রাজশাহীর তিন পৌরসভায় শান্তিপূর্ণ ভোট

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১; সময়: ৭:২২ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীর তিন পৌরসভায় শান্তিপূর্ণ ভোট

নিজস্ব প্রতিবেদক : চতুর্থ ধাপে রোববার রাজশাহীর চারটি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি পৌরসভায় ভোটের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখা গেছে। ভোটাররা স্বচ্ছন্দ্যে ভোট দিয়েছেন। তবে একটি পৌর এলাকায় গোলযোগ দেখা দিয়েছে। এখানে ভোটকেন্দ্র দখল, জাল ভোট এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।

রোববার রাজশাহীর যেসব পৌরসভায় নির্বাচন হয়েছে সেগুলো হলো- গোদাগাড়ী উপজেলার গোদাগাড়ী পৌরসভা, তানোরের তানোর পৌরসভা, পবার নওহাটা পৌরসভা এবং বাগমারার তাহেরপুর পৌরসভা। এর মধ্যে শুধু গোদাগাড়ীতে ভোট হয়েছে ইভিএমে। বাকি তিনটিতে ভোট ছিল ব্যালটে।

নওহাটা পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন তিনজন। এছাড়া গোদাগাড়ীতে চারজন, তানোরে তিনজন এবং তাহেরপুরে দুইজন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। রোববার সকাল থেকেই চার পৌরসভার প্রতিটিতেই ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সকালে নারীদের উপস্থিতি বেশি থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে পুরুষেরও উপস্থিতি বাড়তে থাকে। তানোর, গোদাগাড়ী ও তাহেরপুর পৌরসভায় অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এ তিন পৌরসভায় ভোটারেরা নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তবে তাহেরপুরের বিএনপি প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

তাহেরপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র আবুল কালাম আজাদ কেন্দ্রে কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারদের হাতে হাতে ফুল তুলে দিয়েছেন। ভোটাররা যখন ভোট দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের হচ্ছিলেন তখন কালাম সামনে যাকে পেয়েছেন তার হাতেই ফুল দিয়েছেন। বিশ্ব ভালবাসা দিবস উপলক্ষে তিনি এই ফুল দেন। তাহেরপুরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোট হয়েছে।

তবে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার প্রায় এক ঘন্টা আগে সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকার অভিযোগে ভোট বর্জন করেছেন বিএনপির প্রার্থী আবু নঈম শামসুর রহমান ওরফে মিন্টু। এর আগে তিনি দলবল নিয়ে ভোট দিয়েছেন এবং কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এরপর বেলা পৌনে তিনটায় নির্বাচন পরিচালনার প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে মিন্টু ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, পৌরসভার সকল কেন্দ্র থেকে তাঁর পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। সাতটি কেন্দ্র দখল করা ছাড়াও নৌকার প্রতীকে প্রকাশ্যে সিল মেরে নেওয়া হয়েছে। নৌকায় সিল মারতে ভোটারদের বাধ্য করা হচ্ছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।

তবে তিনি নির্দিষ্ট করে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। নির্বাচনের পরিবেশ না থাকায় তিনি ভোট বর্জন করলেন বলে জানিয়েছেন। শেষ সময়ে ভোট বর্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, আগেই বর্জন করেছেন, তবে শেষ সময়ে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অনিয়মের ব্যাপারে কাউকে কোনো অভিযোগ করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, এখন লিখিত ভাবে জানানো হবে।

তাহেরপুরের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, বিএনপি বা অন্য প্রার্থীর পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বাক্কার মৃধা বলেন, নিজের ভরাডুবি নিশ্চিত জেনেই শেষ সময়ে ভোট বর্জন করলেন বিএনপি প্রার্থী।

এদিকে পবার নওহাটা পৌরসভায় বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্র দখলে নেয়ার ঘটেছে। নৌকার প্রার্থীর সমর্থকেরা ভোটকেন্দ্র দখলে নিয়ে জাল ভোট দিয়েছেন। বেলা ১১টার দিকে বাগধানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করতে যান ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর এ সমর্থকদের তখন অন্য প্রার্থীর সমর্থক এবং স্থানীয়রা ধাওয়া দেন। এর ভেতরে পড়ে ইটের আঘাতে আহত হন বাংলাভিশনের রাজশাহীর ক্যামেরাপার্সন জসিম উদ্দিন। দুপক্ষের আরও কয়েকজন আহত হন। বাধ্য হয়ে ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলে আধাঘণ্টা পর ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

এই কেন্দ্র থেকে অন্তত ১১ জনকে আটক করার খবর পাওয়া গেছে। দুপুরের পর নওহাটা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার সেজে জাল ভোট দিতে যান ছাত্রলীগের কর্মীরা। ওই কেন্দ্র থেকে জাল ভোট দেয়ার চেষ্টার অভিযোগে তিনজনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেন স্থানীয়রা। নওহাটা মডেল হাইস্কুল ভোটকেন্দ্রে নৌকার সমর্থকদের বুথের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তারা ভোটারদের তাদের সামনেই নৌকায় ভোট দেয়াচ্ছিলেন। মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীদের কেন্দ্রের ভেতরে থাকলেও তাদের চুপচাপ বসে থাকতে দেখা গেছে।

নওহাটার আরেকটি কেন্দ্রে ভোট শেষ হওয়ার আগেই স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল বারী খানের এজেন্টের স্বাক্ষর নিয়ে নেন প্রিজাইডিং অফিসার। এ সময় তাকে হাতেনাতে ধরেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। বিকালে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তিনি আটক অবস্থায় ছিলেন।

সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, চারটি পৌরসভার মধ্যে তিনটিতে অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে। সেখানে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে নওহাটা পৌরসভায় বিচ্ছিন্ন ছোট-খাট দু’একটি ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। ফলে ভোটারেরা তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে