সম্মেলন ঘিরে জটিল সমীকরণ রাজশাহী নগর রাজনীতিতে

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২০; সময়: ৫:০৯ অপরাহ্ণ |
সম্মেলন ঘিরে জটিল সমীকরণ রাজশাহী নগর রাজনীতিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘ ৫ বছর পর রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ সম্মেলন ঘিরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি। কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পদপ্রত্যাশীরা নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাংগঠনিক যোগাযোগ যেমন বাড়িয়েছেন, তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন সক্রিয়। পদপ্রত্যাশীদের পোস্টার-ব্যানারে নগরে সড়কের মোড়গুলো রঙিন হয়ে উঠেছে। প্রচার চালানো হচ্ছে ফেসবুকেও।

কাউন্সিল ঘিরে নেতায় নেতায় রাজশাহীতে নানা মেরুকরণও শুরু হয়েছে। কার সঙ্গে কে থাকবেন, কে প্রার্থী হলে কারা সমর্থন দেবেন-হিসাব-নিকাশ চলছে। তবে শীর্ষ দুই পদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়েই সমীকরণটা জটিল। বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে ছোটাছুটি করছেন ডজন খানেক নেতা।

বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার পদটি ধরে রাখতে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন। তার সমর্থকরা ফেসবুকে ‘ডাবলু সরকার সমর্থকগোষ্ঠী’ নামে পেজ খুলে প্রচার শুরু করেছেন। এ ছাড়াও শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে যুগ্ম সম্পাদক নাইমুল হুদা রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম বেন্টু ও মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী শীর্ষ এই পদ পেতে ব্যাপক তৎপর রয়েছেন। তাদের পক্ষেও চলছে ব্যাপক প্রচার।

এদের বাইরে সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে সরব রয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, নওশের আলী, আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম সরকার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান বাবু, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিক, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ শরিফুল ইসলাম বাবু ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জোবায়ের আহমেদ রুবন। তারা লিটন ও কেন্দ্রের সমর্থন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন।

নগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী বলেন, ‘‘দলের প্রতি যারা নিবেদিত; যারা দীর্ঘদিন যাবৎ দল করে আসছেন; দুঃসময়ে যারা আন্দোলন সংগ্রামে দলের সঙ্গে ছিলেন তাদেরকে আমরা সবাই চিনি, তাদের সম্পর্কে জানি। তাদের মধ্য থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে যোগ্য নেতার তালিকায় আমার নামও থাকবে বলে আশা করি। সেখান থেকেই এবার সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছি বলে জানান এই যুবলীগ নেতা।’’

কেমন নেতৃত্ব চান- জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী আহসানুল হক পিন্টু বলেন, রাজশাহীর তৃণমূল নেতাকর্মীরা চান টেন্ডারবাজ, দখলবাজ ও সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক যাতে কেউ মহানগরে নেতৃত্বে আসতে না পারেন। হাইব্রিড কেউ যেন পদ বাগিয়ে নিতে না পারে, এ ব্যাপারেও কেন্দ্রের সজাগ থাকা জরুরি।

সম্মেলন সফল করতে সকালকে একসঙ্গে কাজ করার আহবান জানিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম বেন্টু বলেন, ‘‘সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ একই সংগঠনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দুইটি পদে যদি বিতর্কিত মুক্ত সঠিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করা যায় তবে সংগঠন আরও শক্তিশালী হবে এবং সাধারণ মানুষের কাছে আওয়ামী লীগের আস্তা আরও বাড়বে।’’

তিনি বলেন, ‘‘একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে বজায় রেখে রাজশাহী করে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং তাদের নূন্যতম চাওয়া পাওয়া ও দুঃখ্য-কষ্ট সমাধান করার চেষ্টা করি আমার জায়গা থেকে। এছাড়াও যেহেতু তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে উঠে এসেছি। তাই তৃণমূলের সমস্যা ও দুঃখ-কষ্ট বুঝি। সেই বিবেচনায় যদি সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হতে পারি তবে মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে দলকে আরও শক্তিশালী করতে পারবো।’’

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাঈমুল হুদা রানা বলেন, ‘‘অনেক প্রতিকুল অবস্থার মধ্যে দল ছেড়ে চলে যায়নি বা নিস্কৃয় হয়ে পড়িনি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেছে এবং দলের জন্য এখনো সরব রয়েছে। এ ধরণের নেতাদের নেতৃত্বে দেখতে চায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।’’

সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘‘আমি যদি রাজশাহী নগরের বঙ্গবন্ধুর কথা বলার লোক তৈরী করে থাকি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের লোক তৈরী করে থাকি; জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য আমি যদি কাজ করে থাকি তবে নেতাকর্মীরা আমাকে মূল্যায়ন করবে। আর আমি যদি খারাপ কিছু করে থাকি তবে নেতাকর্মীরা আমাকে তিরস্কারও করতে পারে। ফলে নেতাকর্মীরা চাইলে আমি স্বপদে বহাল থাকবো, না চাইলে থাকবো না। গত পাঁচ বছর আমি দলের জন্য ভাল করেছি কিনা তা নেতাকর্মীরাই ভাল জানে।’’

এদিকে, সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিকল্প দেখছে না নেতাকর্মীরা। তবে এই পদ পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন আরও দুই নেতা। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এ আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। তার সমর্থক নেতাকর্মীরাও ফেসবুকে সমর্থন চাইছেন। এছাড়াও মহানগর কমিটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুর রহমান সভাপতি হওয়ার জন্য কেন্দ্রে জোর তদবির করছেন।

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ১ মার্চ যে সম্মেলন হবে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচির সূচনা হবে এ মাসে। সম্মেলনকে সামনে রেখে নগরীকে সাজানো হবে। আশা করি, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্মেলন হবে, নেতাকর্মীরা পছন্দের প্রার্থীকে মনোনীত করবেন।

মহানগর কমিটির নেতা নির্বাচন কাউন্সিলরদের মতামতে নাকি কেন্দ্রের মনোনয়নে হবে- জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল বলেন, ‘‘যেভাবেই নেতা নির্বাচন হোক, কেন্দ্র চায় বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারী, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ও ভূমি দখলকারীরা কেউ পদ পাবেন না। জননেত্রী শেখ হাসিনা চান ত্যাগী ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতারা সারা দেশে সংগঠনের নেতৃত্বে আসবেন। রাজশাহী মহানগরেও তাই হবে।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় ২০১৪ সালের ২৫ অক্টোবর। ওই কাউন্সিলে খায়রুজ্জামান লিটন সভাপতি ও ডাবলু সরকার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের পাঁচটি সাংগঠনিক থানা ও ৩৭টি ওয়ার্ড কমিটি রয়েছে। ওয়ার্ড ও থানা কমিটিগুলো নতুনভাবে না হওয়ায় ২০১৪ সালের করা ৩৯৫ জন কাউন্সিলর দিয়েই এবারে মহানগর কমিটির সম্মেলন হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে