লকডাউনেও ঘরবন্দি করা যায়নি চাঁপাইয়ের মানুষকে ঝুঁকিতে রাজশাহী-নওগাঁ

প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২১; সময়: ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ |
লকডাউনেও ঘরবন্দি করা যায়নি চাঁপাইয়ের মানুষকে ঝুঁকিতে রাজশাহী-নওগাঁ

নিজস্ব প্রতিবেদক : কঠোর লকডাউনে ঘরবন্দি করা যায়নি চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষদের। লকডাউন উপেক্ষা করে ঘর ছাড়ছে শত শত মানুষ। জীবিকার তাগিদে মানুষ গত তিন-চার দিনে রাজশাহী হয়ে বাসে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা ও বিভাগে যাত্রা করেছেন। লকডাউনের মধ্যেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন উপায়ে রাজশাহীতে আসছেন তারা।

এই শ্রমজীবীরা বলছেন- গ্রামে কাজ নেই। ইদের পর থেকে বসে আছেন তারা। উপায় না পেয়ে তারা ঘর ছেড়েছেন।
সর্বশেষ শনিবার (২৯ মে) রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ও ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে ছিলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা মানুষের জটলা। সকাল ১০ টার দিকে কাউন্টারগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, তাদের বাসের জন্য অপেক্ষা করতে। এছাড়া স্টেশনের প্রধান ফটক ছাড়াও প্লাটফর্মে বসে থাকতে দেখা গেছে তাদের। বিভিন্ন পেশার মধ্যে রাজমিস্ত্রিদের সংখ্যই বেশি দেখা গেছে।

জানা গেছে- সংক্রমণের ভয়ে অনেকেই আশেপাশের জেলা শহর ও উপজেলাতে নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান নিচ্ছেন। এতে করে তুলনামূলক সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যদিও চাঁপাই ও রাজশাহীতে দিন দিন করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যা বাড়ছে। শনিবার সারাদেশে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩৮ জনের। এর মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। চাঁপাইয়ের দুইজন।

শুধু তাই নয়- শনিবার (২৯ মে) চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭ জনের শরীরে করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে। ভারতীয় ধরন শনাক্ত হলেও করোনাক্রান্ত ওই সাতজনের কেউই সম্প্রতি ভারত ভ্রমণ করেননি বলে জানা গেছে। তাহলে ভারত সফর না করেই ওই দেশের ধরনে শনাক্ত হয়েছেন। অনেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অন্য জেলায় যাচ্ছে।
জানা গেছে- চাঁপাইনবাবগঞ্জে যে ৭ জনের শরীরে করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে তারমধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও দুইজন নারী। পুরুষ পাঁচজনের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠজনের বয়স ১৩ বছর।

একজনের বয়স ৩০ বছর, আরেক জনের বয়স ২১ বছর। বাকি দুজন হলো ৫২ বছর বয়সী এবং ২৭ বছর বয়সী। নারী দুইজনের মধ্যে একজনের বয়স ২৭ বছর, আরেকজনের ৩১ বছর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি জানান- ‘হারা চুরি-বাটপারি করে আইনু। কি করবো কহেন? হারগে তো খ্যাতে হবে। কাজের ল্যাগি আইনু। হারা তো রাজশাহীতে থ্যাকবো না, বাসের জন্যে রহে আছি।’

অন্যরা জানান- চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গোদাগাড়ী প্রায় ২০ কিলোমিটার। এই পথ হেঁটে এসেছি। সকালে পুলিশ ডিউটিতে আসার আগেই আমরা বাড়ি থেকে বের হয়েছি। সড়কে পুলিশের চেক পোস্ট থাকায় মাঠ মাঠ (বিল বিল) হয়ে এসেছি। কখনও ছোট ছোট সড়কে অটোরিক্সা বা ভ্যানে চড়েছি। গোদাগাড়ীতে আসার পরে অটোরিক্সায় রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গায় এসেছি। ইদের পরে আমরা কাজ করতে পারিনি। আর এলাকায় কাজও নেই। তাই ঢাকায় যাচ্ছি। সেখানে রাজমিস্ত্রিসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করি আমরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান- শুক্রবার দুইজন মিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে মোট ৮২ জন দেশে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে দুইজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়ার শনাক্তের হার ৫৯ শতাংশ। যারা ভারত থেকে দেশে এসেছেন তাদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হয়েছে।

রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম জানান, গোদাগাড়ী ও তানোরের সড়কে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পুলিশ কঠোরভাবে চেকপোস্টে তল্লাশি করছে। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- কেউ চাঁপাই থেকে বাইরের জেলাগুলোতে আসবেন না। এতে করে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে।

  • 381
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে