খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুর (রঃ) ১০৬তম ওরশ শুরু ১ মার্চ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১; সময়: ৪:৫৮ অপরাহ্ণ |
খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুর (রঃ) ১০৬তম ওরশ শুরু ১ মার্চ

স্বপন মির্জা, সিরাজগঞ্জ : উপমহাদেশের প্রখ্যাত ধর্মীয় নেতা, সুফী সাধক, ওলিয়ে-কামেল সিরাজগঞ্জের হযরত খাজা বাবা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রঃ)-এর ২০২১ সালের ৩দিন ব্যাপী বাৎসরিক ওরশ আগামী ১৬ ফাল্গুন ১ মার্চ সোমবার শুরু হবে। এজন্য দরবার শরীফ কর্তৃপক্ষ গ্রহন করেছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। সরকারের করোনার বিস্তার ঠেকাতে যে নির্দেশনা রয়েছে তা পুরোপুরী অনুসরণ করেই হবে ঐতিহ্যের ১০৬ তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান। তবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে অনুসারীদের মধ্যে নারী, বৃদ্ধ, শিশু ও অসুস্থ্য জাকের ভাই-ভগ্নীদের অনুষ্ঠানে না আসার জন্য আয়োজকরা নিদের্শ দিয়েছে। এছাড়া কর্তৃপক্ষ বিশ্ব শান্তি মঞ্জিল এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফের ৫টি প্রবেশ পথ থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিস্কারের পর প্রত্যেক ভক্তদের মাঝে বিতরন করবে মাস্ক।

জানা যায়, ভারতের প্রখ্যাত ওলিয়ে কামেল খাজা সৈয়দ ওয়াজেদ আলী (রঃ) এর শান্তি ও আদর্শের পথে ইসলাম প্রচারে ভোগ বিলাসী জীবনের বিরোধী খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (রঃ) ইসলাম ও সুফীবাদের দর্শন ভারতের আসাম সহ সারা বাংলায় প্রচারে খেলাফত প্রাপ্ত হন। কিছুদিন অতিবাহিত হলে নিজ ভুম সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে খানকা স্থাপন করে শুরু করেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর শান্তির তরিকা প্রচার ও সুফী বাদের বিস্তার কাজ। এরপর এনায়েতপুরেই তিনি বিয়ে করে শুরু করেন সংসার জীবন। জনক হন ৮ কন্যা এবং ৫ ছেলে সন্তানের।

এদিকে ১৯১৫ সালে তার আত্বীয় ও অনুসারীদের পরামর্শ ও সহযোগীতায় এনায়েতপুর দরবারে শুরু করেন ওরশ শরীফ। এতে সারা দেশ থেকেই তার ভক্ত মুরিদরা এখানে সমবেত হতে থাকেন। যা ধীরে-ধীরে অগনিত ভক্তদের আগমনে মহাসমাবেশে রুপ নেয়। এরই এক পর্যায়ে তার সংস্পর্শে এসে ১২শ পীর আওলীয়া খেলাফত প্রাপ্ত হন। এর মধ্যে ফরিদপুরের সদরপুরের প্রখ্যাত আটরশি পীর, চন্দ্রপাড়া পীর, ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ পীর, টাঙ্গাইল প্যারাডাইস পাড়া, কুমিল্লার ইসলামাবাদ, ঢাকার শ্যামলী বাগী, মাতুয়াইল, জামালপুরের সাধুরপাড়া মোসলেম নগর, যশোরের ঘুনী দরবার শরীফ, ভারতের আসামের গণি খলিফার দরবার শরীফ অন্যতম। তারা একই ভাবে খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রঃ) সুফী বাদের আদর্শ ও ইসলাম প্রচার করছেন। এরপর মহান মুর্শিদ খাজা বাবা ইউনুছ আলী (রঃ) বাংলা ১৩৫৮ সনের ১৮ ফাল্গুন পরলোক গমন করেন।

অন্যান্য বছর তার দরবারে প্রতি ইংরেজী বছরের শুরুতেই ওরশ হলেও এবার ১০৬ তম ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হবে ৬৯ তম ইন্তেকাল দিবসে। তবে ৩দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু ২ দিন আগে সোমবার হতে। এ লক্ষে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহন করেছে এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফ কর্তৃপক্ষ। করোনা কালের জন্য অনুষ্ঠানের কলেবর সংক্ষিপ্ত করা হলেও এবার সমগ্র দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে লাখ-লাখ ভক্তবৃন্দের আগমন ঘঠবে। তাই এখন চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি।

বিশ্ব শান্তি মঞ্জিল সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফকে সাজানো হচ্ছে অনন্য সাজে নানা ফুলের সৌরভে। এনায়েতপুর-সিরাজগঞ্জ সড়কের মন্ডলপাড়া, খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল গেইটে সহ মাজারে প্রবেশ পথে করা হয়েছে ৩টি দৃষ্টিনন্দন তোরণ ও দরবারে প্রবেশ মুখে প্রায় ১ কিলোমটার জুড়ে আলোকসজ্জা। করা হচ্ছে ওজু-গোসলের জন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, খাবার মাঠ সংস্কার। সু-বিশাল খাবার মাঠটিতে একসাথে এক বৈঠকে ১৫ হাজার মানুষ খেতে পারবে। এখানে ২০ ঘন্টাই থাকবে খাবারের সব আয়োজন।

এছাড়া পাকশালার প্রসস্থতাও বাড়ানো হয়েছে। ৪টি পাকশালায় ২০০টির মত চুলায় চলবে সর্বক্ষন রান্নার কাজ। এতে ৫ শতাধীক বাবুর্চি স্বেচ্ছাশ্রমে রান্নার কাজে নিয়োজিত থাকবে প্রতিক্ষন। খাবার পরিবেশনে অর্ধ লক্ষার্ধীক মাটির থালার সানকি রাখা হয়েছে প্রস্তুত। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ হতেও গ্রহন করা হয়েছে নানা নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এছাড়া দরবারের ২ শতাধীক চৌকষ মোজাদেদ্দীয়া আনছার সহ অন্তত ১০ হাজারের মত মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে সকল কাজে নিয়োজিত থাকবে।

তবে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে করোনার বিস্তার ঠেকাতে এনায়েতপুর পাক দরবার শরীফের ৫টি প্রবেশ পথে আগত সকল ভক্তদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিস্কারের পর প্রত্যেকের মাঝে বিতরন করবে মাস্ক বলে জানালেন কর্তৃপক্ষের মুরাদ আহমেদ খান, পেশ ইমাম মাওঃ আব্দুল আওয়াল, আনিসুর রহমান কমান্ডার ও মাহফুজুর রহমান বাবলু। তারা জানান, মিলাদ-দোয়া মহাফিল, হামদ-নাত, গজল, জিকির-আজগার, ধর্মীয় আলোচনার এই ওরশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে ১০টি বিশেষ নির্দেশনা গ্রহন করা হয়েছে। আয়োজন ছোট করার পাশাপাশি মাস্ক পরিধান ও হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার ছাড়া কাউকে দরবারে প্রবেশ করতে দেয়া হবেনা। এজন্য আপাতত খাজা এনায়েতপুরী (রঃ) এর আওলাদগনের পক্ষ হতে সোয়া লাখ মাস্ক সহায়তা পেয়েছি। এদিকে এবার নারী, বৃদ্ধ, শিশু ও অসুস্থ্যদের ওরশে আসা নিষেধ করা হয়েছে। আশা করছি অতীতের ধারাবাহিকতায় সকলের সহযোগীতায় এবারের ওরশ শরীফ ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে।

আগামী ১৮ ফাল্গুন ৩ মার্চ বুধবার সকাল ৯টায় আখেরী মোনাজাতে দরবার শরীফের বর্তমান গদ্দিনিশীন হুজুর পাক হযরত খাজা কামাল উদ্দিন নুহু মিয়ার মোনাজাত পরিচালনার বিশ্ব মানবতার মঙ্গল কামনা করে এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটবে।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে