বাগমারায় বাঁধের মাটি কেটেই বাঁধ রক্ষার চেষ্টা

প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২০; সময়: ৮:৪৭ অপরাহ্ণ |
বাগমারায় বাঁধের মাটি কেটেই বাঁধ রক্ষার চেষ্টা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাগমারা : বাগমারায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত। বাড়িঘর, পুকুরের মাছ ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি স্বাধন হচ্ছে। কোথাও কোথাও বাঁধের করুণ অবস্থা। যেন এই বুঝি বাঁধ ভেঙে আরো কয়েকটি গ্রাম পানিতে তলিয়ে যাবে। এমনই অবস্থার মাঝে কিছু স্থানে বাঁধের উপরের মাটি কেটেই প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে পাশেই বাঁধের পাড়ে ফেলছিলেন বেশকিছু শ্রমিক। যেখানে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়ে আছে, সেখানে বাঁধের মাটি দিয়েই বাঁধ রক্ষার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছিল।

শুক্রবার বিকেল স্বরেজমিনে বাগমারা উপজেলার কাচারী কোয়ালীপাড়া ইউনিয়নের কালিকাপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে গিয়ে এমনই দৃশ্য দেখা গেছে। এসময় শ্রমিকরা নির্দেশনা মত কাজ করলেও পাউবোর কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বা ঠিকাদার কাউকেই সেখানে পাওয়া যায়নি। কেবল কালিকাপুর নয়, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে নরদাশ, দ্বীপপুর, কাচারী কোয়ালীপাড়া, ঝিকড়া, সোনাডাঙ্গা, বড়বিহানলীসহ বেশকিছু এলাকা ঘুরে বন্যায় নতুন নতুন গ্রাম বা এলাকা প্লাবিত হতে দেখা গেছে।

শুক্রবার বিকেলে কালিকাপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে গেলে সেখানে উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, বসতবাড়ি রক্ষার চিন্তায় তাদের নাওয়া-খাওয়া, ঘুম সব হারিয়ে গেছে। বন্যার অনেক আগেই এই বাঁধ সংস্কারের অনুমোদনের কথা তারা শুনলেও এখন এসে সেটি ‘দায়সারাভারে’ ভাবে মেরামত বা বাঁধ সংরক্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাও আবার এই বাঁধের উপরিভাগের মাটি কেটেই পাশে পাড়ে ফেলা হচ্ছে। ফলে বাঁধটি আরও ঝুঁকির মধ্যেই পড়ে যা”েছ বলে মন্তব্য করেন কালিকাপুর এলাকার গ্রামবাসী।

পাউবোর রাজশাহী জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কোহিনূর ইসলাম বলেন, বাঁধের মাটি কেটেই বাঁধ সংরক্ষণের কোনো নিয়ম নেই। এটা সম্পূর্ন নিয়মবহির্ভুত। ঠিকাদার এভাবে কাজ করলে কোন বিল পরিশোধ করা হবে না। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় আসাদুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, দুলাল উদ্দীন, বাসিন্দা সাবের আলীসহ উপস্থিত বেশ কয়েকজন বলেন, পার্শ্ববর্তী এলাকার দুটি স্থানে ইতিমধ্যেই গত দুই দিনে বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। কালিকাপুরের এই বাঁধের অবস্থাও ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছিল। তবে ওই দুটি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় কালিকাপুরে একটু পানি বৃদ্ধির চাপ কমেছে। কিন্তুু বাঁধের মাটি কেটে বাঁধ সংরক্ষনের হাস্যকর পদক্ষেপ দেখে মনে হচ্ছেÑযে কোনো সময় বড় বিপদের সৃষ্টি হতে পারে।

স্থানীয়রা জানান, কালিকাপুরের এই বাঁধ সংস্কার কাজের ঠিকাদারি অনুমোদন পান নাটোরের ঠিকাদার মোক্তার হোসেন। পরে সেটি সাব-ঠিকাদার হিসেবে কাজ নেন কাচারী কোয়ালীপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাষ্টার আব্দুল মজিদ। স্থানীয়দের অভিযোগ, দলীয় পদের প্রভাব খাটিয়ে ওই বাঁধের সংস্কার কাজের সাবঠিকাদারি নিয়েছেন আব্দুল মজিদ। তারই নির্দেশে ওই বাঁধে দায়সারা কাজ চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। গ্রামবাসী এসব নিয়ে প্রতিবাদ করলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। উল্টো প্রতিবাদকারীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, পাউবোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করেই ঠিকাদাররা এখানে দায়সারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা সাব ঠিকাদার আব্দুল মজিদ বলেন, মাত্র কয়েকদিন আগে তিনি কাজ করার অনুমতি পান। মাটির স্বল্পতার কারনে জরুরি প্রয়োজনে সেখানে বাঁধের মাটি কেটেই বাঁধ সংরক্ষণ করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

  • 108
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে