চীনের এই সন্ন্যাসীরা উড়তেও পারেন

প্রকাশিত: ২৯-০৩-২০২১, সময়: ১৬:০৬ |

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : মার্শাল আর্ট আত্মরক্ষার অন্যতম পদ্ধতি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে চীনারাই কুংফু, ক্যারাতে বেশি ওস্তাদ। যদিও সিনেমার মাধ্যমে চীনাদের এই ঐতিহ্য সারাবিশ্বে পরিচিতি লাভ করে। চীনের জনপ্রিয় মার্শাল আর্ট কুংফু। সারা বিশ্বে বিভিন্ন রূপে কুংফু-র চর্চা চলে। দ্রুততার সঙ্গে কৌশলগত মোকাবিলার জন্য এই মার্শাল আর্ট সারা বিশ্বে জনপ্রিয়।

তবে যারা মার্শাল আর্ট নিয়ে খোঁজখবর রাখেন, তাদের কাছে ‘শাওলিন কুংফু’ নামটি সবচেয়ে বেশি রোমাঞ্চকর। কারণ তামাম দুনিয়ার মার্শাল আর্টের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হলো শাওলিন কুংফু। এই মার্শাল আর্ট শেখানোর জন্য সারা বিশ্বে চীনের শাওলিনের বৌদ্ধমঠ খুবই জনপ্রিয়। বৈচিত্রের পাশাপাশি কঠিন কুংফু শেখানো হয় এই মঠে। মঠের নামটি হয়েছে এই কুংফুর নাম থেকে।

টিভির পর্দায় কুংফু মাস্টারদের উড়তে দেখা যায়। কিন্তু সত্যিই কি কুংফু-তে অভিজ্ঞরা উড়তে পারেন? হ্যাঁ। শাওলিনের এক বৌদ্ধমঠে সত্যিই ‘উড়তে’ পারেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা। চীনের হেনান প্রদেশের সংস্যাং পাহাড়ের মাথায় রয়েছে গাছে ঘেরা এক বৌদ্ধমঠ। নাম শাওলিন বৌদ্ধমঠ। কুংফুর শিক্ষাকেন্দ্র হিসাবে এই মঠ অত্যন্ত জনপ্রিয়। এখানেই বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা মঠের উপরে আকাশে ‘ওড়েন’! নিজের চোখে সেই দৃশ্য দেখার সুযোগও রযেছে মঠে। যা চাক্ষুষ করতে প্রচুর পর্যটক ভিড় জমান সেখানে।

সবটাই আসলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির খেলা। ওই অত্যাধুনিক বৌদ্ধমঠে উড়ন্ত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের দেখার জন্য আলাদা প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে। নাম শাওলিন ফ্লাইং মঙ্ক থিয়েটার। যার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট প্রকোষ্ঠে বড় টারবাইন ঘুরিয়ে প্রচুর হাওয়া তৈরি করা হয়। যার চাপেই মূলত উড়ে যান তারা। শাওলিন ফ্লাইং মঙ্ক থিয়েটারটির নকশা করা হয়েছে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে। প্রেক্ষাগৃহের আকারটাই পাহাড়ঘেরা গাছের মতো।

প্রেক্ষাগৃহটি একেবারে খোলা আকাশের নীচে। যার মাঝখানে গাছের মতো আকার বিশিষ্ট একটি কাচ এবং স্টিল দিয়ে ঘেরা প্রকোষ্ঠ রয়েছে। এই প্রকোষ্ঠের মধ্যেই টারবাইন ঘুরিয়ে গতিতে হাওয়া তৈরি করা হয়। গাছের আকার বিশিষ্ট প্রকোষ্ঠ ছাড়া চারপাশটিই স্টেডিয়াম। সেখানে বসে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের আকাশে ওড়ার দৃশ্য দেখতে পারেন দর্শক।

স্টেডিয়ামের ওই গাছ প্রকোষ্ঠের নীচে টারবাইন থাকে। তাই দর্শকরা টারবাইন দেখতে পাবেন না। তবে তার ভয়ংকর শব্দ তাদের কানে পৌঁছায়। সবচেয়ে মজার বিষয় হল, শুধু কুংফু মাস্টারই নন, চাইলে পর্যটকেরাও উড়তে পারবেন এই মঠে। কখনো কখনো দর্শকদের জন্যও এই প্রকোষ্ঠ খুলে দেয়া হয়। শাওলিন মঠে প্রচুর পড়ুয়া কুংফু শেখেন। এক বার উপগ্রহ চিত্রে তাদের কুংফু প্রদর্শনের অভিনব ভিডিও ধরা পড়েছিল। অত্যন্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ এবং সুসংসঠিত ভঙ্গিতে কুংফু প্রদর্শনের সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল।

কুংফুর ইতিহাস কিন্তু অনেক পুরনো। ধারণা করা হয়, ২০ শতকে ভারতীয় সন্ন্যাসীদের হাত ধরেই চীনে এই কুংফুর আবির্ভাব। মূলত চীনা যুদ্ধ বিষয়ক শিল্পকলার ক্ষেত্রেই ব্যবহার হতো। তবে অনেকে কুংফু ও কারাতে একই জিনিস মনে করেন। কিন্তু বিষয়টি মোটেও তা নয়। কুংফু হলো চাইনিজ, আর কারাতে জাপানিজ।

কুংফু, কারাতে ছাড়াও জুডো-তাইকোর মতো আরও নানা ধরনের মার্শাল আর্ট রয়েছে। এগুলো সবকিছুর মধ্যে কুংফু একেবারেই স্বকীয়।চীনা কুংফু বা গুংফু শব্দের অর্থ হলো ধর্য ও শক্তি সহকারে কোনো কিছু অধ্যায়ন করা। এটি আত্মরক্ষার পাশাপাশি ধৈর্য এবং শারীরিক সুস্থতাও ধরে রাখে।

উপরে