রাবি ভিসির জামাতার বিরুদ্ধে ‘নথি চুরি’র অভিযোগ

প্রকাশিত: মে ৪, ২০২১; সময়: ১১:০৫ অপরাহ্ণ |
রাবি ভিসির জামাতার বিরুদ্ধে ‘নথি চুরি’র অভিযোগ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, রাবি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য জামাতা ও আইবিএ’র প্রভাষক এটিএম শাহেদ পারভেজের বিরুদ্ধে সিনেট ভবনের তালা ভেঙ্গে নিয়োগ সংক্রান্ত নথিপত্র নিয়ে চুরির অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার রাত ১০টার পর এই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করছে বিশ্বিবদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী দুর্নীতি বিরোধী শিক্ষক সমাজ। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এই অভিযোগ তোলেন শিক্ষকরা।

সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতি বিরোধী শিক্ষক সমাজের আহবায়ক অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, অবৈধভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে উপাচার্যের জামাতা বহিরাগত ক্যাডার বাহিনী নিয়ে রাতের আঁধারে সিনেট ভবনে যান। ভবনের তালা ভেঙ্গে তিনি নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে যান। সিনেট ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ও গোপনীয় নথিপত্র থাকে। সেখানে তালা ভেঙ্গে ঢুকে নথি বের করে আনা একটি বড় ধরণের অন্যায়।

সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্যের জামাতার এই কাজকে জঘন্য অপরাধ আখ্যা দিয়ে তার শাস্তির দাবি করেন শিক্ষকরা। তারা বলেন, শাহেদ পারভেজকে শাস্তির আওতায় আনা হোক, যেন ভবিষ্যতে কেউ এ ধরণের কাজ করার দুঃসাহস না দেখায়।

এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক সাহেদ পারভেজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে বিষয়টি সম্পর্কে প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, আমি পুলিশের মাধ্যমে জানতে পেরেছি গতকাল (সোমবার) গভীর রাত বহিরাগতসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক সিনেট ভবনের তালা ভেঙ্গে সেখান থেকে নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে আসে।

এদিকে উপাচার্য এম আব্দুস সোবহানের মেয়াদের শেষ সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা কওে ১৫০ জনকে এডহকে নিয়োগ দেয়ার গুঞ্জন ওঠে। এই উদ্দেশ্যে বুধবার গভীর রাতে উপাচার্যের জামাতা সিনেট ভবনের তালা ভেঙ্গে নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে যান বলে অভিযোগ ওঠে।

এতে অবৈধ নিয়োগের আশঙ্কায় মঙ্গলবার সকালে সিন্ডিকেট স্থগিতের জন্য আওয়ামীপন্থী দুর্নীতি বিরোধী শিক্ষকরা উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান নিলে তাদের ওপর ধাক্কাধাক্কি করে চাকরী প্রত্যাশীরা। এতে প্রক্টরসহ একাধিক শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন। এই সময় আকাশ নামের বহিরাগত এক ছাত্রলীগ কর্মী শিক্ষকদের প্রকাশ্যে গুলি করে মারার হুমকি দেন। বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি জানান, হুমকি দাতা আকাশ রাবি ছাত্রলীগের কেউ নয়, সে স্থানীয় ছাত্রলীগের কর্মী ও বিশ^বিদ্যালয়ের চাকরি প্রত্যাশী।

এদিকে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী দফতর থেকে উপাচার্য এমন আব্দুস সোবহানকে ফোন করে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। এতে বেলা ১১টার দিকে সিন্ডিকেট সভা বাতিল করতে প্রশাসন বাধ্য হয়। এসময় মতিহার থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ ও সিআইডি সদস্যরা সেখানে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

পরে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষক লাঞ্চণা ও হত্যার হুমকির প্রতিবাদ এবং উপাচার্য জামাতার নথি ‘চুরি’র অভিযোগের বিষয় জানানো হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী, প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের যুগ্ন আহবায়ক অধ্যাপক আলী রেজা অপু, জাহাঙ্গীর আলম সাঈদ, তরিকুল হাসান মিলন, সদস্য সচিব অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পান্ডে, সদস্য অধ্যাপক এসএম একরাম উল্লাহ, আবদুল্লাহ আল মামুন ও আসাদুল হকসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, উপাচার্য এম আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে যোগ্যতা কমিয়ে মেয়ে-জামাতাকে নিয়োগ দেয়াসহ আনীত দুর্নীতি ও অনিয়মের একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে প্রমাণ পায় ইউজিসি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ডিসেম্বরে রাবিতে নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে শিক্ষামন্ত্রণালয়।

৬ মে বৃহস্পতিবার তার মেয়াদ শেষ হবে। এরই মধ্যে গত রবি ও সোমবার সিনেট ভবন এবং দুটি প্রশাসন ভবন তালাবদ্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একটি অংশ।

নেতাকর্মীরা জানান, উপাচার্য যেন আর কোনো অবৈধ নিয়োগ দিতে না পারেন সে জন্য তারা এই কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। এতে গত ২ মে ফাইনান্স কমিটির সভা স্থগিত করতে বাধ্য হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে