটে গেছে।’
আগস্টে প্রথম সাক্ষাতের পর ডিসেম্বরেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন জামাল। ডেনমার্ক সরকারের কাছে বিয়ের আবেদন করতেই তা মঞ্জুর হয়ে যায়। তত দিনে ফেডারেশন কাপ শেষ হয়ে গেছে। মায়ের সঙ্গে আলোচনা করে ডেনমার্ক ফিরে ৫ ডিসেম্বর তাতিয়ানাকে স্থায়ীভাবে নিজের জীবনসঙ্গিনী করে নেন বাংলাদেশ ফুটবল দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়।
মনের মতো মানুষ পাওয়ার আনন্দ লুকাননি জামাল ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘ও তো খুবই সুন্দর! প্রথম দেখাতেই আমার ভালো লেগেছে।’ জীবনসঙ্গিনীর পাঁচটি ভালো গুণ জিজ্ঞাসা করতেই মুখস্থ নামতা বলার ঢঙে এ ফুটবলার বলে ফেলেন, ‘ও বুদ্ধিমান, অনেক স্মার্ট, দেখতে ভালো, কম্পিউটার সম্পর্কে সব জানে, আমার চেয়ে ভালো বাংলা বলতে পারে (হাসি)।’ পাঁচটির শর্ত না দিলে হয়তো দশ-বারোটি গুণই একদমে বলে যেতে পারতেন তিনি।
ভালোবাসার সঙ্গে হাত ধরে হাঁটে মান-অভিমান। জীবনসঙ্গিনীর অভিমান ভাঙানো কঠিন নাকি ভারতীয় অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর পা থেকে বল কেড়ে নেওয়া সোজা? এমন প্রশ্নের উত্তরে দ্বিতীয়টিকেই বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘সুনীল ছেত্রীর পা থেকে বল কেড়ে নেওয়াই সোজা। তবে মান-অভিমান হলে আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলি।’
নতুন জীবন নিয়ে এরইমধ্যে স্বপ্নের জাল বুনে ফেলেছেন জামাল ভূঁইয়া। তার ইচ্ছা চার সন্তানের বাবা হবেন। তিনি বলেন, ‘আমি বড় পরিবার (৪ সন্তান) চাই। একটা বাচ্চা ঠিক আছে। কিন্তু ভাই-বোন না থাকলে বাচ্চাটারই খারাপ লাগবে।’
বিয়ের কয়েকদিন না যেতেই জাতীয় দলের জার্সির টানে জামালকে ফিরতে হয়েছে ঢাকায়। ফেরার সময় স্ত্রীর জিজ্ঞাসা ছিল, ‘আবার কবে দেখা হবে?’ আপাতত সময়টা জানা নেই জামালেরও। তবে একজন আরেকজনের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটার দূরে থাকলেও সে দূরত্ব কেবলই ভৌগোলিক। জামাল-তাতিয়ানার মনের বিষুবরেখা যে মিলে আছে একই বিন্দুতে।