রাজশাহীতে মাল্টা চাষে বিপ্লব

প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২০; সময়: ১:৩৯ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে মাল্টা চাষে বিপ্লব

নিজস্ব প্রতিবেদক : কয়েক বছর থেকেই রাজশাহীতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল মাল্টার উৎপাদন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। রাজশাহী বিভাগের আবহাওয়া অনুকুল থাকায় দিনে দিনে এই ফলের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর কয়েক বছরের ব্যবধানে জেলা ও পার্শবতী জেলাতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ বৃদ্ধি পেয়ে ভাগ্য বদলে গেছে অনেক বেকার যুবকের। জেলায় সবচেয়ে বেশি মাল্টার চাষ হচ্ছে (বারি মাল্টা-১) মিষ্টি জাতের দেশি বারি মাল্টায় নগরী ও উপজেলার বাজারগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ফল গবেষণা কেন্দ্রের সূত্র মতে, রাজশাহীতে মাল্টার প্রথম চাষাবাদ শুরু হয় ২০১৫ সালে। আর বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু ২০১৭ সালে। মাটি ও আবহাওয়ার উপযোগী হওয়ায় এই অঞ্চলে ফলটি খুব সম্ভবনাময়। পতিত জমি বাড়ি আঙ্গিনায় খরচ কম থাকায় ও বাণিজ্যিক ভাবে জমি তৈরি করে সহজেই চাষ করে বেশি লাভবান হওয়া যাচ্ছে। আর রোগ-বালাই ও ঝরেপড়া কম থাকায় এখন বাণিজ্যিক চাহিদা বেড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ বছর রাজশাহীতে মোট ১৪৮ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হয়েছে। আর গত বছর ২০১৯ সালে চাষ হয়েছিলো ১১৮ হেক্টর জমিতে।

কৃষি বিভাগের প্রকল্পের মাধ্যমে মাঝে মাঝে চারাও বিতরণ করা হয়। জেলায় বাগান আছে আনুমানিক ৩৩০ টি। গত বছর মাল্টার উৎপাদন হয়েছিলো ১৬০ মেট্রিকটন এ বছর হয়েছে ১৯০ মেট্রিক টন। জমি থেকে ৮০ টাকা ও ১০০ টাকা কেজি দরে পাইকারী বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি হেক্টরে আবাদ হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টন মাল্টা।

রাজশাহী বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ও পড়াশনা শেষ করে অনেকে এই মাল্টা চাষ শুরু করেছে। এমন একজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক ছাত্র। হাফেজ মশিউর রহমান তিনি পুঠিয়া উপজেলার একটি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক শিক্ষকতার পাশাপাশি দেড় বিঘা জমিতে মাল্টার আবাদ শুরু করেছে এখন তার বাগানে নতুন মাল্টা এসেছে। তিনি বলেন,‘তুলনামূলকভাবে খরচ কম। আমার নতুন বাগান এখন কিছু ফল ধরতে শুরু করেছে। আশা করছি দিনে দিনে ভালো ফলন পাবো।

নগরীর বোয়ালিয়া কৃষি কর্মকর্তা ফাহামিদা নাহার’ বর্তমানে নগরীর তেরখাদিয়া এলাকায় তার এক বিঘার মাল্টার বাগান রয়েছে। তিনি বলেন,‘চাকরির পাশাপাশি এই প্রজেক্টটা তৈরি করি এটা লাভজনক একটি ফল। ২০১৭ সালে গাছ লাগানো হয় বর্তমানে প্রায় ৮০ টা গাছ আছে। গতবছর মোট এক লক্ষ টাকার ফল বিক্রি করি। এ বছর হয়তো আরো বেশি বিক্রি হবে।

গোদাগাড়ী উপজেলার নবীনগর এলাকার কৃষক খাইরুল ইসলাম চার বছর আগে তিনি চার বিঘা জমিতে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে মাল্টার বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেন। তবে মাঝে দুর্বৃত্তরা তার কিছু গাছ কেটে ফেলায় ক্ষতির মুখে পড়ে। পরে ক্ষতি কাটিয়ে তিনি গত বছর মোট ৫০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। এ বছর তিনি আশা করছেন এক লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রি করবেন।

পুঠিয়ার সেনভাগ এলাকার চাষী জুয়েল রাজ পড়াশনা শেষ করে তিনি এখন ব্যবসায়ী। তার ব্যবসার পাশাপাশি ৬ বিঘার মাল্টার বাগান আছে। ২০১৬ সালে তিনি ৬ বিঘা জমির উপরে বাগানটি তৈরি করে এ পর্যন্ত ৮ লক্ষ টাকা খরচ করেছেন। আর গত বছর মাল্টা বিক্রি করেছেন ৬ লক্ষ টাকা। এবছর তিনি আশা করছে মোট ১০ লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রি হবে।

এ বছর বাণিজ্যিকভাবে মাল্টার বাগান করে লাভের মুখ দেখেছেন জেলার পুঠিয়া, পবা, মোহনপুর, তানোর ও গোদাগাড়ীর অনেক শিক্ষিত ও বেকার যুবকরা। পাঁচ বছরে রীতিমত নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন অনেকে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল হক বলেন, ‘রাজশাহীর অনেক বেকার যুবক এখন মাল্টা চাষে এখন ঝুঁকেছেন ফলের চাষ করে দামও ভালো পাচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় এ জেলায় এ ফলের চাষ বাড়ছে। আমরা নিয়মিত চাষীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘মাল্টা চাষে জেলায় বছরে এখন ২ কোটি টাকা আয় হচ্ছে। রাজশাহীর ৫ হাজার মানুষ চাষ থেকে শুরু করে মাল্টার বিভিন্ন ব্যবসার সাথে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে। জেলার সকল বাগানে আমরা চারাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করছি। আশা করছি, সামনে মাল্টা চাষে আরো বেশি উদ্বুদ্ধ হবে রাজশাহীর কৃষকরা’।

ফল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক আলীম উদ্দিন বলেন,‘ মাল্টা চাষে এ অঞ্চলে (বারি মাল্টা ১) অত্যন্ত সুস্বাদু একটি ফল। বিঘায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করে প্রতিবছর ৮০ হাজার থেকে একলক্ষ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। এতে করে বাইরে থেকে আসা মাল্টার আমদানি কমিয়ে ফেলবে। আর আবাদ আরো বাড়লে বাইরের দেশেও রপ্তানি করা যাবে।

  • 434
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে