বাগমারায় ব্রীজের মুখ বন্ধ ক‌রে অবৈধ পুকুর খনন

প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২১; সময়: ৮:৪৩ অপরাহ্ণ |
বাগমারায় ব্রীজের মুখ বন্ধ ক‌রে অবৈধ পুকুর খনন

নিজস্ব প্রতিবেদক, তা‌হেরপুর : রাজশাহীর বাগমারায় রাস্তার ব্রীজের মুখ বন্ধ ক‌রে চল‌ছে অবৈধ পুকুর খনন। অবৈধ পুকুর খননের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হলেও কোন লাভ হচ্ছেনা। বাগমারার ১৬টি ইউ‌নিয়ন ও ২টি পৌরসভায় অবা‌ধে তিন ফস‌লি কৃ‌ষি জ‌মি‌তে পুকুর খনন চল‌ছে।

এলাকাভিত্তিক সিন্ডিকেট চক্র বন্যা পরবর্তীতে আবারও মেতে উঠেছে ফসলি জমিতে অবৈধ পুকুর খননে। তারা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এলাকার কিছু ধূর্ত ব্যক্তি ও দালালদের অর্থের বিনিময়ে হাত করে প্রকাশ্য দিবালোকেই পুকুর খননের কার্যক্রম শুরু করেছে। পুকুর খননের মহোৎসব চলছে উপজেলার সর্বত্র।

স‌রেজ‌মিন গি‌য়ে দেখা যায়, গোয়ালকান্দি ইউ‌নিয়‌নের কামারখালী গ্রা‌মের হাজরাপাড়া-কামারখালী সং‌যোগ সড়‌কের চকপাড়া নামক স্থা‌নে রাস্তার ব্রী‌জের পূর্ব পা‌শের মুখ মা‌টি দ্বারা ভরাট ক‌রে চকপাড়া-কামারখালী বি‌লের দিঘী খন‌নে মে‌তে উ‌ঠে‌ছে এসব চক্র । প্রায় ১ হাজার একর জমির পা‌নি নিষ্কাশ‌নের একমাত্র ব্রী‌জের মুখ পথ বন্ধ ক‌রে দেওয়া হ‌য়ে‌ছে।

নাম প্রকা‌শে অ‌নিচ্ছুক স্থানীয় দুইজন কৃষক জানান, রামরামা গ্রা‌মের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জিল্লু, ইটভাটা মা‌লিক ও অ‌বৈধ পুকুর খন‌ন সি‌ন্ডি‌কে‌টের মূল হোতা আবুল কালাম আজাদ ওর‌ফে ভাটা আজাদ, চকপাড়ার র‌ফিক মাষ্টার, নাজমুল, স্থানীয় বারুর ছে‌লে হান্নান ও মান্নান প্রায় ১৫০ বিঘা জ‌মি‌তে একস‌ঙ্গে ৬‌টি পুকুর খনন কর‌ছেন। ত‌বে পুকুর খননকার‌ীরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় তা‌দের ভ‌য়ে স্থানীয় কৃষকরা মুখ খোলার সাহস পা‌চ্ছেন না।

এ ব্যাপা‌রে পুকুর খননকারী জিল্লুর রহমান মু‌ঠোফো‌নে পুকুর খন‌নের সত্যতা স্বীকার ক‌রে ব‌লেন, আ‌মি ইউএনও স্যার‌কে জা‌নি‌য়ে পুকুর খনন কর‌ছি । ভাটা আজাদও পুকুর খনন করার কথা স্বীকার ক‌রেন।

কিছু‌দিন পূ‌র্বে উপ‌জেলা প্রশাসন বি‌ভিন্ন স্থা‌নে পুকুর খন‌নের একা‌ধিক অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে দুইটি ভেকুর যন্ত্রাংশ নষ্ট করা হলেও লাভ হয়নি মোটেও । নতুন করে ভেকু এনে আবারও দীঘি খনন কাজ শুরু করেছে ঐসব স্থা‌নে।

পরিবেশ আইন অমান্য করে কৃষি জমির (টপসয়েল) ও পুকুর খননের মাটি কেটে সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটায়। এতে কতিপয় প্রভাবশালীরা লাভবান হলেও হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। আবার এই মাটি ট্রাকে পরিবহন করায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সদ্য নির্মিত পাকা রাস্তা ভেঙেচুরে একাকার হয়ে যাচ্ছে।

পরিবেশ আইন অনুযায়ী কৃষি জমির মাটি কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। আর জমির শ্রেণি পরিবর্তন না করে পুকুর খনন করাও দণ্ডনীয় অপরাধ। এই আই‌ন অনুয়ায়ী কৃষি জমির মাটিকাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

অন্যদিকে উপজেলার শ্রীপুর, মা‌ড়িয়া গোয়ালকা‌ন্দি, শিবজাইট, কামারখালী তালতলি, তা‌হেরপুর পৌরসভার খয়রা ও নুরপুর, যোগিপাড়া, মাধনগর, সাইধাড়া, বাইগাছা মোহনগঞ্জ এলাকায় কৃষি জমির মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটায়। আবার খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক ভর্তি করে ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয়ভাবে কাঁকড়া নামীয় এসব ট্রাকের অবাধ চলাচলের কারণে উপজেলা সদ্য নির্মিত রাস্তাগুলো ভেঙ্গেচুড়ে একাকার হয়ে গেছে। এছাড়া ওই সব ট্রাক থেকে মাটি পড়ে ধুলোবালির স্তুপ জমে যাওয়ায় ওই সব রাস্তা দিয়ে যানচলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে বি‌শেষ ক‌রে বৃ‌ষ্টি হ‌লে রাস্তা কাদা জ‌মে পি‌চ্ছিল হ‌য়ে প্র‌তিদিনই ঘট‌ছে অহরহ দুর্ঘটনা।

সম্প্রতি বাগমারায় টানা বন্যায় কৃষি, মৎস্য সহ বিভিন্ন সেক্টরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রায় পাঁচশ কোটি টাকার উপরে। অতি বন্যা ও জলাবদ্ধতার কারণ পানি নিষ্কাষনের বিভিন্ন ব্রীজ কালভাটের মুখ বন্ধ করে সেখানে মাছ চাষ করার ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ জন্য পুকুর খনন বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর উদ্যোগ গ্রহন করেছে।

এছাড়া বাগমারায় পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করে অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে স্থানীয় এক আইনজীবির হাইকোর্টে করা রীট আবেদনের প্রেক্ষিতে মহামান্য আদালত বাগমারায় পুকুরখননে স্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। স্থানীয় প্রশাসন ও আদালতের এমন নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও তারা তোয়াক্কা করছে না স্থানীয় কিছু স্বার্থন্মেষী মহল। তারা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এলাকার হাজার হাজার কৃষকের পেটে লাথি মারতেও দ্বিধাবোধ করছেন না।

কামারখালী হাজরাপাড়ার কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, এসব সি‌ন্ডি‌কেট বছর প্রতি এক বিঘা জমির জন্য কৃষকদেরকে ২০-২৭ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে জমিগুলো এরি মধ্যে চুক্তিকরা হয়। সেই সকল জমিতে উৎসব মূখর পরিবেশে চলছে দীঘি খনন। কোন জ‌মির মা‌লিক জ‌মি দি‌তে না চাই‌লে কৌশ‌লে ফাঁ‌দে ফে‌লে জ‌মি লীজ দি‌তে বাধ্য কর‌ছে । ওই সকল স্থানে দীঘি খনন করা হলে ফসল উৎপাদন সহ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন সহ ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। ব্রী‌জের মুখ মাটি দি‌য়ে ভরাট ক‌রে‌ দেয়ায় বর্ষার পানি আট‌কে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃ‌ষ্টি হ‌বে ।

এ ব্যাপা‌রে বাগমারা উপ‌জেলা সহকা‌রি ক‌মিশনার (ভূ‌মি ) মাহামুদুল হাসানের সা‌থে মুঠো‌ফো‌নে যোগা‌যোগ করা হ‌লে তি‌নি জানান, অ‌বৈধ পুকুর খনন ব‌ন্ধে সেখা‌নে প্রসাশ‌নের লোক পাঠা‌য়ে ব্যবস্থা নেয়া হ‌বে এবং তি‌নি বিষয়‌টি দেখ‌বেন ব‌লে জানান।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে