মহামারিতে প্রাণ হারানো মানুষের আত্মারা ঘুরে বেড়ায় দ্বীপটিতে!

প্রকাশিত: ১২-০৬-২০২০, সময়: ১১:৫২ |

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : পোভেগ্লিয়া একটি অভিশপ্ত এবং রহস্যময় দ্বীপ। প্রকৃতপক্ষে অদ্ভুত কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার জন্য দ্বীপটি রহস্যে ঘেরা। এটি ইতালির ভেনিস এবং লিডোর মধ্যবর্তী লেগুন সেইন্ট মার্ক্স চত্বরে অবস্থিত।

দ্বীপটি ‘পোভেগ্লিয়া ভেনিস’ বা ‘ইজোলা দি পোভেগ্লিয়া’ হিসেবেও পরিচিত। মাত্র ১৭ একর আয়তন বিশিষ্ট দ্বীপ নিয়ে অনেক ভুতুড়ে কাহিনী প্রচলিত আছে। খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর শুরুতে পোভেগ্লিয়া দ্বীপে প্রথম বসতি স্থাপিত হয়েছিল বলে জানা যায়। ধীরে ধীরে সেখানে সমৃদ্ধ জনপদ গড়ে ওঠে। নবম শতাব্দীতে এই অঞ্চল পোদেস্টা শাসকদের অধীনে ছিল।

একাদশ শতাব্দীতে পোভেগ্লিয়া দ্বীপের জনসংখ্যা এবং গুরুত্ব দুটোই বৃদ্ধি পায়। দ্বীপটির দখল নিতে চতুর্দশ শতাব্দীতে ভেনিস এবং জোয়ানার মধ্যে চারটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কামান এবং গোলাবারুদ ব্যবহৃত হয়েছিল এই যুদ্ধসমূহে। লোককাহিনী হিসেবে প্রচলিত আছে, রাতের আঁধারে এখনো সে কামান এবং গোলাবারুদের শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়।

পোভেগ্লিয়ার দখল কেন্দ্রিক ১৩৭৮ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত চতুর্থ যুদ্ধের সময় এই দ্বীপের জনগণ অন্যত্র বসতি স্থাপন করতে থাকে। পুরো দ্বীপ জনশূন্য হয়ে পড়ে। এরপর প্রায় ৩০০ বছর জনশূন্য অবস্থায় থাকে। ১৬৪৫ সালে ভেনিসকে রক্ষার জন্য এই অঞ্চলে জাহাজ নিয়ন্ত্রণের ফাঁড়ি স্থাপিত হয়।

এই দ্বীপ ১৭ শতকের ব্লাক ডেথ মহামারির সময় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল। মহামারিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পোভেগ্লিয়া দ্বীপে পাঠান হত।তারা সেখানে খোলা আকাশের নিচেই তারা মরে থাকত। সেখানেই মৃতদেহগুলোর পচন শুরু হত। পচে যাওয়া দেহগুলোকে পরবর্তীতে পুড়িয়ে ছাই করা হত।

ধারণা করা হয়, পোভেগ্লিয়ায় সে সময় প্লেগে আক্রান্ত হয়ে এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। আজো দ্বীপটিতে ভূ-পৃষ্ঠের নিচে মানুষের হাড়ের স্তর পাওয়া যায় এবং ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের শতকরা ৬০ শতাংশ মানুষের ছাইয়ের আস্তরণ। অনেকেই বিশ্বাস করে, সেসব মৃত মানুষের আত্মা আজো ঘুরে বেড়ায় দ্বীপটিতে।

১৮ ও ১৯ শতকে দ্বীপটিতে কয়েকটি স্থাপনা গড়ে ওঠে। পুনর্গঠনেরও চেষ্টা করা হয়েছিল তবে পূর্বের মতো কখনোই হয়নি। স্থাপনার মধ্যে বর্তমানে সেখানে একটি করে চার্চ, কাভানা, মানসিক আশ্রয়কেন্দ্র, বেল টাওয়ার বা ঘণ্টা মিনার এবং কিছু বাড়ি ও প্রশাসনিক ভবন পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। বেল টাওয়ারটি এখানকার প্রাচীনতম এবং প্রধান দৃশ্যমান স্থাপনা। এটি নির্মিত হয়েছিল দ্বাদশ শতাব্দীতে। প্রথমে এটি একটি চার্চের অংশ ছিল।

১৮০৬ সালে চার্চটি পরিত্যক্ত হয়। এরপর বেল টাওয়ারটি সমুদ্র পথের বাতি ঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে পোভেগ্লিয়া ভুতুড়ে স্থান হিসেবেই বেশি পরিচিত। স্থানীয় লোককাহিনী প্রচলিত আছে, ১৪ শতকের যুদ্ধের কামান এবং গোলাবারুদের আওয়াজ এখনো রাতে শোনা যায়। অনেকের বিশ্বাস, মহামারিতে মৃত্যুবরণ করা হাজারো মানুষের অতৃপ্ত আত্মা এই দ্বীপে ঘুরে বেড়ায়।

ইতালি সরকার ১৯২২ সালে সেখানে একটি মানসিক হাসপাতাল গড়ে তুলেছিল। তবে চিকিৎসক কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীরা এখানে থাকতে চাইতেন না। তারা অদৃশ্য কোনো ভয়ঙ্কর অনুভূতির কারণে আতঙ্কিত থাকত। এই হাসপাতালে থাকা মানসিক রোগীরা সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে আরো বিকারগ্রস্ত হতে থাকে। হাসপাতালের একজন পরিচালক নিজেই বিকারগ্রস্ত হয়ে ছাদ থেকে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করে।

এরপর ১৯৬৮ সালে ইতালি সরকার মানসিক হাসপাতালটি বন্ধ ঘোষণা করে। এর দীর্ঘ দিন পর একজন মার্কিন টেলিভিশন উপস্থাপক নির্জন দ্বীপটির বন্ধ ঘোষিত মানসিক হাসপাতালে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ভুতুড়ে ঘটনা এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি রোমাঞ্চকর টিভি সিরিজ নির্মাণ করেন। পর্যটকদের জন্য দ্বীপটি এখনো উন্মুক্ত নয়। কেউ দ্বীপটিতে যেতে চাইলে ইতালির পর্যটন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়।

উপরে