দীর্ঘ সেশনজটের শঙ্কায় রাবি শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২০; সময়: ২:২৮ অপরাহ্ণ |
দীর্ঘ সেশনজটের শঙ্কায় রাবি শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা মহামারির কারণে প্রায় নয় মাস বন্ধ রয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ৯ জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনলাইনে ক্লাস চালু করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে অনলাইন ক্লাসগুলোতে বিভাগভেদে ১০ থেকে ৫০ শতাংশে সীমাবদ্ধ রয়েছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। দু’একটি বিভাগে এর চেয়ে কিছুটা বেশি উপস্থিতি রয়েছে। রাবির অধিকাংশ বিভাগই সেশনজটমুক্ত। হাতেগোনা ৭ থেকে ৮টি বিভাগে সেশনজট একটু বেশি। প্রতিবার নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে অধিকাংশ বিভাগেই ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় পরীক্ষা শুরু করা সম্ভব হয়নি। করোনার আগে বেশ কয়েকটি বিভাগের স্নাতক ও মাস্টার্সের পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষার মাঝেই বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যদিকে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষাও বাকি। এতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা দিয়েছে দীর্ঘ সেশনজটের শঙ্কা। শিক্ষার্থীদের দাবি- দ্রুতই এ বিষয়ে প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। উপাচার্য বলেছেন, ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যেই জরুরি একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের তত্ত্বীয় পরীক্ষা হয়েছিল, তবে মৌখিক পরীক্ষা ও ল্যাব টেস্ট হওয়ার আগেই ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যায়। গণিত বিভাগের ৯টি কোর্সের ৬টি, আইন বিভাগের ৮টি কোর্সের ৫টি, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১টি, ফাইন্যান্স বিভাগের ১টি পরীক্ষাসহ বেশ কয়েকটি বিভাগে ২০১৯ সালের পরীক্ষা আটকে আছে। এ নিয়ে হতাশায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা। ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি গত ৩ ডিসেম্বর প্রকাশের পর অসমাপ্ত পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেন। অন্যদিকে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের অনার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষা করোনার কারণে শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।

আইন বিভাগের কয়েক শিক্ষার্থী জানান, ৫ মার্চ আইন বিভাগের এলএলবি (সম্মান) পার্ট-৪ এর পরীক্ষা শুরু হয়। ২ এপ্রিল তাদের পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের ৫টি কোর্সের পরীক্ষা আটকে আছে। আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন ১৩তম জুডিশিয়ারি নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছে। হয়তো নতুন নিয়োগ বিজ্ঞাপন দেবে। আমাদের পরীক্ষা শেষ না হওয়ায় আশঙ্কা করছি, ১৪তম জুডিশিয়ারি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারব না।

এদিকে দীর্ঘ সেশনজট এড়াতে প্রয়োজনে গ্রীষ্ফ্মকালীন ও সাপ্তাহিক ছুটি কমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কয়েক অধ্যাপক। তাদের মতে, চলতি বছর করোনার কারণে অধিকাংশ সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। এ জন্য প্রয়োজন পরের বছর ছুটি কমিয়ে এনে ক্লাস ও পরীক্ষা শেষ করা।

এ বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান বলেন, অনার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষায় আটকে থাকা শিক্ষার্থীরা আমার কাছে এসেছিল। তারা পরীক্ষা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। এটিকে আমরা সহানুভূতির সঙ্গে নিয়েছি। ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে বিশেষ একাডেমিক সভা ডাকব। সেখানেই আমরা অসমাপ্ত অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্স পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। বিভাগের সভাপতিরা চাইলে এ মাসের শেষদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিতে তারিখ নির্ধারণ করা হবে। না হয় জানুয়ারির শুরুতেই তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ সময় উপাচার্য আরও জানান, সম্ভব হলে অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সে যাদের পরীক্ষা এখনও শুরু হয়নি, তাদেরও পরীক্ষা নেবেন।

হল খোলার বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা নিলেও আপাতত হল খুলব না। শিক্ষার্থীদের মেসে থেকে পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। হল খুললে যাদের পরীক্ষা নেই তারাও ক্যাম্পাসে আসবে এবং হলে থাকতে চাইবে। এতে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হবে না। কাজেই আমরা শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিতে ফেলতে চাই না।’

  • 8
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে