এখনো দ্বিধায় রাজশাহী জেলার একাংশের নেতাকর্মীরা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২০; সময়: ১:৫২ অপরাহ্ণ |

নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ৮ ডিসেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগে আসে নতুন নেতৃত্ব। নতুন কমিটি গঠনের পর প্রথমেই কার্যালয় পরিবর্তন করা হয়। নগরীর লক্ষীপুরে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের আগের কার্যালয়টি বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্ব পাওয়া নেতারা নগরের অলোকার মোড়ে অস্থায়ী কার্যালয় গড়ে তোলেন। সেখানে নতুন নেতৃবৃন্দের অনুসারীরা ভিড় করতে শুরু করেছেন।

আর আগের কার্যালয়টিতে এখন শুধু সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ এবং তাঁর অনুসারী নেতাকর্মীরা বসছেন। তবে একসময় যে কার্যালয়টি ছিলো নেতাকর্মীদের পদচারণায় সরগরম, এখন সেখানে অনেকটায় নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে নেতাকর্মীদের সঙ্কটের কারণে।

জেলা সম্মেলনের পর প্রথম প্রতিনিধি সভার আয়োজন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে শিল্পকলা একাডেমিতে এই প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলার নতুন নেতৃবৃন্দের পরিচিতির জন্য এই প্রতিনিধি সভার আয়োজন করা হয়েছে। তবে সেখানে দলের ভিতরে বিরোধ কমানো ও মুজিববর্ষে পালনের দিকনির্দেশনা থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলার নেতারা।

সম্মেলনের আগে সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ এই দুইভাবে বিভক্ত ছিল রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এই দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব গত কয়েক বছর ধরে এতোটাই প্রকাশ্যে আসে যে শেষের দিকে ফারুক-আসাদ একে অপরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নানা মন্তব্য করতে শুরু করেন। পাশাপাশি দুই গ্রুপের পক্ষ থেকেই কেন্দ্রে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ পড়তে থাকে। এমন দ্বন্দ্বের জের ধরে শেষ পর্যন্ত তড়িঘড়ি করে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন দিতে বাধ্য হয় কেন্দ্র।

গত ৮ ডিসেম্বর অনুষ্টিত হওয়া সেই সম্মেলনে শেষ পর্যন্ত দু’জনকেই বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়া হয়। এতে সভাপতি করা হয় সাবেক এমপি মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় সাবেক এমপি কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে। আর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক করা হয় বর্তমান রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন ও বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলুকে।

এদিকে, নতুন কমিটি গঠনের পরও এখনো দ্বিধায় রয়েছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। পদ না পাওয়া আর পদ পাওয়াদের কাতারে কারা ভিড়বেন এ নিয়ে এখনো চলছে রশি টানাটানি। বিশেষ করে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ অনুসারিদের নিয়ে এখনো বেশ লবিং-গ্রুপিং চলছে। তাদেরকে কাছে টানতে চেষ্টা চালাচ্ছেন নতুন নেতৃবৃন্দ। তবে পদ বঞ্চিত হওয়ার ক্ষোভে ফুঁসছেন অনেকেই। এ কারণে তাঁরা এখনো ভেবে উঠতে পারছে না কোনা দিকে মোড় নিবেন। আর এই বিরোধ সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে জেলার পুঠিয়া, দুগাপুর, তানোর, গোদাগাড়ী, পবা ও মোহনপুর উপজেলায়।

জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রমতে, রাজশাহী-৫ আসনের এমপি মুনসুর রহমান ছাড়া আওয়ামী লীগের অন্য চার এমপিই রয়েছেন নতুন কমিটির সঙ্গে। যদিও সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা সম্মেলনের আগ পর্যন্ত আসাদের সঙ্গে থাকলেও তিনি হঠাৎ করে সভাপতি হওয়ায় আসাদ সমর্থকরা তাঁকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবেই দেখছেন। আসাদকে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে সরাতে পেরে অনেকটাই ফুরফুরে অবস্থানে আছেন সাবেক সভাপতি রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধূরী। তানোর-গোদাগাড়ী থেকে ফারুক চৌধূরী বিরোধী যেসব নেতারা আসাদের গ্রুপে ভিড়েছিলেন আসাদ পদ না পাওয়ায় তাঁরা এখন অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন বলে মনে করছেন ফারুক চৌধূরীর সর্মথকরা।

অন্যদিকে, সাবেক এমপি মেরাজ মোল্লার সঙ্গে একই আসনের বর্তমান এমপি আয়েনেরও দূরুত্ব ছিলো বেশ। এ কারণে মেরাজ মোল্লা বাধ্য হয়ে গত কয়েক বছর ধরে আসাদ গ্রুপে যোগ দিলেও এখন পদ পেয়ে নিজেই নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এমপি আয়েন জেলা যুগ্ম-সম্পাদক হওয়ায় তাঁর কর্মী-সমর্থকরাও রয়েছেন কিছুটা চাঙ্গা। যদিও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে এমপি আয়েন ছিলেন শক্ত প্রার্থী। কিন্তু তিনি ওই পদটি না পাওয়ায় এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বি মেরাজ মোল্লা সভাপতি হওয়ায় অনেকটায় মনোক্ষুন্ন হন এমপি আয়েন উদ্দিন। কমিটি গঠনের দিন থেকে বেশ কয়েকদিন আয়েনের কর্মী-সমর্থকরা ফেসবুকে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নানা মন্তব্যও করেন।

অপরদিকে, রাজশাহী-৪ আসনের এমপি এনামুল হকের সঙ্গে আসাদের ভালো সম্পর্ক থাকার বিষয়টি জেলার সব নেতাকর্মীদের মুখে-মুখেই ছিলো। কিন্তু আসাদ শেষ পর্যন্ত গত কাউন্সিলে কোনো পদ না পাওয়ায় এমপি এনামুল বিরোধীরা এখন অনেকটা চাঙ্গা। তাঁরা নতুন নেতাদের কাছে ছুটছেন বেশ জোরেসরে। তবে এমপি এনামুল গ্রুপের নেতাকর্মীরা কোনদিকে মোড় নিবেন সেটি রয়েছে সংশয়।

এদিকে, রাজশাহী-৫ আসনের বর্তমান এমপি মুনসুর রহমানের সঙ্গে আসাদের রয়েছে বেশ সখ্যতা। আবার মুনসুরের প্রতিদ্বন্দ্বি একই আসনের সাবেক এমপি কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারার সঙ্গে রয়েছে বিরোধ। ফলে গত কাউন্সিলের পর দুপক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে পুঠিয়া ও দুর্গাপুরে কয়েকটি সংঘর্ষ পাল্টা সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। জেলার সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়ে অনেকটা চাঙ্গা হয়েছে সাবেক এমপি দারার কর্মী-সমর্থকরা। তারা এখন পুঠিয়া-দুর্গাপুরের বিভিন্ন পদে আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

অন্যদিকে, পদ ঠেকাতে ও নেতাকর্মীদের কাছে টানতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এমপি মুনসুরও। এ নিয়ে দুটি উপজেলার নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন চরম বিরোধ দেখা দিয়েছে। দারাকে ঠেকাতে মুনসুর এখনো পদ না পাওয়া আসাদের সঙ্গেই সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। কিন্তু মুনসুরের কর্মী-সমর্থকরা এ নিয়ে রয়েছে দ্বিধায়।

রাজশাহী জেলার নয়টি উপজেলা, ৭২টি ইউনিয়ন ও ১৪টি পৌরসভার কোনোটিরই সম্মেলন এখনো হয়নি। এসব কমিটির সম্মেলনের আগেই জেলার সম্মেলন হয়ে যাওয়ায় মূলত আসাদ অনুসারি কর্মী-সমর্থকরা রয়েছেন অনেকটা ব্যাকফুটে। তাঁরা নতুন কমিটির নেতাদের কাছে না ভিড়লে আগামীতে পদ হারাবেন বা বঞ্চিত হবেন এমন আশঙ্কায় রয়েছেন। আবার অনেকেই শত আশঙ্কার মধ্যেও ফারুক চৌধূরী ও দারাকে ঠেকাতে এখনো আসাদের সঙ্গেই যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।

তবে দলের মধ্যে যেটুকুর বিরোধ আছে, তা নিরসন করে আগামীতে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে চলার চেষ্টা থাকবে বলে দাবি করেছেন জেলার সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এখানে পদ পেতে লড়াই থাকবেই। তাই বলে কাউকে রেখে কাউকে নিয়ে চলাটা আমাদের ঠিক হবে না। আমরা সবাইকে নিয়ে চলতে চাই।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে