রাজশাহীতে এবার মাদক কারবারিদের তথ্যভান্ডার

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২১; সময়: ১:৪৫ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে এবার মাদক কারবারিদের তথ্যভান্ডার

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী অঞ্চলে সক্রিয় মাদক কারবারিদের তালিকা হালনাগাদসহ বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নির্দেশে মাদক কারবারিদের তালিকা হালনাগাদ ছাড়াও তাদের সম্পর্কে অতিরিক্ত কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

মূলত মাদক কারবারিদের চলাচল ও তৎপরতা শনাক্তের মাধ্যমে তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও আইনের আওতায় আনতেই এসব তথ্য নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে অর্থলগ্নিকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের সম্পর্কেও তথ্য নেওয়া হচ্ছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে শনাক্তের পর সক্রিয় কারবারি ও পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে এ কার্যক্রম চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এর আগে রাজশাহীতে কিশোর গ্যাংয়ের ডাটাবেজ তৈরী করে আইনশৃংখলা বাহিনী। কিশের গ্যাং নিয়ন্ত্রণে রাজশাহীজুড়ে ৪০০ কিশোরের তথ্য সংগ্রহ করে তারা। এর পর তাদের ধরতে অভিযান চালানো হয়।

জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চল দেশের মধ্যে সর্বাধিক মাদকপ্রবণ এলাকা। এই অঞ্চলের অন্তত শতাধিক সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে দেশে ভারত থেকে মাদক আসে। এসব মাদক ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। বছরব্যাপী লাগাতার অভিযান সত্ত্বেও রাজশাহী অঞ্চলে মাদকের চোরাচালান কয়েকগুণ বেড়েছে। পাশাপাশি যথেচ্ছ মাদক বিক্রি ও সেবনের কারণে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। মাদককেন্দ্রিক সামাজিক সমস্যা সহিংসতার জন্ম দিচ্ছে।

সূত্রমতে, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেবা সুরক্ষা বিভাগ থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো চিঠিতে সক্রিয় মাদক কারবারি, অর্থলগ্নিকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করতে তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন ও তথ্য সন্নিবেশের (ডাটাবেজ) জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

বিভাগীয় দপ্তরগুলো থেকে চলতি মাসের মধ্যে এ তালিকা চাওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় তালিকা প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজশাহী মাদক নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের উপপরিচালক লুৎফর রহমান জানিয়েছেন, তাদের সাত দিনের সময় দেওয়া হলেও করোনা সংক্রমণের তীব্রতা বাড়ায় কিছুটা দেরি হচ্ছে তালিকার কাজ সম্পন্ন করতে।

জানা গেছে, মাদক কারবারিদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা ছাড়াও তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা স্মার্টকার্ডের ফটোকপি, হালনাগাদ ছবি সংগ্রহ করছে মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ। এছাড়া তাদের বর্তমান অবস্থান, আগের পেশা ও বর্তমান অবস্থান, বর্তমানে সম্পদের সম্ভাব্য পরিমাণ ও তালিকা, বাড়ি, গাড়ি, জমিজমা, রাজনৈতিক পদ-পদবি, বিদ্যমান অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য থাকলে, তার ধরন ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরেও পাঠানো হবে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কর্মকর্তারা আরও জানান, সন্দেহভাজন ও প্রমাণিত মাদক কারবারিদের এনআইডির কপি নেওয়ার কারণ তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা। তাদের অতীত সম্পর্কে তথ্য সন্নিবেশ রাখা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, একজন মাদক কারবারি ধরা পড়ার পর অনেক সময় ভুল নাম-ঠিকানা দিয়ে থাকে। মামলা তদন্তে গিয়ে ব্যক্তির দেওয়া ঠিকানায় তাকে শনাক্ত করা যায় না। আবার জামিনে বের হলে তাকে আর পুলিশ খুঁজে পায় না। তার বিরুদ্ধে অতীতে কোনো মাদকের মামলা আছে কিনা তাও জানা সম্ভব হয় না। এই ডাটাবেজের কাজ সম্পন্ন হলে এ ধরনের সমস্যা আর থাকবে না।

রাজশাহী বিভাগীয় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্লাহ কাজল বলেন, সক্রিয় মাদক কারবারিদের পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজের মধ্যে আনা হবে। দ্রুতই বিভাগের আট জেলার মাদক কারবারিদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রণয়ন সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, হেরোইন চোরাচালানের মূল গেটওয়ে হচ্ছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও পার্শ্ববর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার হাকিমপুর, চরবাগডাঙ্গা, শাজাহানপুর ও অনুপনগর এলাকা। এই পথেই ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলা থেকে সারা বছর বিপুল পরিমাণ হেরোইন পাচার হয়ে আসে। যার পরিমাণ হাজার কোটি টাকার বেশি। বিভিন্ন চ্যানেলে এসব হেরোইন সারা দেশে পাচার হয়ে থাকে।

এই দুটি এলাকাতেই তিন সহশস্রাধিক হেরোইন চোরাকারবারি ও পৃষ্ঠপোষক সক্রিয় রয়েছে। তবে বিভিন্ন সময়ে হেরোইনের চালানসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে যারা আটক হয় তারা শুধু বহনকারী। মাদকের মূল মালিকরা সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। কর্মকর্তারা বলছেন, এ কাজের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে