রাজশাহীতে আ.লীগের সংবর্ধনায় দলীয় এমপিকে বাধা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১; সময়: ১০:০৬ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে আ.লীগের সংবর্ধনায় দলীয় এমপিকে বাধা

নিজস্ব প্রতিবেদক, দুর্গাপুর : রাজশাহীর দুর্গাপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যেতে দলীয় সংসদ সদস্যকে বাধা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে দুর্গাপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন। তার উপস্থিতিতে স্থানীয় সাংসদ ডা. মনসুর রহমানকে মঞ্চে উঠতে বাধা দেয়া হয়। এর পর তিনি সেখান থেকে চলে যান।

বিশিষ্টজনরা বলছেন আগামী ২৮ মার্চ দুর্গাপুর পৌরসভার নির্বাচন। নির্বাচনী প্রচারনা চলাকালীন নির্বাচনী এলাকার মধ্যে দলীয় নেতাদের সংবর্ধনা দেয়ার নামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লংঘন। এছাড়া করোনাকালীন এই সময়ে গণজমায়েতের উপর সরকারি বিধিনিষেধ থাকলেও মানা হয়নি তা। কারো মুখেই ছিলোনা মাস্ক। ছিলোনা সামাজিক দুরত্ব।

এদিকে, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রফেসর ডা. মনসুর রহমান ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চাইলেও তাকে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে সাংসদ ডা. মনসুর রহমান সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মঞ্চে না উঠে নিচ থেকেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামালকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে দুর্গাপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে সংবর্ধনা দেয়ার নামে সংবর্ধণা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, বাগমারা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি জাকিরুল ইসলাম সান্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এ্যাডভোকেট ইব্রাহিম আলী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মানজাল ও দপ্তর সম্পাদক প্রদ্যুৎ কুমার সরকার সহ জেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এছাড়া সংবর্ধণা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ মনোনীত দলীয় মেয়র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন নিজেও উপস্থিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকেই একাধিক মাইক ব্যবহার করে দুর্গাপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সংবর্ধণা অনুষ্ঠান শুরু হয়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হওয়ার সাথে সাথে দলীয় নেতাকর্মীরা মিছিল শোডাউন নিয়ে সংবর্ধণা অনুষ্ঠানে আসতে থাকে। এক সময় পুরো রাস্তাজুড়ে যানজট দেখা দেয়। রাস্তা ফাঁকা করতে পুলিশকেও বেগ পেতে হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা অনুষ্ঠানে যোগদেন। সন্ধ্যার একটু আগে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এস এম কামাল আসেন। পুরো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সহ অন্যান্য বক্তারা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন। তাদের এমন বক্তব্যে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের ভীতির সঞ্চার হয়েছে।

বিশিষ্টজনরা বলছেন, সংবর্ধণা অনুষ্ঠানের নামে নির্বাচনী এলাকার মধ্যে প্রকাশ্যে সমাবেশ করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়া নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লংঘন। একই মঞ্চে দলীয় মেয়র প্রার্থীকেও রাখা হয়েছে। এতে করে নির্বাচনী আচরণবিধি যে লংঘন হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। নির্বাচনের মাত্র ৩ দিন আগে সংবর্ধণা অনুষ্ঠানের নামে এ ধরনের নির্বাচনী সমাবেশই বলে দেয় নির্বাচন কতটুকু প্রভাবমুক্ত হবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মনসুর রহমান বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা এ ধরনের সংবর্ধণা অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেও তাকে আগে থেকে কেউ জানায়নি। এমনকি তাকে দাওয়াত দেয়াও হয়নি। এ কারণে তিনি ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যেতে না চাইলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক তাকে নিজে থেকে ডেকে নিয়ে যান।

তিনি বলেন, চারঘাটে নির্বাচনী প্রচারনা শেষে সন্ধ্যার একটু আগে এস এম কামাল দুর্গাপুরে পৌছালে তার সাথে ও তার ডাকে আমিও সংবর্ধণা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাই। কিন্তু মঞ্চে উঠার আগেই জেলা সাবেক সাংসদের ছেলে বদরুল ইসলাম তাপস সরাসরি আমার সামনে এসে আমাকে ঘিরে ধরেন এবং মঞ্চে উঠতে বাধা দেন। কেন্দ্রীয় নেতার সামনে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর কারনে আমি বিব্রত হই। পরে আমার নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে উঠলে বিশৃংখলা এড়াতে আমি অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করি।

সাংসদ ডা. মনসুর রহমান অভিযোগ করেন, পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে সংবর্ধণা অনুষ্ঠানের মঞ্চে উঠতে দেয়া হয়নি। যিনি এ কাজটি করেছেন তিনি আমার ছেলের বয়সী। তাকে আমি অত্যন্ত স্নেহ করি। কিন্তু তিনি কেন্দ্রীয় নেতার সামনে যে ঘটনাটি ঘটালেন সে বিষয়ে আমি কেন্দ্রীয় নেতাদের বিষয়টি জানাবো।

এদিকে, পৌরসভা নির্বাচনী আচরন বিধিমালার এস আর ও নং ৩৪৬-আইন/২০১৫ স্থানীয় সরকার পৌরসভা) আইন ২০০৯ (২০০৯ সনের ৫৮ নং আইন) এর ধারা ১২০ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (খ) ধারা ২১ এর সহিত পঠিতব্য এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নির্বাচন কমিশন যে বিধিমালা প্রণয়ন করে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে তার ৭ নম্বর ধারায় সভা সমিতি অনুষ্ঠান সংক্রান্ত বাধা নিষেধ বিষয়ে বলা হয়েছে বোন প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল কিংবা উহার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাহাদের পক্ষে অন্য কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান বোঝায়।

এই ধারার (ক) উপ-ধারায় বলা হয়েছে পথসভা ও ঘরোয়া সভা ব্যতীত কোন জনসভা বা শোভাযাত্রা করিতে পারিবেনা।এই ধারার (খ) উপ-ধারায় বলা হয়েছে পথসভা ও ঘরোয়া সভা করতে চাইলে প্রস্তাবিত সময়ের ২৪ ঘন্টা পূর্বে স্থান এবং সময় সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে। এছাড়া জনগণের চলাচলের বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে এইরুপ কোন সড়কে পথসভা করিতে পারিবেনা বা তদ্দুশ্যে কোন মঞ্চ তৈরী করিতে পারিবেনা।

পৌরসভা নির্বাচনী আচরণ বিধিমালার ১৩ নম্বর ধারায় যানবাহন ব্যবহার সংক্রান্ত বাধা নিষেধ বিসয়ে বলা হয়েছে কোন প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল কিংবা উহার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাহাদের পক্ষে অন্য কোন ব্যাক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান বোঝায়। এই ধারার (ক) উপ-ধারায় বলা হয়েছে কোন ট্রাক, বাস, মোটর সাইকেল, নৌ-যান, ট্রেন কিংবা অন্য কোন যান্ত্রিক যানবাহন সহকারে মিছিল বা মশাল মিছিল বা অন্য কোন প্রকারের মিছিল বাহির করিতে পারিবেন না কিংবা কোনরুপ শোডাউন করিতে পারিবে না।

১৮ ধারায় বলা হয়েছে উস্কানিমূলক বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান করিতে পারিবে না। ২১ ধারায় বলা হয়েছে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাহার পক্ষে কোন রাজনৈতিক দল বা কোন ব্যাক্তি বা তাহাদের পক্ষে কোন ব্যাক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান একটি ওয়ার্ডে একই সঙ্গে পথসভা জন্য ১টি এবং নির্বাচনী প্রচারনার জন্য ১টির অধিক মাইক্রোফোন বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী অন্যবিধ যন্ত্র ব্যবহার করিতে পারিবেন না।

এ ব্যাপারে কথা বলা হলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের ফলে নির্বাচনী আচরন বিধি লংঘন করা হয়েছে বলে স্বীকার করলেও কি ব্যবস্থা নিবেন তা বলেননি। তিনি এ বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে বলেন।

  • 198
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে