রাজশাহী অঞ্চলে ভর্তুকির সার বিক্রিতে নৈরাজ্য

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২০; সময়: ৩:৫৬ অপরাহ্ণ |
রাজশাহী অঞ্চলে ভর্তুকির সার বিক্রিতে নৈরাজ্য

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : মনিটরিং কমিটিগুলোর নিষ্ক্রিয়তায় রাজশাহী অঞ্চলে ভর্তুকির সার বিক্রিতে চরম নৈরাজ্য চলছে। ভরা মৌসুমে এ সার চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এক জেলা বা উপজেলার সার অন্য জেলায় চালান ও বিক্রিতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অবাধে সার পাচার হচ্ছে।

ডিলার, খুচরা কারবারি, বিসিআইসি ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা এবং আমদানিকারকরা সার পাচার চক্রে সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া সার বিক্রির সরকারি অনুমোদন ছাড়াই কালোবাজার থেকে সার কিনে তা মজুদ করছে একশ্রেণির ফড়িয়া।

রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর একাধিক সার ডিলার জানায়, সার বিতরণ নীতিমালা-২০০৯ অনুযায়ী এক জেলার জন্য বরাদ্দ সার অন্য জেলা, অঞ্চল বা উপজেলা এলাকায় চালান ও বিক্রি নিষিদ্ধ। অনুমোদিত ডিলারকে বরাদ্দ সার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তোলন করতে হয়। সার উত্তোলনের পর উপজেলা মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা সদস্য সচিব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পৃথক অথবা যৌথভাবে ডিলারের দোকান পরিদর্শন করে সার উত্তোলন ও সংরক্ষণের কাগজপত্র নিশ্চিত হবেন।

গুদাম থেকে সার উত্তোলনের পর পরিবহনের বরাদ্দপত্র, চালান ও বাফারের ছাড়পত্র, কোথায় সার যাবে, সেই ঠিকানা চালানপত্রে থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বৃহত্তর রাজশাহীর জেলা ও উপজেলায় সার বিক্রিতে এসব নিয়মের কোনো বালাই নেই। কোনো ডিলার সার উত্তোলন করতে না পারলে তার বরাদ্দ মনিটরিং কমিটির কাছে সমর্পণ করতে হয়। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, উপজেলা সার মনিটরিং কমিটি বিষয়টি জানার পরও অজ্ঞাত কারণে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

টিএসপি, ডিএপি ও এমওপির এক বস্তা ৫০ কেজির সারের সরকারি মূল্য ৭০০ টাকা হলেও উত্তরাঞ্চলজুড়ে কৃষক কিনছেন ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশানের (ডিলার সমিতি) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, এ জেলার নাচোল, নেজামপুর ও রাজবাড়ীহাট পাচার হয়ে আসা সারের বড় মোকাম হয়ে উঠেছে। নাচোলের তরিকুল, তোহিদুল, আতাউর, স্বপন, দবিরউদ্দিন ও তৈমুর আলীসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী নওয়াপাড়াসহ বিভিন্ন মোকাম থেকে অবৈধভাবে সার কিনে এনে মজুদ করছে। খুচরা ব্যবসায়ী ও কৃষকদের কাছে তারা চড়া দামে সার বিক্রিও করছে।

নাচোল উপজেলা সার মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব ও কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মেদ বলেন, এ অঞ্চলে সারের চাহিদা বেশি থাকায় কেউ কেউ বরাদ্দ ছাড়াই অবৈধভাবে ইউরিয়া, নন-ইউরিয়া সার বিভিন্ন মোকাম থেকে আনছে। কৃষকদের কাছে তারা সার বিক্রি করছেন বলে আমরা কিছু বলছি না। এভাবে সার আনা ও বিক্রি করা অবৈধ বলে তিনি স্বীকার করেন।

জানা গেছে, বিসিআইসি ও বিএডিসির অনেক ডিলার বরাদ্দ সার না তুলে নওয়াপাড়া, নগরবাড়ী, রাজশাহী, সান্তাহার, রোহনপুর বাফারে বরাদ্দপত্র বিক্রি করে দিচ্ছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মজুদদারদের কাছে এসব সার চলে যাচ্ছে। খুচরা বিক্রেতাদের কাছে মজুদদাররা চড়া দামে সার বিক্রি করছে। কৃষক কিনছেন চড়া দামে।

রাজশাহী বিএএফের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম বলেন, অনেক জেলায় সার পাচারকারীদের দৌরাত্ম্যে বৈধ ডিলাররা সার বিক্রি করতে পারছেন না। অনুমোদন ছাড়াই যত্রতত্র সার মজুদ ও বিক্রির ফলে বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও বেশি দামে সার কিনছেন কৃষক। মনিটরিং কমিটিকে আরও সক্রিয় করার দাবি জানান তিনি।

নাচোলের সার ব্যবসায়ী তৌহিদুল আলম বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের বিসিআইসির অধিকাংশ ডিলার বরাদ্দ অনুযায়ী সার উত্তোলন না করে চাহিদাপত্র (ডিও) বিক্রি করে দিচ্ছে। ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি নওয়াপাড়া মোকামে ও রাজশাহী বাফারে তারা বেঁচে দেন। কৃষকের চাহিদা পূরণে সেখান থেকে আমরা বেশি দামে সার কিনে আনি।

নওয়াপাড়ায় ভর্তুকির সার খোলাবাজারে বিক্রি হয়। আমরা অল্প লাভে কৃষকের কাছে বা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। দোষটা আমাদের নয়। যারা ডিও বিক্রি করছে আর সিন্ডিকেট করে সার মজুদ করছে, দোষটা তাদের। তিনি বলেন, নওয়াপাড়ায় অবৈধ সার প্রকাশ্যে কেনা-বেচা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ- রাজশাহীসহ গোটা উত্তরাঞ্চলে সার মনিটরিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় অবাধে সার পাচার হচ্ছে। ১ ডিসেম্বর বগুড়া থেকে ঝিনাইদহে পাচারকালে শেরপুরে দুই ট্রাক ভর্তি ৪০ টন সার জব্দ করে স্থানীয় প্রশাসন। সার পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সার মনিটরিংয়ে কৃষি কর্মকর্তাদের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে তার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। সারের অবৈধ মজুদ ও বিক্রি সম্পর্কেও তিনি অবহিত নন। অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র- যুগান্তর

  • 42
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে