রাজশাহীর ২০ হাজার পরিবহন শ্রমিকের মানবেতর জীবনযাপন

প্রকাশিত: মে ১, ২০২১; সময়: ১২:১১ পূর্বাহ্ণ |
রাজশাহীর ২০ হাজার পরিবহন শ্রমিকের মানবেতর জীবনযাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : কঠোর লকডাউনে বন্ধ আছে গণপরিবহন। এ খাতে জড়িত রাজশাহীর প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক ও তাদের পরিবার দিশেহারা জীবন-জীবিকা নিয়ে। নেই কাজ। এ অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। আয়শূন্য এসব মানুষের দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে। এমন অবস্থায় চরম হতাশায় দিন পার করছেন পরিবহন শ্রমিকরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চালানোর দাবিতে রবিবার বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে শ্রমিক সংগঠন।

ভুক্তভোগীরা জানান, জমানো টাকা যা ছিল তা দিয়ে লকডাউনে মাত্র কয়েকদিন পার করেছেন। ঋণের বোঝাও বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় সরকারের সহযোগিতা চান গণপরিবহন শ্রমিকরা। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর বিধিনিষেধ ও কঠিন বেড়াজালে আটকা গণপরিবহন নামের বাস সেবা। রাজধানীর বাইরে অন্যান্য জেলায়ও বন্ধ যাতায়াত। নিতান্তই নিরুপায় অনিচ্ছায় তাই স্তব্ধ টার্মিনালগুলোর ব্যস্ততা।

একেকটি বাস চালাতে মালিক ছাড়া প্রয়োজন হয় চালক, সুপারভাইজার, কন্ডাক্টর আর হেলপাররাই থাকেন মুখ্য চরিত্রে। এদের সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে ওয়েবিল লেখা কর্মী, চেকার ও সুপারভাইজার। রাজশাহীতে এসব শ্রমিকই রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। আর চার চাকার এ যানটি চলার সাথে পেট চালান কমপক্ষে আরো দশ ধরনের শ্রমিক।

সৌন্দর্য্যবর্ধন থেকে শুরু করে বড় এই যান্ত্রিক পরিবহনের ছোট্ট একটি যন্ত্রাংশ সারাই করার সাথে শুধু রাজশাহীর চারটি টার্মিনালেই যুক্ত ২০ হাজারের বেশি শ্রমিক। করোনার এ ভয়াল থাবায় এদের জীবিকার চাকাও থমকে যেতে বসেছে। গত বছরের দীর্ঘ লকডাউনের কোনোরকম পার করে একটু ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু হয়েছিল এদের। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় স্রোতে এবারে লকডাউনে কর্মহীন এসব শ্রমিক পড়েছেন মহাবিপদে।

রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য বাসচালক আমজাদ হোসেন জানান, লকডাউনে অনেক চিন্তার মধ্যে দিন পার করেছি। কীভাবে চলব পরিবার-পরিজন নিয়ে। আমরা বাসচালকরা ‘দিন আনি দিন খাই’। আমাদের জমানো টাকা থাকে না। এজন্য সমস্যায় পড়তে হয়। এ লকডাউন আরো বাড়লে তখন কী খাব কী করব কিছুই মাথায় আসছে না।

বাস হেলপার রহিম মিয়া জানান, আমাদের রুটি-রুজি বাসে কাজ করে জোগাড় করতে হয়। অনেক কষ্টে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। কারো কাছ থেকে পাচ্ছি না অনুদান, না পচ্ছি সাহায্য বা ধার। প্রায় দিনই শেষ রাতে কোনোরকম কিছু খেয়ে রোজা রাখতে হয়। এই লকডাউনে সবকিছু বন্ধ বাকি, কটা দিন কীভাবে চলব আল্লাহই জানে। ধারণাও করতে পারছি না।

রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকার পাপড় বিক্রেতা রহিম শেখ জানান, টানা দুই বছর রোজার সময় কোন আয় হচ্ছে না। সামনে ঈদ। কিভাবে পরিবারের চাহিদা পুরন করবেন তা বুঝতে পারছেন না।

এদিকে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে গণপরিবহন চালুর দাবিতে রোববার সারাদেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন সড়ক পরিবহন শ্রমিকরা। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়।

সংগঠনটির ভাষ্য, করোনাভাইরাসের মহামারীতে সব কিছু চালু থাকলেও গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। এতে ৫০ শতাংশ পরিবহন শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। গণপরিবহন চালুর দাবি বাস্তবায়নে রোববার বিক্ষোভ মিছিলের পাশাপাশি মঙ্গলবার সারাদেশে জেলা প্রশাসকের কার্যলয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।

রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী জানান, শ্রমিকদের বেহাল দশা। সবাই একটা বাজে অবস্থার মধ্যে দিয়ে দিন পার করছেন। শ্রমিকদের মুখের দিকে তাকানো যায় না।

শ্রমিক নেতা মাহাতাব হোসেন চৌধুরী জানান, দেশে লকডাউনে মার্কেট খোলা। তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন চললে সমস্যা কোথায়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে মানুষের ভোগান্তিও যেমন কমবে তেমন শ্রমিকরাও দু বেলা দু মুঠো ভাত খাওয়ার টাকাটা জোগাড় করতে পারতেন।

  • 298
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে