গঙ্গার পানি চুক্তির ২৫ বছর, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ পানি পর্যবেক্ষণ শুরু

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২১; সময়: ৫:৫৬ অপরাহ্ণ |
গঙ্গার পানি চুক্তির ২৫ বছর, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ পানি পর্যবেক্ষণ শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা : পাবনা ঈশ্বরদীর পাকশীতে পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের পানি পরিমাপ কার্যক্রম শনিবার থেকে শুরু হয়েছে। আগামী ৩১ মে পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে এই পানি পরিমাপ কার্যক্রম চলবে।

বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে গঙ্গার পানিচুক্তির ২৫ বছর চলে গেলেও বাংলাদেশ কখনও ন্যায্য হিস্যার পানি পায়নি। তবে প্রতি বছর চুক্তি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে পদ্মা নদীতে পানি পরিমাপ করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী ১-১০ জানুয়ারি গড়ে ৬৭ হাজার ৬৫০ কিউসেক পানি প্রবাহ থাকার কথা। চুক্তি অনুয়ায়ী কোন বছরেই ভারত বাংলাদেশকে পানি দেয় না। ফলে জিকে (গঙ্গা-কপোতাক্ষ্য) প্রকল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ সহ দেশের নদীগুলো মরু ভূমিতে পরিণত হয়েছে।

পাবনা হাইড্রোলজি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী রইচ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের পদ্মা নদীতে পানি প্রবাহ পর্যবেক্ষণের জন্য ২ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধি দল শুক্রবার দেশে এসেছেন। প্রতিনিধি দলে রয়েছে, ভারতের কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের উপ পরিচালক শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর এবংকমিশনের সহকারি পরিচালক শ্রী নাগনরা কুমার। প্রতিনিধি দল শনিবার সকাল থেকে পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টের ২৫০০ ফুট উজানে পানির প্রবাহ পর্য বেক্ষণ শুরু করেছ বলে জানান হাইড্রোলজি বিভাগ কর্মকর্তা রইচ উদ্দিন। সময়ে ৪ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল যার নেতৃত্বে রয়েছে যৌথ নদী কমিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম সাইফুদ্দিন গঙ্গা নদীর ফারাক্কার দুটি পয়েন্টে গঙ্গার পানি প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করবে বলে জানান তিনি।

উলে¬খ্য, ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের হায়দারাবাদ হাউজে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদী পানি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বাংলাদেশের পক্ষে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের পক্ষে সে দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়া এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। পরবর্তী বছর ১৯৯৭ সালে ১ জানুয়ারী থেকে দু’দেশের মধ্যে ভারতের অংশে গঙ্গা নদীর পানি ভাগাভাগি চুক্তি কার্যকর শুরু হয়। ৩০ বছর মেয়াদী পানি চুক্তির সিডিউল অনুযায়ী প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমের ৫ মাস অর্থাৎ ১ জানুয়ারী থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এ চুক্তি কার্যকর হবে। পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পয়েণ্টে প্রতি বছর এই পানির প্রবাহ পরিমাপ করার বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী দু’দেশের প্রকৌশলী ও পানি বিশেজ্ঞরা শুষ্ক মৌসুমের প্রতি মাসে ৩ দফা অর্থাৎ ১০ দিন পরপর হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পয়েন্টে পানি প্রবাহের পরিমাপ রেকর্ড করে যৌথ নদী কমিশনের কাছে উপস্থাপন করেন। চুক্তির ২ নম্বর অনুচ্ছেদের ২ নম্বর ধারায় গত ৪০ বছরে (১৯৪৯-৮৮) পানি প্রবাহের গড় ভিত্তিতে একটি সিডিউল নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সিউিউল অনুযায়ী ১ থেকে ১০ জানুয়ারী পর্যন্ত বাংলাদেশের পানি পাবার কথা গড়ে ৬৭ হাজার ৫শ’ ১৬ কিউসেক। তবে এ বছর শুরুতেই পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে গত বছরের সম পরিমান না হলেও পর্যাপ্ত পানির সর বরাহ রয়েছে বলে জানিয়েছে হাইড্রোলজি বিভাগ। গত ৩১ ডিসেম্বর বছরের শেষ দিনে গত বৃহ¯পতি বার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল প্রায় ৮৮ হাজার কিউসেক। প্রতিদিন এই পানির পরিমান হ্রাস পাচ্ছে। শনিবার ২ জানুয়ারী এই পানির পরিমান আছে প্রায় ৭৮ হাজার কিউসেক।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সুত্র জানায়, পানি চুক্তি কার্যকরের পর থেকে এ পর্যন্ত কোন বছরেও বাংলাদেশ তার নায্য হিস্যা পায়নি। ফলে পদ্মা নদী বেষ্ঠিত ৬টি জেলায় মরু করণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পানির স্তর ৩০/৪০ ফুট নিচে নেমে গেছে। পদ্মা নদী এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প, পাবনা সেচ ও পল¬¬¬¬ী উন্নয়ন প্রকল্প, পানাসি প্রকল্প, বরেন্দ্র প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের হাজার হাজার একর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। হার্ডিঞ্জ ব্রীজের ১৫ টি পিলারের মধ্যে ১০ টি পিলারই শুকনো চরে। যে ৫ টি পিলার পানিতে রয়েছে তার আশপাশে মানুষ চাষাবাদ করছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর এত নিচে নেমে গেছে যে এ ভাবে চললে ১০ বছর পর এ অঞ্চলে পানি পাওয়া কঠিন হবে। পদ্মার দুইপাড় ও আশপাশের এলাকার আবহাওয়া ও পরিবেশ পাল্টে যাচ্ছে। মরু ভূমির মতো দিনের বেলায় প্রচন্ড গরম আর রাতে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে।

  • 4
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে