রাজশাহীর বাজারে আনিসের কোটি টাকার নকল ওষুধ
নিজস্ব প্রতিবেদক : ভেজাল ও মানহীন পণ্য উৎপাদন ও বিপনন বন্ধে যাদের সক্রিয় থাকার কথা তাদের ম্যানেজ করে নকল ওষুধ তৈরী করতেন শফিকুল ইসলাম ওরফে আনিস (৪২)। এ জন্য তিনি রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা থানার ভদ্রা জামালপুর এলাকার নিজ বাড়িতেই গড়ে তুলেছিলেন নকল ওষুধের কারখানা।
বাড়ির একটি ঘরে মেশিন বসিয়ে নামি-দামি কোম্পানির এন্টিবায়েটিক ও গ্যাসেরসহ নানা ধরনের নকল ওষুধ তৈরী করতেন তিনি। গত দুই বছর ধরে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ তৈরী করে তিনি বাজারজাত করেছেন। যা এখনো রয়েছে রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে। এমন তথ্য নিজেই জানিয়েছেন আনিস।
শনিবার দুপুরে আনিসকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হলে তিনি বলেন, এসব অবৈধ ওষুধ তৈরির কাজ চালিয়ে যেতে প্রশাসনের লোকজন ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণির লোকেদের মাসোয়ারা দিতে হতো। প্রতিমাসে তারা মাসহারা নিয়ে যেত।
শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল অভিযান চালায় আনিসের নকুল ওষুধ তৈরীর কারখানায়। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ, জৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, ওষুধ তৈরীর কাঁচামাল ও মেশিন। এ সময় সেই সাথে আটক করা হয় শফিকুল ইসলাম আনিস ছাড়াও তার সহযোগী রবিউল ইসলামকে (৩২)।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কারখানা মালিক আনিস জানায়, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকা হতে কাঁচামাল এনে বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির বহুল ব্যবহৃত নকল ওষুধ তৈরি করতো। পরবর্তীতে তার তৈরি নকল ওষুধ বিভিন্ন ফার্মেসীতে পৌঁছিয়ে দিতো এবং দেশের বিভিন্ন স্থানেও সরবরাহ করতো। বিশেষ করে মফস্বল এলাকায় তাদের ওষুধ বেশী পাঠানো হতো। গত দুই বছরে কোটি টাকার ওষুধ বাজারে ছাড়া হয়েছে।
তিনি জানান, প্রশাসন ও মিডিয়ার লোকজনকে মাসোয়ারা দেয়া হতো। বিশেষ করে ফাঁড়ি পুলিশ ও মিডিয়ার কিছু সাংবাদিককে ২ থেকে ৫ হাজার এবং থানা পুলিশকে ১০ থেকে ১২ হাজার করে দেয়া হতো। তাদের পিছনে প্রতি মাসে ব্যয় হতো ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
রাজশাহী মহনাগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, পুলিশের কাছে গোপন সংবাদ ছিলো রাজশাহীতে নকল ঔষধ তৈরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ভুক্তোভোগীদের মাধ্যমে জানতে পারে বাজারে খোঁজ নিয়ে নকল ঔষধ পাওয়া যায়। পরে কারখানাটির সন্ধায় করে অভিযান চালানো হয়।
পুলিশ কমিশনার বলেন, সেখান থেকে ৭১ লাখ টাকার নকুল ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে। বাজারেও এখন প্রচুর পরিমান নকল ওষুধ রয়েছে। বাজার থেকে সেগুলো উত্তোলনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আর এর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান মহানগর পুলিশ প্রধান।
উদ্ধার হওয়া নকুল ওষুধের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ও সবচেয়ে বেশী রয়েছে, স্কয়ার কোম্পানির নামে নকল সেকলো, এসবি ল্যাবরেটরীজ কোম্পানির বিভিন্ন মোড়কের নকল পাওয়ার-৩০, নাভানা কোম্পানির নকল পিজোফেন, রিলায়েন্স কোম্পানির নকল ইলিক্সিম, রিলাম।
517