চারঘাট পৌরসভা নির্বাচনের আগাম প্রচারনায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা
নজরুল ইসলাম বাচ্চু নিজস্ব প্রতিবেদক, চারঘাট : রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার একমাত্র পৌরসভা চারঘাট পৌরসভা নির্বাচনের আগাম প্রচারনা শুরু করেছে সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তফসিল ঘোষনা না হলেও নির্বাচনী প্ররোচনায় সরোব হয়ে উঠেছে সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের একাধিক সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় ইতিমধ্যে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন। নির্বাচনকে ঘিরে দলীয় মনোয়ন পেতে প্রার্থীরা নিজ নিজ দলের নেতাদের বিভিন্নভাবে যোগযোগ করে চলেছেন। সর্বোত্বই আলোচনা হচ্ছে কে পাচ্ছেন মেয়র পদে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন।
সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নিজেদের পরিচিতি পাইয়ে দেয়ার জন্য পৌরসভার রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে, বাজারঘাটে ও গুরুত্বপুর্ন স্থানে রঙ্গিন পোষ্টার ব্যানার ও ফেষ্টুনে ছেয়ে গেছে। নিজেদের প্রার্থীতা জানান দেয়ার জন্য কোন কোন প্রার্থীর ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও মোটর সাইকেল শোডাউন করতে দেখা গেছে। কেউবা পৌরসভা এলাকার বিভিন্ন গ্রামে, পাড়ায় মহল্লায় ছোট ছোট সভা করে ভোটের কর্মী ও সমর্থকদের সংগঠিত করছেন। পৌরসভার উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
বরাবরের মতো এবারেও চারঘাট পৌরসভায় সম্ভাব্য মেয়র তালিকায় এগিয়ে রয়েছেন অপেক্ষাকৃত তরুনরা। বিগত ৪টি নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি উভয়ই ২ বার করে এই মেয়র পদটি দখল করেন। রাজনৈতিকভাবে চারঘাট পৌরসভা খুবই গুরুত্বপুর্ন বিধায় আওয়ামী লীগ ক্লিন ইমেজের কাউকে নমিনেশন দিয়ে ভোটের মাধ্যমে এই পদটি ফিরে পেতে মরিয়া।
আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক মেয়র নার্গিস খাতুন, উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি কাজী মাহমুদুল হাসান মামুন ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও ক্রিড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক একরামুল হক। বিগত পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হলে ও মনোনয়ন দৌড়ে সাবেক মেয়র নার্গিস খাতুন অনেকটা শক্ত প্রতিপক্ষ বলে মনে করেন স্থানীয় ভোটাররা। অসহায়দের আর্থিক সহযোগীতার পাশাপাশি তিনি তৃণমুলের সাথে যোগযোগ রক্ষা করে চলেছেন।
ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা ক্লিন ইমেজের অধিকারী ১ম শ্রেণীর ঠিকাদার, সমাজসেবক ও উপজেলা আওয়ামী যুবলীগ সভাপতি কাজী মাহমুদুল হাসান মামুন আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে একেধারে সরদহ কলেজ ছাত্র লীগের সভাপতি ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় অসহায় দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন এবং ব্যক্তিগত তহবিল থেকে কয়েক ধাপে প্রায় ২ হাজার পরিবারকে তুলে দিয়েছেন খাদ্য সামগ্রী। পাশাপাশি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এলাকার দরিদ্র শিক্ষার্থীদের।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান চারঘাট পৌর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক একরামুল হক আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। বর্ণ্যাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের অধিকারী এই নেতা ওয়ান এলিভেন এর সময় জেলজুলুম ও মামলা-হামলা সহ্য করেছেন এবং জড়িত রয়েছেন সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সহিত। এছাড়া ২০১৪ সালে ৫ই জানুয়ারী নির্বাচন কালীন সময়ে শলুয়া কলেজ মাঠে সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর প্রচরনা সভায় দুবৃত্তে হামলায় আহত হয়েছেন বলে জানান।
পৌরসভার অসহায় কর্মহীনদের মাঝে ব্যক্তিগত তহবিল হতে কয়েক ধাপে ১ হাজার ২শত জনকে খাদ্য সামগ্রী সহযোগীতা প্রদান করেছেন বলে তিনি জানান। তিনি তৃণমুল আওয়ামীলীগের সমর্থনের পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন পাবার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন, সদ্য বিলুপ্ত পৌর বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র, জাকিরুল ইসলাম বিকুল, উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক নাজমুল হক ও পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি কায়েম উদ্দীন।
সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে দুই দুইবারের নির্বাচিত মেয়র জাকিরুল ইসলাম বিকুলের দলীয় প্রার্থীতা প্রায় একরকম নিশ্চিত বলে তিনি জানান। তৃনমুল বিএনপিতে তিনি খুবই জনপ্রিয় এবং সর্বমহলে রয়েছে গ্রহনযোগ্যতা। নির্বাচনের বেশ কয়েক মাস থাকলেও তিনি তৃনমুল নেতাকর্মীদের সমর্থন আদায়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তিনি মেয়র থাকা অবস্থায় চারঘাট পৌরসভাটি ১ম শ্রেণীর পৌরসভার মর্যাদা লাভ করে। তিনি পুনারয় দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং তার সময়ে নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে তিনি বলেন উন্নয়ন কর্মকান্ড চলমান রাখতে পৌরবাসী তাকে পুনরায় মেয়র হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে আশা করছেন।
দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় বেশ কয়েক বছর হলে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে আসছেন উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক নাজমুল হক। দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় নেতাকর্মীদের কাছে যাচ্ছেন। কোভিড মোকাবেলায় অসহায়দের পাশে এসে দাড়িয়েছেন এবং তাদের বিভিন্ন সময়ে তুলে দিচ্ছেন খাদ্য সামগ্রী। এছাড়াও গত নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থী কায়েম উদ্দীনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তার নাম শোনা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, চারঘাট পৌরসভার সবশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৫ সালের ৩০ শে ডিসেম্বার। আর নির্বাচিত মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহন করেছিল ২০১৬ সালের ১৫ই জানুয়ারী। কোন মামলা মোকাদ্দমা না থাকলে নিয়ম অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বার/২০ অথবা জানুয়ারী/২১ এর মধ্যেই ভোট হওয়ার রয়েছে বলে জানা যায়।