রাজশাহীতে বাড়ছে গ্রীষ্মকালিন বেগুনের চাষ
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর বিস্তীর্ণ মাঠে ইরি বেগুনের ব্যাপক চাষ লক্ষ্য করা গেছে। গ্রীষ্মকালিন সব্জি হিসেরে এ বেগুন ইতোমধ্যে স্থানীয় চাষিদের কাছে বেশ পরিচিত লাভ করেছে। খুব অল্পদিনে ছোট ছোট গাছে বেগুন ধরায় চাষিরা একে ইরি জাতের বেগুন বলে নামকরণ করেছেন। বাজারদর ভাল ও বাজারে যথেষ্ঠ চাহিদা আছে এই বেগুনের। ফলে প্রতি বছরই গ্রীষ্মের এই বেগুন চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, জেলার প্রতিটি উপজেলাতেই কমবেশী সব্জি চাষ হয়ে থাকে। উপজেলার প্রায় গ্রামের মাঠেই বারমাসই কোন না সব্জি চাষ হয়। তবে শীত মৌসুমে সব্জি চাষ সব থেকে বেশি বৃদ্ধি পায়। এক সময় জেলার বিস্তীর্ণ মাঠে শুধুমাত্র শীত মৌসুমে সবজি চাষ হলেও বর্তমানে তা গ্রীষ্মকালেও ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। গত কয়েক বছরে জেলার অধিকাংশ কৃষক গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষে বেশ মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। গরমের সবজি চাষে পরিশ্রম বেশি খরচও তুলনামূলক বেশি। তারপরও বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় বর্তমানে চাষিরা গ্রীষ্মের সবজির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। গরমকালের সবজির মধ্যে অন্যতম একটি ফসল হচ্ছে বেগুন। স্থানীয়রা গরমের বেগুন বলে চিনলেও অনেকে ইরি বেগুন বলে আখ্যা দিয়েছেন।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে গড়ে ১৪শ’ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালিন বেগুনের চাষ হচ্ছে। স্থানীয়রা একে ইরি বেগুন নাম দিলেও এটি মূলত ভারতীয় ও চায়না বেগুন। ভারতীয় জাত হচ্ছে বিএনবি-৪২১, ৪২২ ও ৪৭৮, চায়না-৩ ও দেশীয় জাত হচ্ছে ভাঙ্গুর ও লাফা জাত।
এ অঞ্চলের কৃষকরা গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত গ্রীষ্মকালিন বেগুনের চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। তাই প্রতি বছরই এলাকাতে বেগুন চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোববার পবা উপজেলা মধুসুদনপুর মাঠে গেলে দেখা যায়, চাষিরা বেগুন ক্ষেত পরিচর্যায় বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে করোনা আক্রান্ত থেকে বাঁচতে শ্রমিকরা সবায় সামাজিক দুরুত্ব বজায় রেখে কাজ করছেন। সেখানে কৃষি শ্রমিকের কাজ করছিলেন হাসান আলী, নাসিম উদ্দিন, মোমিনুল ইসলাম ও আল-আমিন।
এ সময় কথা হয় জমির মালিক ও কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে। তিনি জানান, ইরি বেগুন অনেকে আইরেট বা গরমের বেগুন বলে চেনেন। এই বেগুন চাষ অনেক কষ্টদায়ক। কষ্ট বা খরচ যদিও বেশি তারপরও বাজারে চাহিদা ভাল, দামও ভাল পাওয়া যায় তাই চাষিরা এই বেগুন চাষে বেশি ঝুঁকে পড়েছেন।
তিনি জানান, গত মৌসুমে ১৫ কাঠা জমিতে সব খরচ-খরচা বাদ দিয়ে প্রায় ২০ হাজার টাকা লাভ হয়। তাই এ বছর একই জমিতে এই বেগুন চাষ করেছি। ইতোমধ্যে ফুল ধরতে শুরু করেছে। আবার অনেকের ক্ষেতে বেগুন উঠতেও শুরু করেছে। তিনি করোনা ভাইরাস আতঙ্কে এবারে লোকসানের আশঙ্কা করছেন।
কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বাংলা সনের অগ্রহায়ণের শেষ ও পৌষ মাসের প্রথম দিকে জমি তৈরি করে চারা রোপণ করতে হয়। ১ বিঘা জমিতে ৪শ’ চারা রোপন করতে হয়। ২৪ ইঞ্চি বাই ৩৬ ইঞ্চি দূরত্ব করে বেড তৈরির পর শুরু হয় পরিচর্যার কাজ। অসময়ে চাষ বলে পোকা মাকড়, পাখি সব কিছুরই অত্যাচার বেশি, তাই এ সবের কবল থেকে পরিত্রাণ পেতে জমিতে খরচ তুলনামূলক বেশি হয়। প্রতি বিঘা জমিতে সার, সেচ, কীটনাশকসহ মোট ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়। যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না দেখা দেয় তাহলে ১ বিঘায় ১ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করা যায়। তার মত এই মাঠে অনেকেই এই ইরি বা গ্রীষ্মকালীন বেগুন চাষ করেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুল হক জানান, বেগুন চাষ মূলত শীতকালে হয়। স্থানীয় চাষিরা বিভিন্ন এলাকা থেকে এই বেগুনের চারা সংগ্রহ করে চাষ করছেন। তারা বেশ লাভবানও হচ্ছেন। এই বেগুনের চাষ দিন দিন এ অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জেলার প্রতিটি উপজেলা কৃষি অফিস চাষিদের সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে বলে তিনি জানান।