টাকা না পেয়ে বন্দুকযুদ্ধে হত্যায় ওসিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২০; সময়: ৮:২৯ অপরাহ্ণ |
টাকা না পেয়ে বন্দুকযুদ্ধে হত্যায় ওসিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : দাবিকৃত ৫০ লাখ টাকা না পাওয়ায় এক প্রবাসীকে বন্দুকযুদ্ধে হত্যার অভিযোগে কক্সবাজারের চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পটিয়ায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় একই থানার হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) আমিনুল ইসলামসহ মোট ১৫ পুলিশ সদস্যকে আসামী করা হয়েছে।

পরে আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে সিআইডিকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল ১৬ আগস্ট, রবিবার পটিয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বেশ্বর সিংহের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন পটিয়ার কচুয়াই গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা আহমদ নবী।

কক্সবাজারের টেকনাফের মেরিন ড্রাইভে যে রাতে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হন একই রাতে ওই প্রবাসীসহ আরো দুই যুবক চকরিয়া থানা পুলিশের কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’র নামে নিহত হন।

সেদিন চকরিয়া থানা পুলিশ সংবাদমাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল— কক্সবাজারের চকরিয়ায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ৩ মাদক কারবারি নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ওসিসহ ৪ পুলিশ সদস্য। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৪৪ হাজার পিস ইয়াবা, অস্ত্র ও গুলি। শুক্রবার (৩১ জুলাই) ভোরে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া বানিয়ারছড়া আমতলী গর্জন বাগান পাহাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনাটি আরো অন্যান্য বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার মতো ধামাচাপাই পড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় আলোড়ন তৈরি হওয়ার পর অনেক চাপ উপেক্ষা করে মুখ খুলেন নিহত ওমান প্রবাসী জাফরের স্বজনেরা। জাফরের মামা বীরমুক্তিযোদ্ধা আহমদ নবী অবশেষে গতকাল চকরিয়া থানা ওসিসহ ১৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করতে সক্ষম হন।

জানা যাচ্ছে, পরিকল্পিতভাবেই ওই প্রবাসী ও দিনমজুরকে পটিয়ার বাসা থেকে ধরে চকরিয়ায় নিয়ে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করে চকরিয়া থানা পুলিশ। একই দিন আরেক যুবক তাদের সাথে কথিত এই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

জাফরের মামা বীরমুক্তিযোদ্ধা আহমদ নবীর দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ওমানপ্রবাসী জাফর ১২ মার্চ ছুটিতে আসেন। করোনার কারণে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় আর ফিরতে পারেননি। গত ২৯ জুলাই নিহত জাফরের গ্রামের বাড়ি পটিয়ার কচুয়াই ইউনিয়নের ভাইয়ার দিঘির পাড় এলাকায় আসেন চকরিয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমান এবং এসআই আমিনুল ইসলাম। তারা জাফরের সঙ্গে কথা বলে তাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যান। পরে জাফর একজন ইয়াবা ব্যবসায়ী- তাকে ছাড়াতে হলে ৫০ লাখ টাকা লাগবে বলে বাড়িতে ফোন করেন ওসি। টাকা না দিলে বন্দুকযুদ্ধে মেরে ফেলা হবে বলেও হুঁশিয়ার করে দেন তিনি।

এদিকে এতো টাকা জোগাড় করতে না পেরে জাফরের পরিবার তার প্রাণভিক্ষা চাইলেও তাকে কর্ণপাত করেনি চকরিয়া থানা পুলিশ। উল্টো ৩১ জুলাই পটিয়া থানা থেকে স্থানীয় এক ইউপি মেম্বারকে ফোন করে জানানো হয় জাফর চকরিয়ার বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। তার লাশ কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা আছে। পরে পরিবারের সদস্যরা সেখানে গিয়ে দেখেন তার লাশ পড়ে আছে।

নিহতদের স্বজনদের অভিযোগ, তিন দিন আগে ধরে নেয়ার পর পুলিশের দাবি করা টাকা দিতে না পারায় নিরপরাধ দুই যুবককে হত্যার পর ইয়াবা উদ্ধারের নাটক সাজায় পটিয়া থানা পুলিশ। এমনকি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পরও রহস্যজনকভাবে তাদেরকে অজ্ঞাত পরিচয়ে প্রচারণা চালায় পুলিশ।

এদিকে চকরিয়ায় কথিত অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আমিনুল ইসলামের কাছে তিনদিন আগে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা নিহত হওয়ার পর কেন অজ্ঞাত পরিচয়ে প্রচার করা হল— এমন প্রশ্ন করা হয়। এর উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে চকরিয়া থানার ওসিই ভাল বলতে পারবেন। সাথেসাথেই তিনি জরুরি মিটিং আছে বলে ফোনের লাইন কেটে দেন।

এ অভিযোগ সম্পূর্ণরূপেই অস্বীকার করেন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান। তিনি দাবি করেন, এ ঘটনায় তিনি জড়িত নন। মামলার বিষয়ে শুনেছেন। আর বন্দুকযুদ্ধের নামে কারো কাছে ৫০ লাখ টাকা চাননি বলেও দাবি করেন তিনি।

  • 30
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে