চারঘাটে পোস্টার মারা নিয়ে আ. লীগ বিএনপি সংঘর্ষ আহত ১১

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২১; সময়: ৮:১৬ অপরাহ্ণ |
চারঘাটে পোস্টার মারা নিয়ে আ. লীগ বিএনপি সংঘর্ষ আহত ১১

নিজস্ব প্রতিবেদক, চারঘাট : আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি চারঘাটে অনুষ্ঠেয় পৌরসভা নির্বাচনের পোস্টার মারাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। যাতে ছবি তুলতে না পারে এ জন্য আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা চারঘাট প্রেসক্লাবেও হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজশাহী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়। হামলায় চারঘাট উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ বর্তমান মেয়র ও বিএনপির প্রার্থীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মেয়রের আত্মীয়স্বজনসহ চার বিএনপি সমর্থককে আটক করেছে। সংঘর্ষের পর চারঘাটে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

আহত উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আল মামুন তুষারকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আল মামুন তুষার বলেন, তিনি বিএনপির কর্মীদের ছুড়ে মারা দুইদিকে ধারওয়ালা এক ধরনের অস্ত্রের আঘাতে তিনি আহত হয়েছেন।

তার ডান হাতের গুরুতর জখম হয়েছেন বলে তিনি বলেন, এই অস্ত্র পেটে লাগলেও পেটের মধ্যে ঢুকে যাবে। বিএনপির কর্মীরা ককটেল ও গুলি ছুড়েছে বলে তিনি দাবি করেন। বিএনপি কর্মীদের হামলায় তাদের মোট চারজন আহত হয়েছেন। তিনি ছাড়া অন্যেরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আল মামুন বলেন, পুলিশ তাদের নিষেধ করেছে, বিএনপিকেও নিষেধ করেছে কিন্তুু বিএনপির কাছ থেকে পুলিশ সরার সঙ্গে সঙ্গে তারা হামলা চালিয়েছে।

সংঘর্ষের পরে পুলিশ বর্তমান মেয়র ও বিএনপির প্রার্থী জাকিরুল ইসলাম বিকলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার ফুফাত ভাইয়ের ছেলে জিয়ারুল ও জিনারুল, বোনের ছেলে কমল ও তার ব্যক্তিগত সহকারী (বেসরকরি) শামীমকে আটক করেছে। জাকিরুল ইসলাম দাবি করেন তার সাতজন কর্মী আওয়ামী লীগের হামলায় আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত একজনকে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। অন্যেরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

তিনি বলেন, গত শুক্রবার প্রতীক বরাদ্দের পর শনিবার সকালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পোস্টার লাগানোর জন্য কর্মী সমর্থকদের ডেকেছিলেন। তারা যাওয়ার আগেই উৎসাহী কয়েকজন ছেলে পোস্টার লাগাতে চলে যায়। আওয়ামী লীগের লোকজন তাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। এরপরে তারা তাদের ওপরে শতখানেক রাম দা, হাসুয়া ও লাঠি নিয়ে হামলা চালায়। ককটেল ছুড়ে মারে।

পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার চারঘাট পৌরসভা নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ করা হয়। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পোস্টার লাগানো নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত হয়। এরপর বিএনপি সমর্থকেরা দেশিয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে চারঘাট বাজারের পূর্ব দিকে জড়ো হয়। অপরদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় থেকে নৌকার প্রার্থী একরামুল হকের সমর্থকেরা একইভাবে হাসুয়া, রামদা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে চারঘাট বাজারের চৌরাস্তার মোড়ে বের হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাদের সশস্ত্র মহড়ায় চারঘাট বাজারের লোকজন দোকানপাট বন্ধ করে পালাতে শুরু করে। চারঘাট হাটবার হওয়ার কারণে হাটুরেরাও হামলার ভয়ে ছুটে পালাতে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই চারঘাট বাজার এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়। দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা শুরু হয়ে যায়। প্রায় আধঘণ্টা ব্যাপী তাদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে।

চারঘাট প্রেসক্লাবে সাংবাদিকেরা অভিযোগ করেন ছবি তোলা হচ্ছে এই অভিযোগে আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা প্রেসক্লাবে ইট ছুঁড়ে মারেন। তারা ভেতরে ঢুকে যাওয়ার কারণে রক্ষা পান। এবিষয়ে চারঘাট প্রেসক্লাবের সভাপতি এস এম মোজাম্মেল হক ও উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোজাম্মেল হকসহ সকল সাংবাদিকবৃন্দ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়। প্রায় এক ঘণ্টা পরে রাজশাহী থেকে রিজার্ভ ফোর্স ঘটনাস্থলে পৌঁছে।

সংঘর্ষ চলাকালে চারঘাট থানার পুলিশ কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। এ ব্যাপারে চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তার থানার সব পুলিশ নির্বাচনী দায়িত্বে বাইরে গেছেন। তিনিসহ থানায় মাত্র সাতজন সদস্য ছিলেন। তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। সংঘর্ষের সময় ককটেল বিস্ফোরণের কথা তিনি স্বীকার করেন। তবে কোন পক্ষ ককটেল ছুঁড়েছে, হাঙ্গামার মধ্যে বুঝতে পারেননি। তবে গুলি হয়নি। তিনি বলেন, বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকেরাই সংঘবদ্ধ হয়ে হামলা করেছে। তিনি বলেন, চার বিএনপি সমর্থককে আটক করা হয়েছে। এব্যাপারে মামলা হবে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

 

  • 111
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে