রাজশাহীতে নৈশপ্রহরীর চাকরি ছেড়ে তারা মেয়র প্রার্থী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২১; সময়: ১০:২৩ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে নৈশপ্রহরীর চাকরি ছেড়ে তারা মেয়র প্রার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে দুইজন মেয়র প্রার্থী হয়েছেন স্কুলের নৈশপ্রহরী। এদের একজন তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী হয়েছেন নৈশপ্রহরী সাইদুর রহমান। তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মনোনীত মেয়রপ্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

সাইদুর মুণ্ডুমালা পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সাইদুর রহমানের বাড়ি পৌর সদরের মুণ্ডুমালা মহল্লায়। কর্মজীবনে তিনি টোকাই থেকে হাটের কুলিও হয়েছেন। বর্তমানে তিনি মুণ্ডুমালা মহিলা কলেজের নৈশপ্রহরী।

এ নিয়ে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের হোসেন জানান, তানোর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র গোলাম রাব্বানীর ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠে মুণ্ডুমালা পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জায়গা করে নেন সাইদুর। এমন একজন ব্যক্তি মেয়রপদে মনোনয়নপত্র দাখিল করায় ওই এলাকার পাড়া-মহল্লায় মুখরোচক আলোচনা ও সমলোচনা বইছে।

আওয়ামী লীগকর্মী আরিফ হোসেন বলেন, সম্প্রতি কাঁকনহাট পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল মজিদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তার মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। কিন্তু বিজয়ের উজ্জ্বল সম্ভানা থাকার পরও প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদের সম্মান, দল এবং নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে স্বেচ্ছায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন তিনি। অথচ একজন নৈশপ্রহরী কি জাদুর বলে এমন দুঃসাহস দেখান? আমাদের বোধগম্য নয় বলে জানান আরিফ।

মুণ্ডুমালা পৌরসভার নাগরিক জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শরীফ খান বলেন, আমিও মেয়রপ্রার্থী ছিলাম। কিন্তু দল মনোনয়ন না দেয়ায় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছি। তবে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সাইদুর রহমান নির্বাচন করলে আমরা মেনে নেব না। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে সাইদুর প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য আমরা হাইকমান্ডের কাছে অভিযোগ জানাব।

তবে এ ব্যাপারে সাইদুর রহমান বলেন, এটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। দলের মনোনয়ন তার দরকার নেই। তার প্রতি জনগণের আস্থা আছে। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে কোনো বাধা নেই বলে দম্ভোক্তি করেন সাইদুর।

সূত্র জানায়, সাইদুর কলেজের নৈশপ্রহরী। তিনি কর্মস্থলে অব্যাহতি না দিয়েই সপদে থেকে মেয়রপদে নির্বাচন করা নিয়ম-বহির্ভূত। এ নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীর মাঝে সমালোচনা ও ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, মুণ্ডুমালা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়রপদে মনোনয়ন প্রত্যাশা করে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের প্রায় ১০ দলীয় প্রার্থী মাঠে নামেন। তবে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত মুণ্ডুমালা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বারবার নির্বাচিত কাউন্সিলর আমির হোসেন আমিনকে মেয়রপদে মনোনয়নপত্র দেয়া হয়।

আর বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন ফিরোজ কবির। তিনি তানোর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য। আগামী ১১ জানুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। এই নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ জানুয়ারি।

এদিকে, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরীর চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন কামাল হোসেন (৩০) নামের এক যুবক। রাজশাহীর বাগমারার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অন্য তিনজন প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ছোটবেলার ইচ্ছা পূরণের জন্য তিনি নির্বাচন করছেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর মেয়র প্রার্থী হওয়া নিয়ে এলাকায় বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যতসংখ্যক ভোটারদের সমর্থন প্রয়োজন, এর সঠিক প্রমাণসহ কামাল হোসেন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

কামাল হোসেন ভবানীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী হিসেবে নিয়োগ পেয়ে কয়েক বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিদ্যালয়ের পাশেই তাঁর বাড়ি। এবারের পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকে নিজেকে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালান। ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে এলাকার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে ফেস্টুনও টাঙিয়েছিলেন। তবে স্থানীয় লোকজনের ধারণা ছিল তাঁর দৌড় ওই পর্যন্তই। তবে কামাল হোসেন থেমে যাননি।

ছোটবেলা থেকে জনসেবা করার ইচ্ছা। নির্বাচিত হলে রাস্তাঘাটের উন্নয়নের পাশাপাশি একটি শিশুসদন, বৃদ্ধাশ্রম স্থাপন ও পৌরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে উদ্যোগ নেবেন। ভবানীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে ১৬ জানুয়ারি। গত ১৫ ডিসেম্বর কামাল হোসেন নৈশপ্রহরীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। বর্তমানে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। পৌর এলাকায় নিজের নারকেলগাছ প্রতীকের পোস্টার টাঙানো ছাড়াও একাই ভোট চাইতে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন।

কামাল হোসেন বলেন, ছোটবেলা থেকে জনসেবা করার ইচ্ছা তাঁর। এ জন্য চাকরি ছেড়ে পৌর নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন। সাড়া কেমন পাচ্ছেন? কামাল বলেন, তাঁর প্রতি ভোটারদের সমর্থন আছে। সাড়াও বেশ ভালো পাচ্ছেন। সুষ্ঠু ভোট হলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। আর নির্বাচিত হলে পৌরসভার রাস্তাঘাটের উন্নয়নের পাশাপাশি একটি শিশুসদন, বৃদ্ধাশ্রম স্থাপন ও পৌরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন।

কামাল হোসেনের মেয়র প্রার্থী হওয়া নিয়ে রাজশাহী জেলা সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি আহমেদ সফিউদ্দিন বলেন, ভোটাররা চাইলে অবশ্যই তিনি প্রার্থী হতে পারেন। এটি সমালোচনার কোনো বিষয় নয়।

আর স্থানীয় কয়েকজন ভোটার বলেন, বিভিন্ন সময় এলাকায় ব্যানার ও ফেস্টুন টাঙানোর পর তাঁরা ভাবছিলেন কামাল নিজের প্রচারের জন্য এসব করছেন। চাকরি ছেড়ে মেয়র পদে নির্বাচন করবেন, তা ভাবতে পারেননি তাঁরা। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে নেমে তিনি সবাইকে চমক দিয়েছেন।

  • 295
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে