বঙ্গমাতা

প্রকাশিত: ০৭-০৮-২০২১, সময়: ১৩:৩১ |

উনিশ শো তিরিশের আট আগস্ট ভর দুপুরে
জলমলে আলোতে অজপাড়া গাঁর আকাশে
এক ধ্রুবতারার উদয়।
দাদা আবুল কাশেম নাম রাখলেন
ফিজিলাতুন নেছা, আর মা আদর করে
ডাকতেন রেনু।

তিন বছর বয়স,
বাবার আতর স্মৃতিতে ঠাঁই না পেতেই
পরপারে চলে গেলেন শেখ জহুরুল।

সেই ছোটকালে পুতুল বিয়ের বয়সও
হয়নি যার, সেদিনের শেখ মুজিব
অনন্তকালের বঙ্গবন্ধু জীবনসঙ্গী হলেন তাঁর।

বঙ্গবন্ধুর জীবনের পলে পলে যার উপস্থিতি
ভাষা আন্দোলন, ভয়াবহ যুদ্ধ, স্বাধীন
বাংলাদেশ প্রকৃতি নারীর নীরব প্রতিনিধি।

এক সাগর রক্তে স্বাধীন সুর্যোদয়,
অতঃপর নির্যাতিতদের পুনর্বাসন-
বীরাঙ্গনাদের বিয়ে ছিল জননীর প্রত্যয়।

এরপর ৭৫’র ১৫ আগস্ট মিশকালো রাত-
বাঙ্গালীর আজন্ম ভালবাসার কাঙ্গাল বঙ্গবন্ধু;
বলেটের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত।
শহীদ বঙ্গবন্ধুর তাজা রক্তে ভেজা বাংলাদেশ;
যেন স্বাধীনতার কথা পতাকার কথা
মানচিত্রের কথা বলছে।

নিথরদেহ লুটায়ে সিঁড়িতে, মাতা মহিয়সীর আবদার
হায়েনার দরবারে-বঙ্গবন্ধুর সাথেই রাখতে।

স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, পুনর্বাসনে জাতিকে
দিয়েছে প্রাপ্তি আর প্রত্যাশা-বাংলাদেশ নামে
সেই পিস্টনও খুন হলো স্বদেশ পিশাচে।

এরপর হায়েনার শরীকদের উল্লাস
ঘটনার পর ঘটনা, রটনার পর রটনা,
ঘোষণার পর ঘোষণা; যেন উলঙ্গ হতে
প্রত্যাশায় হাজার বছরের প্রাপ্তি মেড়ে
মিথ্যার ফুলঝুড়িতে নিশান উড়ালো রাষ্ট্রযন্ত্র।

বঙ্গবন্ধুর যোবনের দিনগুলো কাটে কারাগারে
বাঙালীকে মুক্তির প্রত্যাশায় স্বামীকে বাঁধেনি
সংসারে।
বঙ্গবন্ধুর দুটি অবলম্বন; যার
একটি আত্মবিশ্বাস অন্যটি একান্তের রেনু।
অমোঘ ধৈর্যের প্রতিক-
একদিকে সন্তানদের গড়ে তোলা;
অন্যদিকে নেতাদের আতিথেয়তা,
জাতির পিতার মক্তি; সবই তাঁর
জীবন দর্পনে অদম্য দর্শন, বঙ্গবন্ধুর
দেশ স্বাধীনের স্বপ্নধরার সাথী
পরশে বাংলায় সজীবতা।

নির্ভয় আশ্রয়, মহান স্বাধীনতার স্থপতি
বঙ্গবন্ধু পেতেন অকৃত্রিম প্রেরণা-সাহস
উৎসাহ ভালবাসা-
সবার অজান্তে একেবারে একান্তে
সেই অমিয় বাণী; শুনেছিলেন অগ্রে-
এবারের সংগ্রাম মুক্তির, এবারের
সংগ্রাম স্বাধীনতার-
সেই মহিয়সী, জাতির পিতার জীবন্ত
ডায়েরি ছিলেন আমাদের বঙ্গমাতা।

লেখক :

সরকার দুলাল মাহবুব,

শিক্ষক ও সাংবাদিক।

উপরে