হাজার বছর আগেও ছিল উন্নত রেস্তোরাঁ, খাওয়ানো হত ব্যুফে

প্রকাশিত: ২৮-০৭-২০২০, সময়: ১৫:২৭ |

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষ প্রায় হাজার বছর আগে থেকেই ঘরের বাইরে খাবার খাওয়ার প্রচলন ঘটায়। তখন সাধারণত ভ্রমণের সময় রাস্তার পাশের বিক্রেতাদের কাছ থেকে হালকা জল খাবার গ্রহণ করত সবাই। তবে এখনকার মতো আয়োজন করে রেস্তোরায় খেতে যাওয়ার অভ্যাস তখনকার মানুষের মধ্যে ছিল না।

আধুনিক রেস্তোরাঁর সূচনা

পশ্চিমা বিশ্বে আধুনিক রেস্তোরাঁর সূচনা ঘটে ফ্রান্সে। ১৮ শতকে প্যারিসে রান্না বিষয়ক এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা হয়। তবে আনুষ্ঠানিক রেস্তোরাঁ সংস্কৃতির প্রথম প্রচলন শুরু হয়েছিল প্রায় ৬০০ বছর পূর্বে। ‘ডাইনিং আউট: এ গ্লোবাল হিস্ট্রি অব রেস্টুরেন্ট’ গ্রন্থের সহকারী লেখক এলিয়ট শোর এবং কেটি রাউসনের মতে, চীনে প্রথম স্বীকৃত রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছিল। তাও প্রায় ১১০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে।

তখনকার সময় চীনের কাইফেং কিংবা হ্যাংজহুর মতো শহরগুলো অত্যন্ত ঘন বসতিপূর্ণ ছিল। ওইসব শহরগুলোতে তখন প্রায় এক মিলিয়নেরও বেশি বাসিন্দা ছিল। ব্রাইন মাওর কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক শোর ব্যাখ্যা করেছেন, দ্বাদশ শতাব্দীতে সুং রাজবংশের শাসনামলে কাইফেং এবং হ্যাংজহুর উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তের রাজধানী শহর হিসেবে গড়ে ওঠে। তখন ওই শহরগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রের জন্য বিখ্যাত হতে শুরু করে।

রেস্তোরাঁর বিকাশ

সুং রাজবংশের শাসনামলে যখন বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটে তখন রেস্তোরাঁ সংস্কৃতিও বিকাশ লাভ করে। বাণিজ্য করতে যারাই চীনের ওই বাণিজ্যিক শহরে আসত তারা প্রয়োজনে অনেকে বাইরে খাবার গ্রহণ করত। যে কারণে শহরকেন্দ্রিক ছোট ছোট রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছিল। তবে সে সময় ব্যাবসায়ীরা অন্য অঞ্চলের খাবার গ্রহণ করতে অভ্যস্ত ছিল না। ফলে চীনের এই শহর দুটিতে গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁগুলোতে একেক অঞ্চলের মানুষের জন্য একেক খাবার রান্না হত।

অধ্যাপক শোর বলেন, চীনের সেসব শহরের প্রথম দিকে জাতিগত রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছিল। চীনে সুং রাজবংশের সময় গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁগুলো ব্যবসায়িক ভ্রমণকারীদের জন্যে পূর্ণ বিনোদন কেন্দ্রও ছিল। চীনের সে সময়ের কিছু নথিপত্র থেকে জানা যায়, ১১২০ এর দশকের রেস্তোরাঁগুলোতে অনেকটা একবিংশ শতাব্দীর পর্যটন কেন্দ্রের মতো সুযোগ সুবিধা ছিল। বিভিন্ন মানের রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছিল সে সময়। বৃহত্তর এবং উন্নত রেস্তোরাঁগুলোর সেবার মান অনেকটা বর্তমান সময়ের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল।

১১২৬ সালের একটি চীনা পাণ্ডুলিপি থেকে জানা যায়, সে সময় উন্নত রেস্তোরাঁয় প্রশিক্ষিত ওয়েটার থাকত। খাবার নির্বাচনের অনেক বিকল্প ব্যবস্থা থাকত এবং পরিবেশনও করা হত মনোরম পদ্ধতিতে। এই পাণ্ডুলিপিতে ওয়েটারদের দক্ষতা সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা আছে। যা অনেকটা আধুনিক সময়ের উন্নত রেস্তোরাঁর ওয়েটারদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

উন্নতমানের রেস্তারাঁ

জাপানে ১৫০০ সালের প্রথম দশকে ঐতিহ্যবাহী জাপানি টি-হাউজ রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছিল। এটি স্বতন্ত্র প্রকৃতির রেস্তোরাঁ ছিল। ষোড়শ শতাব্দীর জাপানি শেফ সেন ন রিক্যু খাবারের মেন্যুতে অনেক স্বতন্ত্র প্রকৃতির খাবার যোগ করেছিলেন। তখন থেকেই খাবার পরিবেশন ও উন্নত প্লেট, বাটি বা চামচের ব্যবহারে নতুনত্ব আসে। তবে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের সঙ্গে কয়েক শতাব্দীর বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকলেও প্রথম পর্যায়ের জাপানি ও চীনা রেস্তোরাঁ সংস্কৃতির প্রভাব পরবর্তী ইউরোপীয় ধরণগুলোর উপর বেশি পড়েনি।

জাপানি শেফরা নির্দিষ্ট মূল্যের টেবিল ডি’হট প্রথার প্রচলন করেছিল। যেখানে একই সঙ্গে অনেকের খাবারের ব্যবস্থাও থাকত। নিজেদের সমর্থন অনুযায়ী একেক শ্রেণির ব্যক্তিরা নির্দিষ্ট স্থান থেকে খাবার গ্রহণ করতে পারত। বর্তমান সময়কার ব্যুফের মতো ছিল এই ব্যবস্থাটি। রোস্তোরাঁর এই ব্যবস্থাকে শ্রেণিগত বা সাম্প্রদায়িক খাবার ব্যবস্থার প্রচলন বললেও ভুল হয়না। প্রথম দিকে শেফরাই মেনু ঠিক করে দিত। খাবারের সময়ও নির্দিষ্ট ছিল অনেক ক্ষেত্রে।

টেবিল ডি’হটে বৈচিত্র্য আসে পঞ্চদশ শতাব্দীতে। ইংল্যান্ডের শ্রমিক শ্রেণির খাবারের মেন্যুকে ‘অর্ডিনারি’ হিসেবে অভিহিত করা হত। ফ্রান্সে ১৮ শতকের শেষ দিকে প্রাতিষ্ঠানিক রেস্তোরাঁ গড়ে উঠতে থাকে। স্তরভেদে খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা সেখানেও ছিল। চীন এবং ফ্রান্সের রেস্তোরাঁ গড়ে উঠার প্রথম দিকের ইতিহাস দেখলে স্পষ্ট হয় যে, জনবহুল কর্মব্যস্ত শহরে রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছিল। শহরগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবেও বেশ পরিচিত ছিল। আমেরিকার রেস্তোরাঁর ইতিহাস দেখলেও একই রকম প্রমাণ পাওয়া যায়। নিউ ইয়র্ক সিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছিল ১৯ শতকে।

উপরে