কাক ও কাঁকড়ার উপকথা

প্রকাশিত: ০৯-০৯-২০২০, সময়: ১৪:৩১ |

বিএম বরকতউল্লাহ্ : লাল কাঁকড়া দেখেই কাকের জিভে পানি এসে গেল। কাঁকড়ার শরীর জবা ফুলের মতো টকটকে লাল। সামনের পা দুটো লম্বা ও শক্ত।
সাগরপাড়ে ভেজা বালুতে লাল কাঁকড়ারা গর্তের আশপাশে ছুটে বেড়ায়। কারো কোনো আভাস পেলেই ওরা পটাপট গর্তে ঢুকে পড়ে।

কাকটি লোভ সামলাতে পারল না। সে বলল, কাঁকড়াটি দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও হবে খাসা। আমি যাই না কেন তার কাছে!

যেই কথা সেই কাজ। সে উড়ে গিয়ে কাঁকড়াকে ঠোকর দিয়ে ধরল। ওমনি কাঁকড়া তার সামনের দুই পায়ে চিমটি দিয়ে ধরল কাকের মুখে। কাক হা করতে পারছে না। ভারি মুশকিল! কাক একবার পেছনে যায় আবার সামনের দিকে যায়। মাটিতে ঠোঁট ঘষে, কিন্তু কাঁকড়া তার চিপ ছাড়ে না।

উপায়হীন কাক কাঁকড়াসহ সোজা চলে গেল নিজের বাসায়। সেখানে কাকের দুটো ছানা খাবারের অপেক্ষায় হা করে বসে আছে। কাক বাসায় গিয়ে বসতেই ছানারা হা করা মুখ বন্ধ করল। ওরা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল লাল কাঁকড়ার দিকে।

কাঁকড়া চিপ ছেড়ে দিয়ে বাসার এক কোনে বসে রইল। কাকের ছানারা লাল কাঁকড়া দেখে বেজায় খুশি। ওরা বলে- মা, আমরা এটাকে খাব না; ও আমাদের সঙ্গেই থাক।

কাক বলল, হয় ওকে খেয়ে ফেলতে হবে, নয় ওকে তাড়িয়ে দিতে হবে। এই দেখ, ওর চিমটিতে আমার মুখ ফুলে গেছে।

একথা শুনে ছানারা খলখলিয়ে হেসে উঠল। এমন সময় একটি পাখি উড়ে এসে বলল- এত সুন্দর মেহমান তোমার ঘরে। সত্যিই তুমি বড় ভাগ্যবান।

ভাগ্য আমার চলে গেছে এই সুন্দর মেহমানের চিমটি খেয়ে, বলল কাক।

পাখিটি বলল, তবুও এমন সুন্দর অতিথি পাওয়া বড় ভাগ্যের ব্যাপার।

কাক বলল, তোমার ভাগ্য খুব দূরে নয়। ইচ্ছে করলে তুমি এখনই ওকে পেতে পারো। যদি সে তোমার সঙ্গে যেতে রাজি হয়।

পাখিটি আরেকটু কাছে গিয়ে কাঁকড়াকে বলল- সত্যি তুমি অনেক সুন্দর। তোমাকে অতিথি হিসেবে পেলে আমি ধন্য হই।

কাঁকড়া রাজি হয়ে গেল। সে কাকের ছানাদের আদর দিয়ে পাখিটির গলায় মালার মতো ঝুলে পড়ল। পাখিটি লাল কাঁকড়াকে নিয়ে উড়াল দিল।

সে তার পরিপাটি ও সুন্দর বাসায় গিয়ে উঠল। পাখিটি কাঁকড়াকে মজার মজার খাবার দিল খেতে। পেট ভরে খেল কাঁকড়াটি। আশপাশ থেকে ছুটে এল আরো কত পাখি।

কাঁকড়াকে দেখে সবাই খুব খুশি। কাঁকড়ার সমাদরের শেষ নেই। কাঁকড়া বলল, আমি তোমাদের আদর-আপ্যায়নে খুব খুশি। এবার আমাকে নিয়ে চলো সেই সমুদ্র সৈকতে যেখানে আমি থাকি।

পাখিটি কাঁকড়াকে নিয়ে চলে গেল সমুদ্রসৈকতে। পাখিটি ফিরে যাওয়ার সময় অনেক পাখির সঙ্গে দেখা হলো। তারা বলল, বাহ চমৎকার। তোমার গলায় এমন দুটি রঙিন দাগ আছে যা দেখতে অবিকল মালার মতো।

তারপর দেখা হলো সেই কাকের সঙ্গে। কাক পাখিটির গলায় রঙিন দাগ দেখে বলল, মনে হচ্ছে তুমি অলংকার পরে আছ। তোমাকে দেখতে বেশ লাগছে। আমি কাঁকড়ার রঙ-টঙ কিছুই পাইনি, মাগনা চিমটি খেলাম।

পাখিটি বলল, তুমি ঠকেছ তোমার কারণেই। তুমি এটাকে খাবারের জিনিস ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারনি। লাল কাঁকড়ার যে রঙ ও রূপ তুমি তার মূল্য বুঝতে পারনি।

সেই থেকে সাদামাটা পাখিটির গলায় মালার মতো দাগ দেখা যায়। আর এই দাগের জন্য এদেরকে সুন্দর দেখায়। মাথা খাটিয়ে সেই পাখির নাম বলতে হবে তোমাদের।

সূত্র : বিডিনিউজ

উপরে