উদ্বোধনের অপেক্ষায় পবার মডেল মসজিদ

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২১; সময়: ১১:২৭ অপরাহ্ণ |
উদ্বোধনের অপেক্ষায় পবার মডেল মসজিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২১ সালের ১৭ মার্চের আগেই ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করতে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিল গণপূর্ত। কিন্তু করোনা ভাইরাস আঘাতে পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় উদ্বোধন পিছিয়েছে। তবে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে এই সুবিশাল, সৌন্দর্যমন্ডিত ধর্মীয় যাবতীয় চর্চার এই মসজিদগুলো।

১ম দফায় দেশের ৫০টি মসজিদের মধ্যে রাজশাহী জেলার পবা ও গোদাগাড়ী উপজেলায় নান্দনিক এই মডেল মসজিদের কাজ প্রায় শেষ। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। পবা উপজেলার এই মডেল মসজিদটি উপজেলার প্রাণকেন্দ্র নওহাটা বাজার এলাকায়। এই মসজিদকে ঘিরে রয়েছে নওহাটা পৌরবাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

মসজিদের ৫০ গজ পূর্বে রয়েছে নওহাটা দারুচ্ছুন্নাত কামিল মাদ্রাসা, একেবারে সামনেই রয়েছে নওহাটা মহিলা ডিগ্রী কলেজ, একশো’ গজ দুরে দক্ষিণে নওহাটা পৌরভবন, নওহাটা সরকারি ডিগ্রী কলেজ, নওহাটা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নওহাটা দাখিল মাদ্রাসা, পশ্চিমে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক, উত্তর-পশ্চিমে একশো’ গজ দুরে আরএমপি পবা থানা ভবন এবং একই দুরত্বে নওহাটা পৌর বাজার। সবমিলিয়ে নওহাটার প্রাণকেন্দ্রেই মসজিদটি নির্মিত হয়েছে।

মসজিদ নির্মাণের প্রজ্ঞাপনের সাথে সাথেই স্থানীয় সাংসদ আয়েন উদ্দিনের প্রচেষ্টায় কলেজ শিক্ষক আলাউদ্দিন, আলহাজ্ব শামসুদ্দিনসহ তাদের পরিবারের সদস্যরাই জমি দান করেন। বর্তমানে পবা উপজেলার নান্দনিক স্থাপনা বলতে এই মসজিদটি স্থান অবধারিত।

জানা গেছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একটি প্রকল্পের আওতায় দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ৫৬০টি মডেল মসজিদ তৈরি করছে সরকার। এর মধ্যে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করতে যাচ্ছে গণপূর্ত। বাকিগুলোর কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। তবে নানা জটিলতায় সব মসজিদ প্রকল্পের কাজ শেষ সময় আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সম্প্রতি গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

মসজিদ নির্মাণে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, মসজিদ হচ্ছে ভ্রাতৃত্ববোধ ও পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার অন্যতম স্থান। এ দেশের ৯০ শতাংশ মুসলমান ধর্মীয় প্রার্থনার জন্য মসজিদে একত্র হয়ে থাকেন। তাজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে তারই ধারাবাহিকতায় মডেল মসজিদগুলো নির্মাণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, মসজিদ নির্মাণের স্থান এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যেখানে লোকসমাগম বেশি হয়। এতে করে মানুষ ধর্মীয় কাজে সহজে অংশগ্রহণ করতে পারবে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার নিজস্ব অর্থায়নে যেভাবে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে, তেমনি নিজস্ব অর্থায়নে মডেল মসজিদও নির্মাণ করছে।

এই মসজিদে শুধু নামাজ আদায় নয়, মসজিদ হবে গবেষণা, ইসলামী সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র। হারিয়ে যাওয়া ইসলামের চিরায়ত এই ঐতিহ্যকে ধারণ করে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে দৃষ্টিনন্দন ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণ করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার।

মুজিববর্ষে ১৭০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হবে। মডেল মসজিদ ও সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, মুসলিম বিশ্বের এই প্রথম কোনো দেশের সরকার প্রধান একসঙ্গে ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণ করছে। এর আগে কোনো মুসলিম শাসক বা সরকার প্রধান এক সঙ্গে এতগুলো মসজিদ নির্মাণ করেননি।

সারাদেশে মডেল মসজিদ ও সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. নজিবর রহমান বলেন, মুজিববর্ষে ১৭০টি মডেল মসজিদ ও সংস্কৃতি কেন্দ্র উদ্বোধন করা হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে নিজস্ব অর্থায়নে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে মডেল মসজিদ ও সংস্কৃতি কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করছে সরকার।

৪০ শতাংশ জায়গার উপর তিন ক্যাটাগরিতে মসজিদগুলো নির্মিত হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে ৪ তলা, উপজেলার জন্য ৩ তলা এবং উপকূলীয় এলাকায় ৪ তলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।

এ-ক্যাটাগরিতে ৬৪টি জেলা শহরে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬৯টি চারতলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। এই মসজিদগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৩৬০ দশমিক ০৯ বর্গমিটার।

বি-ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৫টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ১ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গমিটার। সি-ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় ১৬টি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৫২ দশমিক ১২ বর্গমিটার। উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নীচ তলা ফাঁকা থাকবে।

একেকটি মসজিদ নির্মাণ করতে ব্যয় হচ্ছে জেলা শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা; উপজেলা পর্যায়ে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং উপকূলীয় এলাকায় ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৮২ হাজার টাকা।

জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্মাণাধীন মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ১২ শ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। অপরপক্ষে উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ৯ শ মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে।

আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত সুবিশাল এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সে নারী ও পুরুষদের পৃথক ওজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা, লাইব্রেরী, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র, পবিত্র কুরআন হেফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজ্জযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ, অটিজম কেন্দ্র, গণশিক্ষা কেন্দ্র, ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র থাকবে। এছাড়া ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা এবং গাড়ি পার্কিং সুবিধা রাখা হয়েছে।

মডেল মসজিদগুলোতে দ্বীনি দাওয়া কার্যক্রম ও ইসলামী সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি মাদক, সন্ত্রাস, যৌতুক, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ বিভিন্ন সামাজিক ব্যাধি রোধে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. নজিবর রহমান বলেন, মডেল মসজিদগুলো শুধু নামাজ পড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এখানে ইসলামী সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি জ্ঞান অর্জন ও গবেষণা সুযোগ থাকবে, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে।

৫৬০টি মডেল মসজিদে সারাদেশে প্রতিদিন ৪ লাখ ৯৪ হাজার ২০০ জন পুরুষ ও ৩১ হাজার ৪০০ জন নারী একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। লাইব্রেরী সুবিধার আওতায় প্রতিদিন ৩৪ হাজার পাঠক এক সঙ্গে কোরআন ও ইসলামিক বই পড়তে পারবেন। ইসলামিক বিষয়ে গবেষণার সুযোগ থাকবে ৬ হাজার ৮০০ জনের। ৫৬ হাজার মুসল্লি সব সময় দোয়া, মোনাজাতসহ তসবিহ পড়তে পারবেন।

মসজিদগুলো থেকে প্রতি বছর ১৪ হাজার হাফেজ তৈরির ব্যবস্থা থাকবে। আরও থাকবে ইসলামিক নানা বিষয়সহ প্রতিবছর ১ লাখ ৬৮ হাজার শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা। ২ হাজার ২৪০ জন দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসন ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হবে প্রকল্পের আওতায়। কেন্দ্রগুলোতে পবিত্র হজ পালনের জন্য ডিজিটাল নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকবে।

নওহাটা আকবরিয়া মসজিদের ইমাম বলেন, মসজিদ শুধু নামাজ পড়ার জন্য নয়। ইসলাম ধর্মকে মসজিদে বন্দি না রেখে এর সুমহান আদর্শ সমাজে ছড়িয়ে দিতে হবে।

তিনি বলেন, মানুষ যখন ইসলামের সঠিক জ্ঞান পাবে তখন কেউ আর মাদক, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িত হবে না। যৌতুক-নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হবে, মানুষ অন্যায় থেকে দূরে থাকবে। এক্ষেত্রে মডেল মসজিদগুলোর সঠিক ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মডেল মসজিদ নির্মাণ করায় আমরা খুশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করি তিনি যেন ধর্মীয় কাজগুলো বেশি বেশি করতে পারেন।

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আয়েন উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশতো বটেই বিশে^ কোন দেশে আজ এখন পর্যন্ত এতগুলো মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে সাহস পায়নি। স্বপ্ন নয়, বাস্তবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর তনয়া প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা নির্মাণ করে দেখাচ্ছেন। দেশে অন্যরা ক্ষমতায় এসে ধর্ম ও ইসলাম ইসলাম করে শুধু কান্নাকাটি করেছেন। পিছে জনগণকে ঠকিয়ে আখের গুছিয়েছে। যারা ধর্মকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তারাই জনগণকে ধর্ম চর্চা ও বিস্তার করার সুযোগ করে দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি বলেন মসজিদ হচ্ছে সামাজিক মিডিয়া। সামাজিক অবক্ষয় ও অন্যায়-কুসংস্কারের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে মসজিদগুলো সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারে। তিনি মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ এবং তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন।

  • 496
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে