সাতক্ষীরায় অন্যরকম এক রেস্টুরেন্ট
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : গোড়ালি সমান পানির মধ্যে মাছের আনাগোনা। কখনও বা মাছ কামড়ে ধরছে পা। যেন এক অন্যরকম অনুভূতি। সেখানেই বসে খাওয়া-দাওয়া। পানিতে মাছের সঙ্গে শিশুরা মাতছে আপন মনে। ‘মৌবন রেষ্টুরেন্ট’ নামে এমন এক ব্যতিক্রমী রেষ্টুরেন্ট চালু হয়েছে সাতক্ষীরা শহরের বাইপাস সড়কের বকচরা মোড় এলাকায়।
গত ৩০ জুলাই গেষ্টদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় রেষ্টুরেন্টটি। কয়েকদিনের মধ্যেই রেষ্টুরেন্টটি সাড়া ফেলে স্থানীয়দের মাঝে। পানিতে পা ডুবিয়ে খাবার খাওয়ার স্বাদ উপভোগ করছেন অনেকে। আর শিশু-তরুণরা মাতছে মাছের সঙ্গে। প্রতিদিন ৩৫-৪০ হাজার টাকার বিক্রি হচ্ছে রেস্টুরেন্টটিতে।
প্রতিষ্ঠানটির মালিক সাতক্ষীরা শহরের বাস টার্মিনাল এলাকার বাসিন্দা দেলোওয়ার হোসেন। রেষ্টুরেন্টটি তৈরী ও পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি জানান, প্রথমে ইউটিউবে পানির মধ্যে রেষ্টুরেন্ট আর সেখানে বসে মানুষ খাবার খাচ্ছে এমন একটি ভিডিও দেখি। দেখার পর ভালো লেগে যায়। সেখান থেকেই এমন একটি রেষ্টুরেন্ট তৈরীর পরিকল্পনা মাথায় আসে। অবশেষে সাতক্ষীরা শহরের বাইপাস সড়কে বকচরা এলাকায় নিরিবিলি পরিবেশে মৌবন রেষ্টুরেন্ট নামে এমন একটি রেষ্টুরেন্ট করেছি।
তিনি বলেন, গত ৩০ জুলাই কাষ্টমারদের জন্য রেষ্টুরেন্টটি খুলে দিয়েছি। এখন প্রতিদিন শত শত মানুষ আসছেন। কেউ দেখতে আসছে, আবার কেউবা পরিবার নিয়ে খেতে আসছেন। বাচ্চারা পানিতে মাছের সঙ্গে খেলছে। সকলেই খুব উপভোগ করছে। আশা করছি আধুনিকতার এ যুগে রেষ্টুরেন্টটি সকলের ভালো লাগবে।
রেষ্টুরেন্টটিতে ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন বনি আমিন। তিনি জানান, সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকলেও মূলত বিকেল ৩টার পর থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষদের আগমন ঘটে। দশ জন স্টাফ-কর্মচারী রয়েছে।
”চাইনিজ, বাংলা, ফাস্ট ফুডসহ সব ধরণের খাবার এখানে পাওয়া যায়। সি ফুড, রুপচাঁদা মাছ ও চাইনিজ খাবার কাষ্টমারদের বেশী পছন্দ। প্রতিদিন ৩৫-৪০ হাজার টাকার বিক্রি হচ্ছে”, যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, এখানকার খাবারের মধ্যে নতুনত্ব হচ্ছে সাগরের রুপচাঁদা মাছ, লবস্টার, ইলিশ, ভেটকিসহ বিভিন্ন মাছের রেসিপি। করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই রেষ্টুরেন্টটি পরিচালনা করা হচ্ছে।
”যেহেতু একেবারেই নতুন তাই অনেকেই এখনো জানতে পারেনি। তবে আশা করছি, পরিচিতি বাড়লে গেস্টও বাড়বে”, বললেন বনি আমিন।
পানি বদলানো বা নতুন পানি দেওয়ার ব্যাপারে তিনি জানান, প্রতিদিন সকালে মাছের পানি বদলানো হয়। নিজস্ব টিউবয়েল থেকে মোটরের মাধ্যমে পানি তুলে ট্যাংকে রাখা হয়। সেখানে ফিল্টারিং করে আরেকটি পানির ট্যাংকে রেখে সেই পানি মাছের জন্য দেওয়া হয়। রেষ্টুরেন্টের ভিতরে ছোট একটি জায়গা রয়েছে। পানি বদলানোর সময় মাছেরা সেই জায়গায় অবস্থান নেয়। এ ছাড়া রেষ্টুরেন্টের ভেতর পরিষ্কার করার পর নতুন পানি দিলে মাছেরা আবারো ভিতরে চলে আসে।
মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই সব শ্রেণিপেশার মানুষদের মাঝে সাড়া ফেলেছে ব্যতিক্রমী এ রেষ্টুরেন্টটি। এখানে রয়েছে গাড়ি পাকিংয়ের ব্যবস্থা। বসা ও খাওয়ার জন্য পৃথক জায়গা। আগতরা নিজেদের পছন্দমত জায়গায় বসে খেতে পারবেন।
পানির মধ্যে রয়েছে ক্যাট ফিস, কমেট ফিস, গোল্ড ফিস, ব্লু-ফাইটারসহ ১৫ প্রজাতির বিভিন্ন ধরণের মাছ। সেখানেই পায়ের গোড়ালি ডুবিয়ে খাওয়ার জন্য ছুটেছেন ভোজনবিলাসীরা। আর মাছের সঙ্গে শিশুরা মেতে উঠছে আপন মনে।
নিরিবিলি পরিবেশে সময় কাঁটাতে রেষ্টুরেন্টনিতে এখন শিশু-কিশোর, তরুন-তরুণীসহ বয়স্ক মানুষদের আনানোগা। সাতক্ষীরার শহরের মুনজিতপুর এলাকার আলিফ হোসেন। তিনি ঢাকা কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বর্তমানে রয়েছেন শহরের নিজ বাড়িতে।
তিনি জানান, হোটেলটির পরিবেশ অনেক সুন্দর। পানিতে মাছ আর সেখানে রয়েছে গোড়ালি সমান পানিতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা। খাওয়ার সময় মাছ এসে পায়ে কামড় দিচ্ছে। এ এক অন্যরকম অনুভূতি। রেষ্টুরেন্টটিতে নতুনত্ব রয়েছে।
বন্ধুদের কাছে শুনে হোটেলটি দেখা ও সেখানে খাওয়ার জন্য গিয়েছেন শহরের সুলতানপুর এলাকার বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, শহরের অন্য হোটেল বা রেষ্টুরেন্ট থেকে এখানকার পরিবেশ ভিন্ন। খাবারের দামও সাশ্রয়ী। সবমিলিয়ে আমার কাছে ভালো লেগেছে।
জেলার শ্যামনগর খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা আমিনুর রহমান বুলবুলের নার্সারী পড়–য়া মেয়ে তামান্না আফরিন রুহি। সে পরিবারের সঙ্গে দুইবার ঘুরেছে মৌবন রেষ্টুরেন্টে। সেখানে গেলেই সে মাছের সঙ্গে খেলা করে। বার বার রেস্টুরেন্টটিতে যেতে চায় রুহি।
রুহি জানায়, ওখানে গেলে খুব আনন্দ লাগে। মাছ আছে, খাবারও আছে। আমি আবারও যাবো।
পানির মধ্যে খাবার ও শিশুদের খেলাধুলায় স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি রয়েছে কি না জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. অসীম কুমার সরকার বলেন, পানির মধ্যে খাওয়ায় বড়দের কোনো স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি না থাকলেও শিশুদের রয়েছে।
”শিশুরা মাছের সঙ্গে খেলা করে আনন্দ পাচ্ছে। তবে ওই খেলার সময়টা যদি বেশী হয় তবে অনেক ক্ষেত্রে তাদের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে। এ ক্ষেত্রে শিশুদের ব্যাপারে একটু খেয়াল রাখতে হবে”, যোগ করেন তিনি।