গমের ভালো ফলনের আশা
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী জেলায় গমের শীষ বেরুতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় আবাদ ভালো হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে আবাদের ক্ষতি না হলে ভাল ফলন পাবেন বলে আশা করছেন চাষিসহ সংশ্লিষ্টরা। দাম আশানুরুপ না পেলেও গতবারের চেয়ে এবারে গমের আবাদ বেশী হয়েছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে গম চাষ হয়েছে ২৬ হাজার ৫৬১ হেক্টর। গতবছর আবাদ হয়েছিল ২৫ হাজার ২৩০ হেক্টরে। এবারে আবাদ বেশী হয়েছে ১ হাজার ৩৩১ হেক্টর।
গমের আবাদ কম হওয়ার বিষয়টি নিয়ে গমচাষি ও কৃষিবিদদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমের শুরু থেকেই অনুকুল আবহাওয়া বিরাজ করছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমি গম চাষের উপযোগি হওয়ায় আবাদ বেশী হয়েছে।
বরেন্দ্র উন্নয়ন বহুমূখী কর্তৃপক্ষ স্থাপন হওয়ার আগে জেলার চাষিরা রবি মৌসুমে ডাল জাতের ফসলের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে গমের আবাদ করতেন। গভীর নলকুপ আসার পরে এবং আশানুরুপ দাম না থাকায় আবাদ কমতে থাকে। আবার সরিষা, ডাল ফসল ও আলু তোলার পরে চাষিরা একই জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করে থাকেন। কিন্তু গমের আবাদ করলে সেই জমিতে বোরো ধানের চাষ করা যায় না। তাছাড়া ধানের দাম বাড়লেও গম আবাদ করে এর নায্যমুল্য থেকে বঞ্চিত হন চাষিরা। এজন্য গম চাষে চাষিদের মাঝে অনিহা দেখা দেয়। তবে এবারে কম সেচের গমের আবাদ বেড়েছে। আবাদ ভাল হয়েছে। প্রায় ক্ষেতেই শীষ বেরুতে শুরু করেছে।
পবা উপজেলার হরিয়ান এলাকার গমচাষি আশরাফ বলেন, আলু ও ধানের চেয়ে গমচাষে সেচ কম লাগে। গম সংরক্ষণেও সুবিধা আছে। তাছাড়াও এই এলাকায় গভীর নলকুপ না থাকায় আমরা গমের আবাদই করে থাকি। একই উপজেলার আফি নেপালপাড়ার গমচাষি মোসলেম উদ্দিন বলেন, এবার তিনি দেড় বিঘা জমিতে গমের আবাদ করেছেন। তার এলাকায় এবার গমের আবাদ কম হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এছাড়াও ২০১৫ সালে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও ঝিনাইদহ জেলায় প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে হুইট ব্লাস্টের আক্রমন হয়। এই ব্লাস্ট ছত্রাকের আক্রমন প্রতিরোধে ওই জেলা গুলোতে গমচাষ নিরুৎসাহিত করে সরকার। এর অংশ হিসেবে এসব জেলায় গমবীজ বিক্রি বন্ধ রাখে বিএডিসি। আবাদ করে ক্ষতিগ্রস্থ হবার আশংকায় ওই এলাকায় এবারও অনেকেই গমের আবাদ করেনি। এই অঞ্চলে গমচাষ কমার এটিও একটি কারন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য এরইমধ্যে গম গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী একাধীক জাত উদ্ভাবন করে সারাদেশে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করেছে। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত গমচাষের অনুকুলে থাকায় চাষিরা এবার উৎপাদন ভালো হবার আশা করছেন।
এদিকে গমের শীষ পরিপক্ক হলে সাধারনত ব্লাস্টের আক্রমন দেখা দেয়। তাই কৃষি বিভাগের পরামর্শে এই অঞ্চলের গম চাষিরা তাদের গমের জমিতে ব্লাস্ট প্রতিরোধে নাটিভোসহ টেবুকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুল হক জানান, এবারে আবাদ গতবারের চেয়ে বেশী হয়েছে। তবে আবাদ ভাল হওয়ায় উৎপাদন আশানুরুপ হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চাষিরা লাভবান হবেন।
এবারে রাজশাহী জেলায় ২৬ হাজার ৫৬১ হেক্টর। যার মধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলায় সবচেয়ে বেশী হয়েছে। এই উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে। এরপরে বাঘা উপজেলা আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৬৬০ হেক্টর এবং চারঘাট উপজেলায় ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও পবা উপজেলায় ২ হাজার ২৫০ হেক্টর, বাগমারা ১ হাজার ৫৪০ হেক্টরসহ অন্যান্য উপজেলায় হয়েছে ৫ হাজার ২৭১ হেক্টর জমিতে।