করোনাভাইরাসে বিশ্ব অর্থনীতিতে ধস

প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২০; সময়: ৬:৫৮ অপরাহ্ণ |
করোনাভাইরাসে বিশ্ব অর্থনীতিতে ধস

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। কভিড-১৯ নামে পরিচিত এ ভাইরাসের সংকটকে ঘিরে এরইমধ্যে অস্থিরতা দেখা গেছে বিশ্বের পুঁজিবাজার ও তেলের বাজারে। এ অস্থিরতাকে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ‘অশনি সংকেত’ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি অঞ্চলের পুঁজিবাজারে বিরাট ধস দেখা গেছে। অন্যদিকে তেলের উৎপাদন আরো বেড়ে যাওয়ায় সৌদির একতরফা সিদ্ধান্তের ফলে তেলের দাম প্রায় বিশ শতাংশ পড়ে গেছে। সোমবার দিনভর বিশ্ব পুঁজিবাজারের এ অবস্থার পর দিনটিকে ‘ব্ল্যাক মানডে’ বলে বর্ণনা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিটের পুঁজিবাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে প্রায় সাত শতাংশ দাম পড়ে যায়। এই বিরাট ধসের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সেখানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়।

এর আগে এশিয়া এবং ইউরোপের শেয়ার একই পরিস্থিতি দেখা গেছে। পুঁজিবাজারে যা কিছু ঘটছে সেগুলোকে অনেকেই ‘রক্তগঙ্গা’ বয়ে যাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। এর আগে ২০০৯ সালে বিশ্ব জুড়ে যে আর্থিক সংকট দেখা দেয় সেটির পর এরকম বিপর্যয় পুঁজিবাজারে আর দেখা যায়নি।

অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকার সব বড় বড় স্টক এক্সচেঞ্জে সারাদিন ধরে একের পর এক ধস নেমেছে। সোমবার লন্ডনের পুঁজিবাজারে ফুটসি ওয়ান হান্ড্রেড সূচক কমে ৮ দশমিক চার শতাংশে চলে যায়। এই সূচকের ইতিহাসে এটি চতুর্থ সর্বোচ্চ পতন। এর আগে ১৯৮৭ সালে দুইবার এবং ২০০৮ সালে একবার এত বড় ধরণের দরপতনের ঘটনা ঘটেছে। ইউরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে যখন লেনদেন শুরু হয় সেখানেও একই চিত্র দেখা যায়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বড় সূচকে নেমেছে বিরাট ধস।

পুঁজিবাজারের মত একই রকম অস্থিরতা দেখা গেছে তেলের বাজারেও। সোমবার একদিনেই তেলের দাম প্রায় ত্রিশ শতাংশ কমে ৩১ ডলারে নেমে যায়। ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের পর একদিনের মধ্যে তেলের দাম এতটা কখনো কমেনি। তবে এরপরে তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে।

বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের অর্থনৈতিক সংবাদদাতা অ্যান্ড্রু ওয়াকার বলেছেন, এই অস্থিরতার মূলে রয়েছে করোনাভাইরাস। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, সেটির বিরূপ প্রভাব পড়ছে অর্থনীতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে। এছাড়া তেলের চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। ফলে তেল রফতানিকারক দেশগুলো তেলের দাম স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। পেট্রোলিয়াম রফতানিকারী দেশগুলোর সংস্থা ওপেক তেলের উৎপাদন কমিয়ে দাম ঠিক রাখতে চেয়েছিল। তবে রাশিয়া ও যারা ওপেকের সদস্য নয় তারা এ কাজে রাজি হয়নি।

এদিকে হঠাৎ করে সৌদি আরব ও বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদক দেশগুলো নিজেরাই তেলের উৎপাদন অনেক বাড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের তেল কোম্পানিগুলোকে সমস্যায় ফেলাই ছিল তাদের লক্ষ্য। কারণ যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ায় তেলের উৎপাদন খরচ বেশি ফলে অল্প দামে খুব বেশিদিন তেল বিক্রি করতে পারবে না তারা। এসব কিছুর সম্মিলিত ফল দাঁড়ায় পুঁজিবাজারের অস্থিরতা।

অন্যদিকে তেলের দাম কমলে ভোক্তাদের জন্য সুখবর হবে সেটি। এছাড়া যেসব এয়ারলাইনস এখন যাত্রীর অভাবে সংকটে পড়েছে এই পরিস্থিতিতে তাদের দুর্দশাও কিছুটা লাঘব হবে।

করোনাভাইরাসের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার সূচনা করতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছিলেন। পুঁজিবাজারের এ অস্থিরতাকে সেটিরই আভাস বলে বর্ণনা করছেন তারা। এরইমধ্যে একটি মন্দার আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে অস্ট্রেলিয়ায়।

করোনার মূল উৎপত্তিস্থল চীনের অর্থনীতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটিয়েছে এ ভাইরাসটি। এর পরিণাম কী হতে পারে, কতটা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে দেশটি সেটার হিসেব নিকেশ চলছে এখনো। তবে এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো কোনোভাবেই ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে না।

ইউরোপের দেশগুলোতে মাত্রই করোনাভাইরাসের বিস্তার শুরু হয়েছে। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে সেখানকার অনেক দেশে। চীন যেরকম কঠোরভাবে এই সংকট দমন করেছে ইউরোপ ঠিক একইভাবে পারবে কি না সেটি নিয়ে এখনো সংশয় রয়েছে।

সব মিলিয়ে ২০২০ সাল বিশ্ব অর্থনীতিতে আরেকটি মন্দার সূচনা করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে