ধনিয়ার সুগন্ধিতে মুগ্ধ বরেন্দ্রের কৃষক
আসাদুজ্জামান মিঠু : বরেন্দ্র অঞ্চলে আসলে দেখা মিলবে উচু নিচু পটভুমি। মেঠো পথ বয়ে যেতেই দেখা যাবে পুরো মাঠ নানার রকম রবি শস্য ভরপুর। এর মধ্যে কোথাও কোথাও ধনিয়ার সাদা ফুল ও সুগন্ধিতে ভরে উঠেছে মাঠ। এমন সব ফুলের সুগন্ধিতে পথচারি ও কৃষকদের মুগ্ধ করছেন প্রকৃতি।
বরেন্দ্র অঞ্চলে অন্যসব রবিশস্যর পাশা পাশি চলতি মৌসুমে ধনিয়া চাষ হয়েছে অন্য যে কোন বছরের চেয়ে অনেক বেশি। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় এবার ধনিয়ার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা।
কৃষি কর্মকর্তা বলছেন,ধনিয়া চাষে খরচ কম ও রোগ-বালাই নাই বললেই চলে। এছাড়াও অন্যসব রবিশস্যর চেয়ে ধনিয়াতে লাভের পাল্লা বেশি। তাই রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা ধনিয়া চাষে ঝুঁকছে। প্রতি বছরেই এমন কৃষকের সংখ্যা বাড়ছে।
রাজশাহী জেলার চারঘাট,বাঘা ও মোহনপুর উপজেলায় বেলে রস জাতীয় মাটিতে এ ধনিয়া চাষ মুলত হতো। কিন্ত গত দুই বছর ধরে বর্তমানে বরেন্দ্র অঞ্চলে কড়া মাটিতেও এ জাতীয় ফসল হচ্ছে। যার ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা অন্য ফসলের পাশাপাশি ধনিয়া(মসলা) চাষ করে অধিক লাভবান হবে বলে আশা কৃষিবিদদের।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে,গত দুই বছর ব্যবধানে জেলায় তিনগুণ ধনিয়া চাষ বেড়েছে। গত দুই বছর আগে জেলায় যেখানে ১০০ হেক্টরের মত ধনিয়া চাষ হতো। গত বছর থেকে হঠাৎ বেড়ে চাষাবাদ ২১৯ হেক্টর জমিতে। এবার চলতি মৌসুমে আরো ৩০ হেক্টর বেড়ে চাষ হচ্ছে ২৫০ হেক্টর জমিতে। আশ্বিন-কার্তিক মাসে বপন পদ্ধতিতে ধনিয়ার আবাদ শুরু হয়। আর ফলন পাওয়া যায় ফাল্গুন আর চৈত্রে।
বরেন্দ্র অঞ্চল হিসাবে পরিচিত রাজশাহীর তানোর-গোদাগাড়ী উপজেলার। এর মধ্যে শুধু মাত্র তানোর উপজেলাতে চলতি রবি মৌসুমে প্রথম বারের মত প্রায় শতাধিকের বেশি কৃষক ধনিয়া চাষ করেছেন। এর মধ্যে মুণ্ডুমালা গ্রামের জলিল নামের এক কৃষক এবার দুই বিঘা জমিতে ধনিরয়া চাষ করেছেন।
কথা হয় কৃষক জলিলের সাথে,তিনি বলেন,স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী চলতি মৌসুমে দুই বিঘা ধনিয়া চাষ করা হয়েছে। ক্ষেতে ধনিয়া গাছে এখন সাদা ফুল রয়েছে,বাম্পার ফলনের হবে বলে আশা তার।
তিনি আরো বলেন, কীটনাশক ও পানি খরচ একেবারে কম। ধনিয়া বাজারে চড়া দাম রয়েছে। তাই অন্য যে কোন বরি শস্যর চেয়ে ধনিয়াতে বেশি লাভ হবে বলে আশা করছি।
তানোর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শমসের আলী বলেন, ধনিয়া উচ্চমূল্যের লাভজনক ফসল। তাই বরেন্দ্র অঞ্চলে ধনিয়া চাষে কৃষকদের প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। এতে করে চাষিরা আধুনিক চাষ পদ্ধতির মাধ্যমে ফলন বেশি করে আর্থিকভাবেও লাভবান হবেন।
তিনি আরো বলেন, অনুকূল আবহাওয়ায় এ বছর রোগবালাই কম তাই এ ফসলের ভালো ফলন পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। বাজারে চাহিদা থাকায় ছোট অবস্থায় পাতা বিক্রি করেও আয় করেন কৃষকরা। ফসল ফলাতে সার-কীটনাশক ও শ্রমিক ব্যয় কম। তাই নামমাত্র খরচে ধনিয়া আবাদ হয়। বিঘা প্রতি উৎপাদন হয় ৩ থেকে ৪ মণ পর্যন্ত।’