পাবনায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা, নিন্দার ঝড়
নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা : সংবাদ প্রকাশে ক্ষুব্ধ হয়ে পাবনা প্রেসক্লাব সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার আজিজুল হক আরজু। তিনি পাবনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫(২), ২৯ ধারায় তিনি এই মামলাটি দায়ের করেন। যার নং ২৪৫/২০২১। ঢাকার বিজ্ঞ সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়।
সৈকত পাবনা প্রেস ক্লাবের সম্পাদক এবং সময় টিভি, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’র পাবনা প্রতিনিধি এবং পাবনামেইল টোয়েন্টিফোর ডটকম এর সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পরিদর্শক মিজানুর রহমান এর মাধ্যমে মামলার বিষয়টি পাবনার গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে পারেন।
মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন এবং প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন পাবনা প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তারা অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলেন, যে কোন সংবাদ প্রকাশ হলেই সাবেক এমপি আরজু খন্দকার গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সাথে অশোভন আচরণ করেন। অনৈতিক প্রস্তাবের মাধ্যমে সংবাদ বন্ধ করার চেষ্টা করেন, তাতে রাজি না হলে মামলা হামলারও ভয় দেখান। সেই ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার করে অসত্য অভিযোগে পাবনা প্রেসক্লাব সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এতে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের স্বাধিনতার বিরুদ্ধে তিনি অবস্থান নিয়েছেন বলে সাংবাদিকরা মনে করে।
যুক্ত বিবৃতিতে সাংবাদিকরা আরো বলেন, আরজু খন্দকার যে সংবাদটি উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করেছেন, তা প্রকাশের আগে সাংবাদিকতার নীতিমালা মেনে তার বক্তব্য নিয়ে ঐ সংবাদে প্রকাশ ও করা হয়েছে। দেশের মূলধারার অধিকাংশ গণমাধ্যমগুলিতে একই সংবাদ প্রকাশিত হলেও সম্পূর্ণ আক্রোশ:বশত কেবল পাবনা প্রেসক্লাব সম্পাদকের বিরুদ্ধেই তিনি মামলাটি দায়ের করেছেন।
পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান বলেন, অবিলম্বে মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত মামলাটি প্রত্যাহার না হলে জেলার সকল সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে কর্মসূচী দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের গত ৮ মার্চ বেড়া উপজেলার নাটিয়াবাড়িতে একটি অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে অবৈধ অস্ত্র ও জড়িত দু’জনকে আটক করা হয়। এ বিষয়ে পরদিন বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদে ‘সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজুর ভাতিজার বাড়িতে অভিযান’ চালানো হয়েছে উল্লেখ থাকায় সংক্ষুব্ধ হন সাবেক ওই সাংসদ।
এই মিথ্যা ও হয়রানী মামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক রণেশ মৈত্র, পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি, সাবেক সভাপতি অধ্যাপক শিবজিত নাগ, সিনিয়র সহসভাপতি মীর্জা আজাদ, পাবনা সংবাদপত্র পরিষদ সভাপতি আব্দুল মতীন খান, সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান শহীদ, পাবনা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান স্বপন, সাধারণ সম্পাদক কাজী মামবুব মোর্শেদ বাবলা, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি, পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম।
এছাড়াও পাবনা টেলিভিশন সাংবাদিক সমিতির আহবায়ক একুশে টিভির প্রতিনিধি ও মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টার রাজিউর রহমান রুমী, পাবনা টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রিজভী জয়, ইয়াং জার্নালিষ্ট ফোরামের সভাপতি তারেক খান, সাধারণ সম্পাদক রনি ইমরান, ডেইলি অবজারভার প্রতিনিধি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. নরেশ চন্দ্র মধু, পাবনা চেম্বারের সভাপতি মো. সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরী, সহসভাপতি ফোরকান রেজা বিশ্বাস বাদশা।
আরও নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন, মাছরাঙা টিভির উত্তরাঞ্চলীয় ব্যুরো প্রধান উৎপল মির্জা, শীর্ষ নিউজ প্রতিনিধি কামাল আহমেদ সিদ্দিকী, বাংলাভিশন প্রতিনিধি আখিনুর ইসলাম রেমন, দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিনিধি রুমী খোন্দকার, দৈনিক কালের কন্ঠ ও নিউজ ২৪ প্রতিনিধি আহমেদ উল হক রানা, দ্যা ডেইলী ষ্টার প্রতিনিধি আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু, দৈনিক প্রথম আলো প্রতিনিধি সরোয়ার উল্লাস, দৈনিক জনকন্ঠ প্রতিনিধি কৃষ্ণ ভৌমিক, যমুনা টিভি প্রতিনিধি সিফাত রহমান সনম, চ্যানেল ২৪ ও আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি শাহীন রহমান, দৈনিক করতোয়া প্রতিনিধি ইয়াদ আলী মৃধা পাভেল, এসএ টিভি প্রতিনিধি কলিট তালুকদার, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি প্রতিনিধি খাইরুল ইসলাম বাসিদ, গাজী টিভি প্রতিনিধি ইমরোজ খন্দকার বাপ্পিসহ পাবনার সকল গণমাধ্যমকর্মীরা।
60