বিটিআরসিকে ১০০০ কোটি টাকা দিয়েছে গ্রামীণফোন
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) অডিট আপত্তির বিপরীতে আদালতের আদেশ মেনে ১০০০ কোটি টাকা দিয়েছে গ্রামীণফোন। গ্রামীণফোনের রিভিউ আবেদনে আপিল বিভাগের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এ টাকা প্রদান করে অপারেটরটি।
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ বিটিআরসিতে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এক হাজার কোটি টাকার পে অর্ডার বিটিআরসি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক বলেন, আজকের দিনটা সরকার ও গ্রামীণফোনের জন্য শুভ দিন। টাকার জন্য গ্রামীণফোন বিভিন্ন স্থানে গিয়েছে, দেন-দরবার করেছে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় টাকা আমরা কিছু করতে পারিনি। এটা আদালতের আদেশ ছিল, সুপ্রিম কোর্ট সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মানা আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য। আজকে টাকা পাওয়া গেলো এতে সংবিধান রক্ষা হলো, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ রক্ষা হলো। টাকাটা দিয়ে দেওয়ায় গ্রামীণফোনকে ধন্যবাদ।
গ্রামীণফোনের ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু স্থগিতাদেশ আছে। আদালতের আদেশ আছে, এ বিষয়ে আদালত নির্দেশ দিবেন। যেসব স্থগিতাদেশ আছে সেগুলোর বিষয়ে আদালত যে আদেশ দিবেন সেভাবে ব্যবস্থা নিবো।
গত শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অপারেটরটির পক্ষে বলা হয়, গ্রামীণফোন বাংলাদেশের আইনি পদ্ধতিকে সম্মান করে। তবে বিটিআরসি গ্রামীণফোনের ওপর যে চাপ প্রয়োগ করেছে, সে বিষয়ে আদালতের সুরক্ষা প্রত্যাশা করছে তারা।
এর আগে কোর্টের রায়ের পর বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, টাকা না দিয়ে গ্রামীণফোনের যাওয়ার আর কোনো জায়গা আছে বলে আমি মনে করি না। সে কারণে আমার যতখানি মনে হয় এবার তারা টাকাটা দিয়ে দেবে।’
আর টাকা না দিলে আইনানুসারে সোমবারের পর তারা গ্রামীণফোনে প্রশাসক নিয়োগের আয়োজন শুরু করবেন বলেও জানান।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রামীণফোন যেহেতু অনেক শক্ত আর্থিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে সে কারণে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট তাদেরকে এক হাজার কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিলেও পুঁজিবাজারে তাদের শেয়ারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব তো পড়েইনি বরং তাদের শেয়ারের মূল্য দুই দশমিক ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বুধবার যেখানে গ্রামীণফোনের শেয়ার ২৮৪ টাকায় বিক্রি হয়েছিল সেখানে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের খবর বেরোনোর পরে সেটি ৩০৮ টাকায় উঠে আসে। পরে অবশ্য দিনের শেষে এসে সেটি আবার ২৯২ দশমিক ২০ টাকায় নেমে আসে।
এর আগে বিটিআরসির করা অডিটে গ্রামীণফোনের কাছে তারা মোট ১২ হাজার ৫৮৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা হিসেবে দাবি করে। এর মধ্যে বিটিআরসির অংশ ৮ হাজার ৪৯৪ কোটি আর এনবিআরের অংশ ৪ হাজার ৮৬ কোটি টাকা।
বিটিআরসির পাওনা দাবিকৃত ৮ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকার মধ্যে মূল টাকা হলো ২ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। বাকি ৬ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা-ই বিলম্ব ফি, যেটি মূল টাকার ওপর চক্রবৃদ্ধি হারে হিসেব করা হয়েছে।
বিষয়টি আদালতে গড়ালে গত ২৪ নভেম্বর আপিল বিভাগ তিন মাসের মধ্যে (২৪ ফেব্রুয়ারি) গ্রামীণফোনকে দুই হাজার কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল।
তবে সেই নির্দেশনার বিরুদ্ধে ২৬ জানুয়ারি রিভিউ পিটিশন দাখিল করে গ্রামীণফোন। সেখানে বিটিআরসি’র দাবিকৃত মূল টাকার ২৫ শতাংশ হিসেবে ৫৭৫ কোটি টাকা জমা দেয়ার আবেদন করে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রিভিউ পিটিশনের ১৮২ নম্বরে থাকার পরেও প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদুল হোসনসহ আপিল বিভাগের সাতজন বিজ্ঞ বিচারপতি গ্রামীণফোনের আবেদন শোনেন এবং মধ্যে এক হাজার কোটি টাকা দিয়ে তারপর আবার সোমবার আদালতে যাওয়ার জন্যে বলেছেন তারা।