তবুও কোটি টাকার জমি জালিয়াত চক্রের দখলে

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২১; সময়: ৩:৪৫ অপরাহ্ণ |
তবুও কোটি টাকার জমি জালিয়াত চক্রের দখলে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ফরেনসিক পরীক্ষা ও আদালতের রায়ে দলিল জাল প্রমাণিত হওয়ার পরও কোটি টাকা মূল্যের জমিটি দখলে রেখেছে আব্দুল বারী। ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী একটি মহল এ দখলদারকে সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

দলিল ও নথিপত্র জালের অভিযোগে জালিয়াত বারী চক্রের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলারও আদেশ দেন রাজশাহীর এডিসির রাজস্ব আদালত। তাতেও জমির দখল ছাড়েনি বারী। আদালতের আদেশ গোপন করে জমির প্রকৃত মালিকের বিরুদ্ধে সম্প্রতি এডিএম আদালতে ফৌজদারি মামলা করেন বারী। বারীর বাড়ি নগরীর সিরোইলে। অসহায় লাকী বেগম জমি উদ্ধার করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন।

এদিকে নথিপত্রে ও আদালতের রায়ে প্রমাণিত হয় নগরীর সপুরা এলাকার কোটি টাকা মূল্যের পাঁচ কাঠা জমির প্রকৃত মালিক লাকী বেগম। জমিটি তিনি আজগর হোসেনের কাছে বিক্রির জন্য চুক্তিবদ্ধ হন টাকার প্রয়োজনে। বারী আদালতের রায়ের তথ্য গোপন করে সম্প্রতি রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের নামেই করেছেন ফৌজদারি মামলা। এর ফলে প্রকৃত মালিক লাকী পড়েছেন হয়রানিতে।

একটি দখলবাজ চক্র বারীকে সহায়তা দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, তারাই জমির মালিক। আর জালিয়াত বারী তাদের বিরুদ্ধেই আইনশৃঙ্খলা অবনতির অভিযোগে মিথ্যা মামলা করেছেন। এটা বারী চক্রের নতুন কৌশল বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগী ও আদালতের রায় বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, রাজশাহীর হেতেমখাঁ মহল্লার সাপিনা বেগম সপুরা এলাকার পাঁচ কাঠা জমি ১৯৭৫ সালের ২২ এপ্রিল শেখ হারুন ও শেখ নজিরের কাছ থেকে কেনেন। কেনার পর খারিজ শেষে নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে আসছিলেন। পরবর্তীতে সাপিনা বেগম তার নাতনি লাকী বেগমকে দলিলসমূলে জমির মালিকানা দেন। লাকী বেগম টাকার প্রয়োজনে নানির কাছ থেকে পাওয়া এ জমি আজগর হোসেনের কাছে বিক্রির জন্য সম্প্রতি বায়না চুক্তি করেন।

এদিকে নগরীর শিরোইল এলাকার আবদুল বারী আসল মালিক সাপিনা বেগমের টিপসই জাল করে ও তার অজ্ঞাতে বোয়ালিয়া এসি ল্যান্ড আদালতে একটি অনাপত্তিপত্র (না দাবীনামা) দাখিল করেন এ বলে যে, সাপিনা বেগম শেখ হারুন ও শেখ নজিরের কাছ থেকে জমিটি কেনেননি। ফলে এসি ল্যান্ড শুনানি শেষে জমির মালিক সাপিনা বেগমের মালিকানা স্বত্ব ও খারিজ বাতিল করেন।

অভিযোগে আরও জানা যায়, দখলদার বারী এসি ল্যান্ড আদালতের সার্ভেয়ার আবু সায়েমসহ কয়েকজন কর্মচারীদের হাত করে গোপনে এ রায়টি হাসিল করেন। পরে জমিটি একদল সন্ত্রাসী দিয়ে দখল করে নেন। নথিপত্রে দেখা গেছে, বারী একদিকে ক্রেতা সাপিনা বেগমের স্বাক্ষর ও টিপসই জালের মাধ্যমে না-দাবিনামা দাখিল করে গোপনে রায় হাসিল করেন।

অন্যদিকে জমিটির প্রকৃত মালিক শেখ হারুন ও শেখ নজিরের কাছ থেকে ২০০৬ সালের ৯ নভেম্বর কিনেছেন বলে একটি জাল দলিল করে নিজে কিনেছেন বলে দাবি করছেন। বারী নজির শেখ ও শেখ হারুনের কাছ থেকে ২০০৬ সালে জমিটি ক্রয় দেখালেও নজির শেখ ১৯৯২ সালের ১৪ নভেম্বর মারা যান। নথিপত্র দেখে এডিসি রাজস্বের আদালত বিষয়টি নিশ্চিত হন ও বারীর মালিকানা বাতিল করেন।

অন্যদিকে কাগজপত্রের নকল তুলে সাপিনা পরে জানতে পারেন তার টিপসই জাল করে তার অজ্ঞাতেই এসি ল্যান্ড অফিসে তার নামে না দাবিনামা দিয়ে একতরফা রায় নিয়েছেন বারী। ফলে এসি ল্যান্ডের রায় বাতিলসহ সাপিনা বেগম রাজশাহীর এডিসি রাজস্বের আদালতে আপিল ও সংশোধনী মামলা করেন। আদালত সাপিনা বেগমের সই স্বাক্ষর ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ দেন। এতে সাপিনা বেগমের সই স্বাক্ষর ও তার না দাবিনামাও জাল বলে প্রমাণিত হয়।

এরপর এডিসি রাজস্ব আদালত জমির প্রকৃত মালিক সাপিনা বেগম বলে রায় দেন। পাশাপাশি দলিল নথিপত্র ও টিপসই জালের অভিযোগে বারী গংদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগে মামলার আদেশ দেন। এছাড়া বারী যাদের কাছ থেকে জমিটি কিনেছেন বলে যে দলিল আদালতে পেশ করেন তাও জাল বলে প্রমাণিত হয়। টিপসই ও স্বাক্ষর জালের অভিযোগে বারী ও তাকে সহযোগিতাকারী এসি ল্যান্ড অফিসের সার্ভেয়ার আবু সায়েমকে বরখাস্তসহ তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার আদেশ দেওয়া হয়।

অভিযোগে আরও জানা গেছে, এরপরও আবদুল বারী জমির দখল ছাড়েননি। ফলে নানি সাপিনা বেগমের কাছ থেকে পাওয়া বর্তমান মালিক লাকী বেগম জমিটির দখল পাননি। লাকী বেগমের কাছ থেকে জমিটি কেনার জন্য বায়না চুক্তিকারী আজগর আলী টাকা বিনিয়োগ করে এখন বিচারের আশায় ঘুরছেন।

  • 154
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে