পাবনায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন
রাজিউর রহমান রুমী, পাবনা : পাবনায় চলতি মৌসমে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। পেঁয়াজ ভান্ডার খ্যাত এই এলাকায় পেঁয়াজ সংরক্ষণে সরকারী সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার দাবী করেছেন চাষীরা। এবার আবহাওয়া অনূকূল থাকায় ভালো ফলন হয়েছে। ভালো ফলন হওয়ার পরও ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে মহা দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষীরা। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা সংকিত। লাভের গুড় পিঁপরা না খায়।
মার্চের শুরুতেই বাজারে উঠতে শুরু করেছে চারা পেঁয়াজ, কমেছে দাম। চলতি মৌসুমে জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী জমিতে আবাদ ও অনূকুল আবহাওয়ায় ফলন পর্যালোচনা আশাব্যাঞ্জক হওয়ায় কৃষি বিভাগের প্রত্যাশা এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদন সকল অতীত রেকর্ড ছাড়াবে। মার্চের মাঝামাঝি পুরোদমে এই পেঁয়াজ বাজারে এলে পেঁয়াজের সংকট থাকবে না। এমনকি রমজানেও পেঁয়াজের কোন সংকট হবে না। তবে, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে আমদানী বন্ধ ও সংরক্ষণে সরকারী সহযোগীতার দাবী করেছেন পেঁয়াজ চাষীরা।
পাবনা কৃষি বিভাগ জানায়, দেশের মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের এক তৃতীয়াংশ সরবরাহ হয় পাবনা থেকে। চলতি মৌসুমে পাবনার গাজনার বিল, ঘুঘুদহ বিল সহ নয় উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে।
কৃষিবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, পাবনা সদরে ২৩০০ হেক্টর, আটঘরিয়ায় ১৩২০ হেক্টর, ঈশ^রদীতে ১৭৫ হেক্টর, চাটমোহরে ৫৯৫ হেক্টর, ভাঙ্গুড়ায় ৫৯০ হেক্টর, ফরিদপুরে ১৩০০ হেক্টর, বেড়ায় ৩১০০ হেক্টর, সাঁথিয়ায় ১৩৬০০ হেক্টর, সুজানগরে ১৬৭৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। এর বাইরেও বিচ্ছিন্ন ভাবে অনেক এলাকায় নতুন নতুন চাষীরা পেঁয়াজ চাষ করেছেন। প্রতি হেক্টরে ১২ মেট্রিক ট্রন ধরে এসব জমি থেকে জেলায় চারা পেঁয়াজ উৎপাদন ৬ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে।
সরেজমিন পাবনার আতাইকুলা হাট ও সাঁথিয়ার বোয়ালমারী হাটে গিয়ে দেখা যায় নতুন ওঠা প্রতিমণ চারা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২’শ টাকায়। দাম কমার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। খুচরা বাজারে মান ভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৪০ টাকায়।
সুজানগর উপজেলার উলাট গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজ ক্ষেতে আগাছা পরিষ্কার সেচ, সার, কীটনাশকে শেষ মূহুর্তের পরিচর্যায় দম ফেলার ফুসরত নেই চাষীদের। যারা আগাম পেঁয়াজ বুনেছেন তারা ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চাষীরা জানান, মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই উত্তোলন শুরু হয়েছে চারা পেঁয়াজ। তবে, চৈত্র মাসে পুরোদমে ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তোলা হবে।
সুজানগর উপজেলার নরোসিংহ পুর গ্রামের কৃষক শাহিন মোল্লা জানান, গেল মৌসুমে প্রাকৃতিক দূর্যোগে ফলন ভাল ছিলো না। পাশাপাশি বৃষ্টিতে ভেজা পেঁয়াজ পচে যাওয়ায় সংরক্ষণ করতে পারেননি। তবে, এবার বাজারদর ভালো তাই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বাড়তি জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হয়েছে। অনেকেই ধানের স্কিম বাদ দিয়ে লাভের আশায় পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। এখন পর্যন্ত ক্ষেতের যে অবস্থা তাতে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন তিনি।
মানিকহাট ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার আমজাদ হোসেন বলেন, প্রতিবছর যখন পেঁয়াজ ওঠে তখনই, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানীর কারণে দাম কমে যায়। এছাড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় একসাথে কৃষককে উৎপাদিত পেঁয়াজ কমদামে বিক্রি করে দিতে হয়। সরকার আলু, ধানসহ বিভিন্ন ফসল সংরক্ষণে ব্যবস্থা নিয়েছে। এমন ব্যবস্থা পেঁয়াজের জন্য করা হলে, কৃষক ন্যায্য মূল্য পাবে, পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও বাজারে কারসাজি করতে পারবে না।
এদিকে ভারতের পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষীরা। পেঁয়াজ চাষী জিয়া উদ্দিন জানান, প্রতি মণ পেঁয়াজ চাষে খরচ ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় মণপ্রতি উত্তোলন মৌসুমে সে পেঁয়াজ কমদামে বিক্রি করে লোকসান গুণতে হয় তাদের। রমজান সামনে রেখে সরকার পেঁয়াজ আমদানি করলে ক্ষতির মাত্রা আরো বাড়বে। আমদানীকারকদের কোন মতেই যেন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া না হয়।
বড় পরিসরে পেঁয়াজ সংরক্ষণে সরকারী সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার এমন দাবীকে যৌক্তিক মনে করছেন কৃষিবিভাগও। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর,খামারবাড়ী, পাবনার উপপরিচালক আজাহার আলী জানান, চলতি মৌসুমে যে ভালমানের পেঁয়াজ ব্যাপক পরিমাণে উৎপাদন হয়েছে তাতে রমজানেও পেঁয়াজ আমাদানীর প্রয়োজন নেই।
কৃষিবিভাগ পেঁয়াজে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন, প্রশিক্ষণ, সহযোগীতাসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। আগামীতে উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানী নির্ভরতা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা সরকার নিয়েছে। পাশাপাশি যে সব এলাকায় পেঁয়াজ বেশী উৎপাদন হয় সেখানে বড় পরিসরে আধুনিক সংরক্ষণাগার তৈরীতে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।