করোনা ভাইরাসে উত্তাল বিশ্ব অর্থনীতি
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : চীনের মরণঘাতী করোনাভাইরাস আতঙ্কের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। বিশ্ববাজারে এরই মধ্যে পড়ে গেছে জ্বালানি তেলের দাম, নিম্নমুখী প্রধান প্রধান সব শেয়ারবাজারও। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম সোমবার ২ দশমিক ৩ শতাংশ কমে তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে ঠেকেছে। এদিন ব্রেন্ট ব্র্যান্ডের তেল ব্যারেলপ্রতি ৫৯ ডলার ৩২ সেন্টে বিক্রি হয়েছে। যা গত বছরের ২১ অক্টোবরের পর সর্বনিম্ন। মঙ্গলবারও লেনদেনের শুরুতে পতনের ধারা অব্যাহত ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে সোমবার প্রধান তিনটি সূচকেই দরপতন হয়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে লন্ডনের এফটিএসই সূচকের পতন গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ২ দশমিক ৩ শতাংশ। এক্ষেত্রে চীনে যেসব প্রতিষ্ঠানের বিক্রি বেশি, তারাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চীনা নববর্ষের সময় লাখ লাখ মানুষ ভ্রমণে বের হন, স্বাভাবিকভাবেই পর্যটন ও কেনাবেচার সূচকে বড় উন্নতি ঘটে। এ বছর বাণিজ্যিকভাবে এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়েই করোনাভাইরাস আঘাত হেনেছে। ফলে ধস নেমেছে দেশটির পর্যটন শিল্পে। মুডি’স অ্যানালিটিক্সের বিশ্লেষক রায়ান সুইট বলেন, ভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক বাজার অবস্থা, আত্মবিশ্বাস, ভোক্তাব্যয় ও রফতানির মাধ্যমে এশিয়ার অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি হবে; তা ছড়িয়ে পড়বে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও।
ইউরোপের শেয়ারবাজারে সোমবার বড় ধরনের অবনমন ঘটেছে। এদিন জার্মানির ডিএএক্স ও ফ্রান্সের সিএসি ৪০ উভয় সূচকই পড়ে গেছে ২ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি। চীনে বহুল জনপ্রিয় এলভিএমএইচ, কেরিং, ল’রিয়্যাল ও হার্মেসের মতো বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলোর শেয়ারের দাম গত মাসে রেকর্ড পরিমাণ বাড়লেও ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের ধাক্কা এসেছে তাদের ওপরও। পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বারবেরির ১৬ শতাংশ পণ্য বিক্রি হয় চীনে। সোমবার লন্ডনে তাদের শেয়ারের দাম কমে গেছে ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। চীনের ম্যাকাও শহরে ক্যাসিনো ব্যবসা আছে উইন রিসোর্টসের। দরপতনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের শেয়ারের দরপতন হয়েছে প্রায় আট শতাংশ। একই ব্যবসা করা লাস ভেগাস স্যান্ডসের দরপতন হয়েছে প্রায় ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর সাংহাই ও হংকংয়ের পার্ক বন্ধ করে দিয়েছে ডিজনি। তাদের দরপতন হয়েছে তিন শতাংশেরও বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভ্রমণ কোম্পানিগুলোও। তবে এর মধ্যেই উল্টোপথে হাঁটছে জীবাণুনাশক উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ক্লোরক্স। সবার শেয়ারে দরপতনের দিন এক শতাংশ দাম বেড়েছে এ প্রতিষ্ঠানটির। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চীনের নববর্ষ উপলক্ষে বিনোদন ও উপহার সামগ্রী কেনাবেচায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষেই সবচেয়ে বেশি ছড়াচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও আতঙ্কের কারণে বেশির ভাগ মানুষই ঘর ছেড়ে বের হচ্ছেন না। অনেক শহরে গাড়ি চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। ফলে অর্থনীতিতে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় চার হাজার কোটি মার্কিন ডলার। লন্ডনভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের জেনিফার ম্যাককেওন জানান, ২০০৩ সালে সার্সের কারণে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি নেমে গিয়েছিল পুরো এক শতাংশ।
অর্থনীতিতে এটা অনেক বড় ধাক্কা হলেও অল্প সময়ের মধ্যেই সেই ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব হয়। তিনি বলেন, সে সময় যেসব বিষয় বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করেছিল তাদের চিত্রটি বেশ জটিল। তার মতে, সার্স অনেক ভয়ংকর এবং বিস্তৃত ভাইরাস হলেও বৈশ্বিক জিডিপিতে (অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ) এর স্থায়ী ক্ষতি বাছাই করা বেশ কঠিন।
চীনে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১০৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। দ্রুতগতিতে ছড়াচ্ছে এটি। এর মধ্যে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে এশিয়া-ইউরোপ-আমেরিকার কমপক্ষে ১৭টি দেশে। চীনের বাইরে অস্ট্রেলিয়া, কম্বোডিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, নেপাল, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলংকা, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফ্রান্স, কানাডা, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত করা গেছে।