কঠোরতম লকডাউনে দেশ

প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২১; সময়: ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ |
খবর > জাতীয় / লিড

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বাংলাদেশের মানুষ ঈদ করবে বলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর নিত্যনতুন রেকর্ডের মধ্যেই লকডাউনে নয় দিনের বিরতি দিয়েছিল সরকার। সেই ছুটি শেষে আবার বিধিনিষেধ জারি হয়েছে সারা দেশে; জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর ভাষায় যা হবে ‘কঠোরতম’।

এই লকডাউন নিশ্চিত করতে আগেরবারের মতই আইন শৃংখলা বাহিনীর সঙ্গে মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী। ‘অতি জরুরি’ প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হওয়া মানা। শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে ৫ অগাস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত এবারের লকডাউন চলবে। ঈদের পর বিধি-নিষেধ আরোপ পিছিয়ে যেতে পারে বলে গুঞ্জন চললেও বৃহস্পতিবার তা নাকচ করে দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

তিনি বলেন, বিধি-নিষেধ শিথিলে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এখন কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই। এ সময়ে সবচেয়ে কঠোরতম অবস্থানে আমরা থাকব। এছাড়া আমাদের উপায় নেই। কারণ ঈদের আগে মুভমেন্টটা বেশি হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এর বিকল্প নেই।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঈদে যারা বাড়ি গেছে তারা থেকে আসুক ৫ অগাস্ট পর্যন্ত, কারণ সবকিছুই তো বন্ধ। এবারের লকডাউনে সব অফিস আদালতের মত শিল্প কারখানাও বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি বন্ধ থাকবে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সব ধরনের যানবাহন।

সরকারি কর্মীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থেকে ডিজিটালি দাপ্তরিক কাজ সারতে বলা হয়েছে। আগেরবারের তুলনায় দুই ঘণ্টা সময় কমিয়ে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত কাঁচাবাজার খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

মহামারীর দেড় বছরে এখনই সবচেয়ে বিপর্যস্ত অবস্থা চলছে বাংলাদেশে। করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে গত এপ্রিল থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল। মে মাসে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও জুলাই মাসে এসে আগের সব রেকর্ড ভাঙছে।

জুন মাসে যেখানে ১ লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। জুলাইয়ের ২২ দিনেই তা সোয়া ২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। জুনে ১ হাজার ৮৮৪ জনের মৃত্যুর বিপরীতে জুলাইয়ের ২২ দিনেই চার হাজারের বেশি মৃত্যু দেখতে হয়েছে দেশবাসীকে।

এবারের ২৩ বিধিনিষেধ

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার থেকে দুই সপ্তাহের লকডাউনের বিধিনিষেধ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গত ১৩ জুলাই এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনা ভাইরাসজনিত সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো। এ সময় বিধিনিষেধের আগের কিছু শর্তের সঙ্গে নতুন শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। শর্তগুলো হলো-

১. সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসসমূহ বন্ধ থাকবে।
২. সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব প্রকার যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
৩. শপিংমল/মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে।
৪. সব পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
৫. সকল প্রকার শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকবে।
৬. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক (বিবাহ, বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে

৭. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৮. ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৯. সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং দাপ্তরিক কাজসমূহ ভার্চুয়ালি (ই-নথি, ই-টেন্ডারিং, ই-মেইল, এমএমএস, হোয়াটসঅ্যাপ-সহ অন্যান্য মাধ্যমে) কাজ সম্পাদন করবেন।

১০ আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষিপণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস-জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তাব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসহ অনান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।

১১. বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে হিসাব সংরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
১২. জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক/লরি/কাভার্ড ভ্যান/নৌযান/পণ্যবাহী রেল/ফেরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।
১৩. বন্দরগুলো (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিস এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।
১৪. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

১৫. অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১৬. টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।
১৭. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে।
১৮. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট/প্রমাণক প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবেন।
১৯. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে।

২০. ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
২১. জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি/কোস্টগার্ড, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেসঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।

২২. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখাক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
২৩. সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮-এর আওতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।

  • 169
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে