বদলগাছীতে সেচে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ
সানজাদ রয়েল সাগর, বদলগাছী : নওগাঁর বদলগাছীতে বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) বরাদ্দকৃত গভীর নলকুপ (ডিপ টিউবওয়েল) অপারেটরদের বিরুদ্ধে সেচ কমিটির নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে সেচে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। গভীর নলকুপের অপারেটরদের চাহিদামতো টাকা না পেলে জমিতে পানি মিলছে না কৃষকের। ফলে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। নির্ধারিত মূল্যে জমিতে পানি সরবরাহ করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারীর দাবী করছেন উপজেলার ভুক্তভোগী কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস ও বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর এ উপজেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমি। বিএমডিএ’র অধীনে গভীর নলকুপ রয়েছে ২৯০টি। এছাড়া ব্যক্তি মালিকানধীন নলকুপ (ছোট ডিপ) রয়েছে ২৯টি। প্রতিটি নলকুপের আশেপাশে থাকা জমির কৃষকদের সাথে পরামর্শ করে অপারেটর নিয়োগ দেয়ার নিয়ম থাকলেও মানা হয়নি এই সব নিয়ম। বিএমডিএ অফিস থেকে ইউনিয়ন ভিত্তিক নলকুপে প্রতিবিঘা জমির জন্য পানির সেচ মূল্য নির্ধারন করে দেয়া হয়েছে।
উপজেলার বদলগাছী সদর ইউনিয়নে বিঘাপ্রতি পানির সেচ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৯০ টাকা, বালুভরা ইউনিয়নে ১ হাজার ৯০ টাকা, আধাইপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ৩০ টাকা, মথুরাপুর ইউনিয়নে ১ হাজার টাকা, পাহারপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ৬০ টাকা, মিঠাপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ৫০ টাকা, কোলা ইউনিয়নে ১ হাজার ৪০ টাকা এবং বিলাশবাড়ী ইউনিয়নে ১ হাজার ১০ টাকা।
বিএমডিএ থেকে জমিতে পানি সেচের মূল্য নির্ধারন করে দেয়া হলেও অধিকাংশ গভীর নলকুপ গুলোতে কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ফি চেয়ে ২০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে। কোন কৃষক নির্ধারিত মূল্যে চেয়ে বেশি টাকা দিতে গড়িমসি করলে তার জমিতে মিলছে না পানি। পানির সেচ মূল্য নিয়ে এলাকায় মাইকিং করে জানান দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।
কোলা ইউনিয়নের হুদরাকুড়ির গভীর নলকুপের আওতাভুক্ত জমির মালিক কৃষক মামুন, রিপন, ওবাইদুর ও সালাম বলেন, জমিতে পানি সেচের জন্য মূল্য হিসেবে তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। অপারেটর এক প্রকার জোর করে টাকা আদায় করছেন। নির্ধারিত মূল্যেও চেয়ে বেশি টাকা না দিলে জমিতে পানি দেয়া হবেনা বলেও হুমকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। এছাড়া পানির সেচ মূল্যের বিষয়ে এলাকায় কোনো মাইকিং করা হয়নি।
এবিষয়ে হুদরাকুড়ির গভীর নলকুপের অপারেটর লিখন বলেন, সমিতির মাধ্যমে নলকুপ পরিচালনা করা হয়। অফিস থেকে পানির সেচের যে মূল্য নির্ধারন করা হয়েছে তা দিয়ে চালানো সম্ভব না। যার কারণে বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে।
বালুভরা ইউনিয়নের চাঁদপুর ব্রিজের পাশের গভীর নলকুপের আওতাধীন জমির কৃষকদের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ওই নলকুপের অপারেটর বেলাল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি ১ হাজার ২০০ টাকা করে নিচ্ছি।
এছাড়া বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের কাশিমালার নলকুপের অপারেটর বাবু মেম্বার নিচ্ছেন বিঘাপ্রতি ১ হাজার ৮০০ টাকা। পাহাড়পুর ইউনিয়নে গোয়ালভাটা নলকুপের অপারেটর মেহেদি হাসান দোলন নিচ্ছেন ১ হাজার ৪০০ টাকা এবং বদলগাছী ইউনিয়নের কামার বাড়ি নলকুপের অপারেটর চন্দন নিচ্ছেন ১ হাজার ৪০০ টাকা।
বদলগাছী বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, প্রি-পেইড মিটারের মাধ্যমে ১২৫ টাকা ঘন্টা হিসেবে গভীর নলকুপ থেকে পানি উত্তোলন করা হয়। এক্ষেত্রে এক বিঘা জমিতে সেচ খরচ হয় ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা।
তিনি আরো বলেন, ইউনিয়ন ভিত্তিক যে সেচ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেই মূল্য দিয়ে অনেক এলাকায় পানি সেচ দেওয়া সম্ভব নয়। তাই তারা আগে বিঘা প্রতি যে টাকা নিতেন সেই টাকায় নিচ্ছেন। কিন্তু নির্ধারিত মূল্য থেকে টাকা বেশি নিতে গেলে কারণ উল্লেখ করে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি বরাবর আবেদন করতে হবে। তিনি আরো জানান, প্রতিটি ইউনিয়নের সচিবকে মাইকিং করে পানির সেচ মূল্য ঘোষণা করার জন্য বলা হয়েছে। অনেক জায়গায় মাইকিং করা হয়েছে বলেও শুনেছি।
বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সেচ কমিটির সভাপতি মুহাঃ আবু তাহির বলেন, পানির সেচ মূল্য বেশি নেয়ার অভিযোগ পেয়েছি। এবং বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলীকে সেই সব ডিপ টিওবয়েল অপারেটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।