রাজশাহী থেকে ফেরত গেল ব্যবহার অনুপযোগী ২৫০ টন ইউরিয়া

প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২১; সময়: ১১:৩৬ অপরাহ্ণ |
রাজশাহী থেকে ফেরত গেল ব্যবহার অনুপযোগী ২৫০ টন ইউরিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর বাফার গুদাম থেকে ২৫০ মেট্রিক টন ব্যবহার অনুপযোগী ইউরিয়া সার ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। বুধবার রাতে রাজশাহীতে আসা জমাট বাঁধা সারগুলো গুদামে নামাতে দেয়নি স্থানীয় পরিবেশকরা।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে বাফার গুদামে আসা ইউরিয়া সারগুলো জমাট বাঁধা ছিল। বড় বড় জমাট বাঁধা এসব সার জমিতে ব্যবহার অনুপযোগী। তাই স্থানীয় পরিবেশক ও বাফার কর্তৃপক্ষ সার আনলোড করতে দেয়নি। পরে সেগুলো ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, বুধবার রাতে ঢাকার নবাব এন্ড কোং লিমিটেডের ১৫ ট্রাক ইউরিয়া সার রাজশাহীতে পৌঁছায়। প্রতিটি ট্রাকে প্রায় ১৭ টন হিসেবে সর্বমোট প্রায় ২৫৫ মেট্রিক টন সার আসে রাজশাহীতে। জমিতে ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় সারগুলো গুদামে গ্রহণ করে নি বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখা। স্থানীয় পরিবেশকদের আপত্তির মুখে কয়েক ট্রাক সার গ্রহণ করে গুদামে নামানো হলেও অনুপযোগী সার গুদামে ঢুকানোর বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি গুদাম কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর শিরোইল এলাকায় অবস্থিত বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন গুদামে সরেজমিনে দেখা যায়, গুদামে আসা ইউরিয়ার ট্রাকগুলো ইতোমধ্যে সরানো হয়েছে। সর্বশেষ সরানো ট্রাকটি বেরিয়ে যেতে দেখা যায় বেলা ১টার দিকে।

গুদাম সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী ও নওগাঁ জেলার মান্দাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার প্রায় ১১৪ জন ডিলার এই গুদাম থেকে সার সংগ্রহ করে। প্রতিটি ৫০ কেজির বস্তায় সার কম পাওয়া গেছে প্রায় ৫ থেকে ৭ কেজি। এছাড়াও কিছু বস্তার সার পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে।

এসব শক্ত জমাটবাঁধা সারের বিষয়ে রাতেই রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কে জে এম আব্দুল আউয়ালকে জানায় বাফার গুদাম কর্তৃপক্ষ। উভয় পক্ষ থেকেই জমাট বাঁধা সার গ্রহণে আপত্তি তোলা হয়। ফলে সারা রাত গুদামের সামনে ট্রাক আটকে থাকে। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় ফেরত যায় সবগুলো সারের ট্রাক।

এবিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, বাফার গুদামে আসা ইউরিয়া সার জমাট বাঁধা ও অনুপযোগী হওয়ায় সেগুলো গুদামে নামাতে দেওয়া হয়নি। কৃষি বিভাগ জমাট বাঁধা সার ব্যবহার অনুপযোগী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কি পরিমাণ সার এসেছিল বা ফেরত গেছে জানতে চাইলে সে বিষয়ে কৃষি বিভাগ ভালো বলতে পারবে বলেও জানান তিনি।

রাজশাহী বাফার গুদামের ইনচার্জ সাজেদুর রহমান বলেন, সারগুলো জমাট বাঁধা তাই সেসব সার নেই নি। কৃষকেরা এসব সার কিনবে না। যে সার ফ্রি দিলেও নেবে না, সে সার নিয়ে কি করব? এর আগেও নবাব এন্ড কোং লিমিটেড আমাদের গুদামে সার দিয়েছে। তবে এবারের চালানের সার থেকে পানি ঝরছিল। পানিতে ভেজা সার গুদামে নেওয়া অযৌক্তিক, আর সারগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যাওয়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।

গুদামের সহকারী ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন, ইউরিয়া সার নাইট্রোজেন গ্যাস আর পানি দিয়ে তৈরি হয়। ৬৪ ভাগ নাইট্রোজেন থাকলেই ভেজাল হয় না। কিন্তু যেসব সার এসেছিল সেগুলো পানিতে ভিজে প্রতিটি বস্তা পাথরের মতো শক্ত হয়ে গিয়েছিল। তাই আনলোড করতে দেইনি। পানিতে ভিজলে সারের গুণগত মান ঠিক থাকে কিন্ত ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে শুকিয়ে এসব সার ব্যবহার উপযোগী করা যাবে।

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখার সভাপতি আবুল কালামের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে চাইলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। গুদামের প্রত্যক্ষদর্শী আনোয়ার হোসেন ও মেহেদী হাসান জানান, এর আগে কখনও সারের ট্রাক থেকে পানি ঝরতে দেখিনি। এবার যেসব ট্রাক এসেছিল বেশির ভাগ ট্রাক থেকেই পানি ঝরছিল। পরে শুনলাম সেসব ট্রাক ফেরত পাঠানো হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কে জে এম আব্দুল আউয়াল বলেন, বিসিআইসির অধীনে বাফার গুদাম। এটা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। আমি এবং জেলা প্রশাসক মহোদয় সারের বিষয়টি জানতে পারি এবং ঢাকায় ফেরত পাঠাই। মূলত সার লোড করার সময় পানি পড়ছিল। এতে সারের গুণগত মান পরিবর্তন হবে না বরং জমাট বাঁধার কারণে কৃষক এটা ব্যবহার করতে পারবে না। পরবর্তীতে এই সার রিব্যাগিং করে আবারও ব্যবহার উপযোগী করে তোলা যাবে।

  • 65
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে