করোনা মোকাবেলায় টিআইবি’র ১৯ সুপারিশ

প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২১; সময়: ২:৪৬ অপরাহ্ণ |
করোনা মোকাবেলায় টিআইবি’র ১৯ সুপারিশ

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : করোনাভাইরাস সংকট মোকাবেলার জন্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বণ্টনে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। ৮ জুন প্রকাশিত ওই গবেষণাপত্রে তারা করোনাভাইরাস সংকট মোকাবেলা ও ভ্যাকসিন সম্পর্কিত কিছু সুপারিশও তুলে ধরেছে।

গবেষণার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার রোধে বিজ্ঞানভিত্তিক ও পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা, নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলায় প্রণোদনা বিতরণে যথাযথ উদ্যোগের ঘাটতিসহ সমন্বয়হীনতা, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমেও সুশাসনের প্রতিটি নির্দেশকে ঘাটতি লক্ষ করা গেছে। আইনের লঙ্ঘন করে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভ্যাকসিন আমদানির মাধ্যমে জনগণের টাকা হতে তৃতীয় পক্ষের লাভবান হওয়া সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, কৌশলগত ঘাটতি, ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর প্রভাব ও রাজনৈতিক বিবেচনায় ভ্যাকসিন ক্রয়ের ক্ষেত্রে একক উৎসের ওপর নির্ভর করার কারণে চলমান ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমে আকস্মিক স্থবিরতা নেমে এসেছে। টিকাদান পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সমন্বয়ের ঘাটতি, অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীকে পরিপূর্ণভাবে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে উদ্যোগের ঘাটতি ও সম প্রবেশগম্য ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম নিশ্চিত না করার ফলে অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য ঝুঁকিপূর্ণ ও সুবিধাবঞ্চিত অনেক জনগোষ্ঠী ভ্যাকসিনের আওতার বাইরে রয়ে গিয়েছে। ভ্যাকসিনের নিবন্ধন ব্যবস্থা সমাজের সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর অনুকূলে হওয়ার কারণে এলাকা, শ্রেণি, লিঙ্গ ও পেশাভিত্তিক বৈষম্য তৈরি হয়েছে, যা সর্বজনীন টিকাদান কর্মসূচির অর্জনকে ঝুঁকিপূর্ণ করছে। সর্বোপরি করোনা মোকাবেলা ও ভ্যাকসিন কার্যক্রমে সুশাসনের ঘাটতি করোনাভাইরাস নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণকে দীর্ঘায়িত করছে।

এই সংকট থেকে উত্তরণে ১৯ দফা সুপারিশও করা হয়েছে ওই গবেষণায়।

ভ্যাকসিন কার্যক্রম সম্পর্কিত সুুপারিশ
১. দেশের ৮০ শতাংশ জনসংখ্যাকে কীভাবে কত সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসা হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা করতে হবে।
২. সম্ভাব্য সকল উৎস হতে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির জন্য জোর কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে।
৩. উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সক্ষমতাসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে নিজ উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের সুযোগ দিতে হবে।
৪. সরকারি ক্রয় বিধি অনুসরণ করে সরকারি-বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি আমদানির অনুমতি প্রদান করতে হবে।
৫. রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ব্যতীত ভ্যাকসিন ক্রয় চুক্তি সম্পর্কিত সকল তথ্য সকলের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
৬. পেশা, জনগোষ্ঠী ও এলাকাভিত্তিক সংক্রমণের ঝুঁকি, আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার সমভাবে বিবেচনা করে অগ্রাধিকার তালিকা হতে যারা বাদ পড়ে যাচ্ছে তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৭. সুবিধাবঞ্চিত ও প্রত্যন্ত এলাকা বিবেচনা করে ভ্যাকসিনের নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম সংস্কার করতে হবে; ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে নিবন্ধন ও তৃণমূল পর্যায়ে টিকাকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।
৮. সকল কারিগরি ত্রুটি দূর করাসহ সকলের জন্য বিভিন্ন উপায়ে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নিতে হবে (যেমন এসএমএস এর মাধ্যমে, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে); সকলের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন কার্ড প্রিন্ট করার নিয়ম বাতিল করতে হবে।
৯. এলাকাভিত্তিক চাহিদা যাচাই করে ভ্যাকসিন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
১০. ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমে ভ্যাকসিন কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
১১. ভ্যাকসিন কেন্দ্রে অভিযোগ নিরসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে; অভিযোগের ভিত্তিতে বিদ্যমান সমস্যা দূর করতে হবে ও অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

করোনাভাইরাস মোকাবেলার অন্যান্য কার্যক্রম সম্পর্কিত সুুপারিশ
১২. কোভিড-১৯ মোকাবেলা কার্যক্রমে সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতির ক্ষেত্রে দ্রুততার সাথে তদন্ত ও দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৩. কোভিড-১৯ মোকাবেলা কার্যক্রমের জন্য নির্ধারিত প্রকল্পসমূহ দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এর অগ্রগতির চিত্র প্রকাশ করতে হবে।
১৪. স্টোরে ফেলে রাখা আইসিইউ, ভেন্টিলেটরসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি অতি দ্রুততার সাথে ব্যবহারযোগ্য করতে হবে এবং সংক্রমণ হার বিবেচনা করে বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করতে হবে।
১৫. সকল জেলায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার স্থাপন করতে হবে।
১৬. বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউসহ কোভিড-১৯ চিকিৎসার খরচ সর্বসাধারণের আয়ত্তের মধ্যে রাখতে চিকিৎসা ফি’র সীমা নির্ধারণ করতে হবে।
১৭. জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি পালন করাতে বেসরকারি সংস্থার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে আচরণ পরিবর্তনমূলক কার্যক্রমের উদ্যোগ নিতে হবে। মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে বলবতকরণের উদ্যোগ নিতে হবে।
১৮. সকল জনসংখ্যাকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসার পূর্বে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর বিকল্প জীবন-জীবিকার সংস্থান করে সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক ‘লকডাউন’ দিতে হবে; সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যাসহ নিষেধাজ্ঞার আওতা নির্ধারণ করতে হবে।
১৯. সরকার ঘোষিত প্রণোদনা অতি দ্রুততা ও স্বচ্ছতার সাথে বিতরণের উদ্যোগ নিতে হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে