আগস্টে বাড়বে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু

প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২১; সময়: ১০:৫৭ অপরাহ্ণ |

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : দেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১.৬৬ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতিদিন ১০ হাজার লোক আক্রান্ত হলে তাদের মধ্যে ১৬৬ জন মারা যাচ্ছেন। বর্তমানে দৈনিক গড়ে ২৩৫ থেকে ২৫০ জন মারা যাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঈদুল আজহায় ভিড় করে বাড়ি ফেরা, পশুর হাটের ভিড় এবং হঠাৎ পোশাক কারখানাগুলো খোলার সংবাদে যেভাবে জনসমাগম হয়েছে তাতে সংক্রমণ আরও বাড়বে। একই অনুপাতে বাড়বে মৃত্যুর সংখ্যাও।

বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশেষজ্ঞরা জানান, সর্বশেষ ২৩ জুলাই থেকে জারি করা লকডাউন অত্যন্ত কার্যকর ছিল। সংক্রমণ কমে আসার ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছিল। তবে হঠাৎ পোশাক কারখানা খোলার সিদ্ধান্তে যেভাবে মানুষের ঢল ঢাকার দিকে এসেছে, তাতে ঢাকায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। ভয়াবহ হতে পারে ঢাকার পরিস্থিতি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২ আগস্ট সারাদেশে ২৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৬ হাজার। এছাড়া ১ আগস্ট প্রাণ হারিয়েছেন ২৩১ জন, ৩১ জুলাই এ সংখ্যা ছিল ২১৮। ৩০ জুলাই ২১২, ২৯ জুলাই ২৩৯, ২৮ জুলাই ২৩৭, ২৭ জুলাই ২৫৮ ও ২৬ জুলাই ২৪৭ জন মারা যান। গত ৭ জুলাই প্রথমবারের মতো দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়ায়। এদিন মৃত্যু হয় ২০১ জনের। এরপর থেকে এ সংখ্যা বাড়ছেই।

আইইডিসিআর’র সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, কোরবানির ঈদের আগে যে শিথিলতা ছিল, এর প্রভাব আগস্ট মাসের প্রথম পাক্ষিকে (১৫ তারিখের মধ্যে) দেখা যাবে। এছাড়া পোশাক কারখানা খোলার সংবাদে গত কয়েক দিন ধরে যে পরিমাণ সমাগম হয়েছে, এটিও করোনার সংক্রমণ বাড়াবে। অনেকেই গাদাগাদি করে ঢাকায় এসেছেন।

তিনি আরও বলেন, জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে পশুর হাট বসানো হলো। লোকজন জমায়েত করে বাড়ি ফিরল। ঈদের জামাত হলো। আবার জমায়েত করে ঢাকায় ফিরল। এসব কারণে মূলত সংক্রমণ বেড়েছে। তবে প্রতিনিয়ত আমাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি না মানা। সেখানে অনেকেই ঘন ঘন হয়ে বসছেন। বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য আমাদের আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এটি আমরা বাড়িতে বসেই করতে পারি।

‘ভারতে জোর করে হিন্দুরা কুম্ভ মেলা করল। সরকারও ধর্মীয় অনুভূতির কথা বিবেচনায় নিয়ে অনুমতি দিল। অথচ সেখান থেকেই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব হলো। বাংলাদেশেও সমাগম করে ঈদের জামাত হয়েছে। মসজিদে মসজিদে প্রতিনিয়ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হচ্ছে। এসব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা না গেলে সংক্রমণ কমানো যাবে না।’

সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা ওঠা-নামা করতে দেখছি। বাস্তবে এটি কমছে না, বরং বাড়ছে। দেশে করোনায় আক্রান্ত ১.৬৬ শতাংশ রোগী মারা যাচ্ছেন। বর্তমানে দৈনিক ১০ থেকে ১৫ হাজার শনাক্ত এবং ২০০ জনের বেশি মারা যাচ্ছেন। আক্রান্তের সংখ্যা যত বাড়বে মৃত্যুর হারও সেই অনুপাতে বাড়তে থাকবে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ঢাকা জেলায়। গত ২ আগস্ট পর্যন্ত চার লাখ ৪১ হাজার ৪৯১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এখানে নমুনা দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৯ ভাগই করোনা পজিটিভ। এছাড়া রাঙ্গামাটিতে দ্রুতগতিতে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। গত ২৬ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত এ জেলায় ২১১ জন নমুনা দিয়ে পজিটিভ হয়েছেন ১৮০ জন। সংক্রমণের হার প্রায় ৮৫ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘আমাদের লকডাউনটা (কঠোর বিধিনিষেধ) ভালো হচ্ছিল। প্রথম চার-পাঁচ দিনে মনে হয়েছিল, এভাবে চলতে থাকলে আগস্টের শেষের দিকে সংক্রমণ কমে আসবে। কিন্তু পোশাক কারখানা খুলে দিয়ে সমস্যা হয়ে গেল। আবারও সমাগম হলো। ফলে আক্রান্তের বিষয়টা আরও ১৪ দিনের মধ্যে জানা যাবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে একটা সুফল পাব। কিন্তু এখন সেটা মনে হচ্ছে না। বর্তমানে শনাক্তের হার প্রায় ৩০ শতাংশ। ভেবেছিলাম লকডাউনের ফলে এ হার ধাপে ধাপে কমবে। কিন্তু পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ায় হিসাবটা এলোমেলো হয়ে গেল। আমি আগস্টে সংক্রমণ কোনোভাবেই কমার সম্ভাবনা দেখছি না। লকডাউনটা যেভাবে শুরু হয়েছিল, সেভাবে শেষ হলে সংক্রমণটা আগস্টের শেষ সপ্তাহে কমে আসত।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানা কারণে সবাইকে বাসায় আটকে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। এর বিকল্প হিসেবে বড় একটি জনগোষ্ঠীকে ভ্যাক্সিনের আওতায় আনার কথা বলছেন তারা।

ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, অকারণে মানুষের চলাফেরা, সমাগম ও ঘোরাফেরা বন্ধ করতে হবে। এছাড়া দেশের ৪০ থেকে ৫০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনা না গেলে খুব একটা উন্নতির আশা করা যাচ্ছে না।

  • 259
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে