১৫ পিস ইয়াবা বিক্রির টাকার জন্য খুন হন সুমন

প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২১; সময়: ৯:৪৯ অপরাহ্ণ |
১৫ পিস ইয়াবা বিক্রির টাকার জন্য খুন হন সুমন

নিজস্ব প্রতিবেদক, জয়পুরহাট : মাত্র ১৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রির টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বে সুমন হোসেন (২৩) নামে এক যুবকে তাঁর বন্ধুরা পিটিয়ে হত্যা করেছে। জয়পুরহাটের আলামতবিহীন এই খুনের ঘটনার এক মাসের মধ্যে রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিহত সুমন হোসেনের বাড়ি নীলফামারীর ডোমার উপজেলার হংসরাজ গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের চাঁদ মিয়ার ছেলে। জয়পুরহাট শহরের দেওয়ান পাড়া মহল্লায় থাকতেন সুমন।

গ্রেপ্তার করা ৩জন হচ্ছেন- ভেটি হাজিপাড়া গ্রামের আব্দুর রউফের ছেলে জয় হোসেন (২৬), দেওয়ান পাড়ার বাবুলের ছেলে সৈকত হোসেন (২৭) ও তেঘরবিশা গ্রামের তসির উদ্দিনের ছেলে সুজাউল (৩৬)।

জয়পুরহাট পুলিশ সুপার (এসপি) মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বৃহস্পতিবার রাতে প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এই হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনের কথা জানিয়েছেন।

জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা সূত্র জানা যায়, গত ১৩ মার্চ রাত নয়টায় সুমন দেওয়াপাড়া মহল্লার বাড়ি থেকে জয়পুরহাট শহরের উদ্দেশ্যে বের হয়ে আর ফেরেননি। পরদিন জয়পুরহাট সদর উপজেলা ভিটি গ্রামের একটি ফলজ ও বনজ বাগানের গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে পাওয়া যায়। ওইদিনই পরিবারের সদস্যরা তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে ভর্তির তিনদিন পর ১৭ মার্চ তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটে। ওইদিনই সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সুমন হোসেন সেখানে এক সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৪ মার্চ মৃত্যুর কাছে হেরে যান ।

এ ঘটনায় ২৫ মার্চ জয়পুরহাট সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলমকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি তদন্ত শুরু করেন।

জয়পুরহাট পুলিশ সুপার (এসপি) প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুমন হোসেন হত্যা মামলার ক্লু খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তদন্তের একপর্যায়ে ভিকটিম সুমন হোসেনের বন্ধুর মাদক সংক্রান্ত বিষয়ে বিরোধের কথা জানা যায়। এই বিরোধের সূত্র ধরে সন্দেহভাজন বন্ধুদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। ২৯ এপ্রিল ভোর রাতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সুমনের বন্ধু ভিটি হাজীপাড়া গ্রামের আব্দুর রউফের ছেলে মো. জয়কে (২৬) গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামী মো. জয় জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, পনেরো পিস ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রির টাকা নিয়ে সুমনের সঙ্গে তাঁর বন্ধু মো. সৈকতের বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জেরে সৈকত তেঘর রেলগেট সংলগ্ন মুশফিকুলের নার্সারিতে সুমনকে ডেকে নিয়ে আটকে রাখেন। সৈকত তাঁর অন্য বন্ধু মো. জয়, শিহাব, সুজাউলকে সেখানে ডেকে নিয়ে আসেন। তাঁরা সুমন হোসেনের কাছে পনেরো পিস ইয়াবা বিক্রির টাকার দাবি করেন। সুমন হোসেন তাঁদেরকে টাকা দিতে অস্বীকার করেন। তখন তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে সুমন হোসেন পিটিয়ে জখম করেন। সুমনকে তাঁরা মৃত ভেবে সেখানে ফেলে রেখে পালিয়ে যান।

আসামী মো. জয় ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জয়ের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, সৈকত ও সুজাউলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ সুপার (এসপি) মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, সুমন হোসেন পনেরো পিস ইয়াবা বিক্রি করেছিলেন। পনেরো পিস ইয়াবা বিক্রির টাকার জন্য সুমনকে তাঁর বন্ধুরা কৌশলে নার্সারিতে ডেকে নিয়ে পিটিয়েছে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুমন মারা যান। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্লুলেস হত্যাকান্ডের ঘটনার রহস্য উন্মেচিত হয়েছে। শিগগিরই এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে।

  • 35
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে