এখনও ছাত্রশিবিরকে চাঁদা দেন নগর যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক

প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২১; সময়: ১২:০১ পূর্বাহ্ণ |
এখনও ছাত্রশিবিরকে চাঁদা দেন নগর যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী মহানগর যুবলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে ছাত্র জীবনে ছাত্রশিবিরের নেতা থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি তিনি এখনও নিয়মিত ছাত্রশিবিরকে চাঁদা প্রদান করে আসছেন। চলতি বছরের মার্চ মাসেও তিনি ছাত্রশিবিরের চাঁদা পরিশোধ করেছেন।

অভিযুক্ত ওই যুবলীগ নেতার নাম মাহামুদ হাসান খান ইতু। তিনি রাজশাহী মহানগর যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক। যুবলীগে থাকা অবস্থাতেও ছাত্রশিবিরের সাথে সম্পর্ক জিইয়ে রেখেছেন এবং এখনো নিয়মিত ছাত্রশিবিরকে চাঁদার আড়ালে সংগঠনটিকে আর্থিক ভাবে সহযোগীতা করে চলেছেন। তার বিরুদ্ধে চলতি বছরের ৪ মার্চ ৩০ টাকা এবং ১৯৯৯ সাল থেকে ২০ টাকা করে চাঁদা দেওয়ার বেশ কিছু রশিদ গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। এ সময়ের মধ্যে তিনি ছাত্রশিবিরকে নিয়মিত চাঁদা দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির লেখা একটি রশিদে দেখা যায়, ২০০০ সালে ২৯৫ ও ২৯৬ নম্বর ক্রমিকের রশিদে ৩০ টাকা ও ৫০০ টাকা আদায় করা হয়েছে। ৩৪৩ নম্বর ক্রমিকের রশিদে গত ৪ মার্চ ৩০ টাকা ইয়ানত আদায় করা হয়েছে। এতে দাতা হিসেবে মাহামুদ হাসান খান ইতুর নাম লেখা আছে।

১৯৯৯ সালে ৪০ নম্বর ক্রমিকের রশিদে ২০ টাকা দেয়া হয়েছে। আদায়কারী হিসেবে নরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তির স্বাক্ষর দেখা গেছে। আর শাখার নাম লেখা আছে রাজশাহী মহানগরীর লিচুবাগান। এই শাখার আয়ের হিসাব নামের আরেকটি কাগজে দেখা যাচ্ছে, রশিদে জমা নেওয়া ওই টাকার হিসাব লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সেখানেও ইতুর নাম লেখা। তার নামের পাশে উল্লেখ আছে ‘কর্মী’।

মহানগর যুবলীগের একাধিক নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইতুর সাথে শিবিরের সম্পৃক্তরাত কথা স্বীকার করে জানান, তার শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে এখনো, তাই চলতি বছরেও তার চাঁদা দেওয়ার রশিদ দেখা যাচ্ছে।

যুবলীগের এক নেতার ছেলেন বন্ধু হবার সুবাদে ও বিভিন্ন লবিংকে কাজে লাগিয়ে ২০১০ তিনি মহানগর ছাত্রলীগের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদকের পদটি বাগিয়ে নেন। এর পর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি ইতুকে। দলে পুরাতন কর্মী ও নেতা থাকার পরও ২০১৬ সালে রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সম্মেলনে লবিংয়ের মাধ্যমে অল্প বয়সেই ইতু দপ্তর সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ পান।

তবে ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রী কলেজে এইচএসসিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ইতু ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে একাধিক সূত্রে তথ্য পাওয়া গেছে। বিষয়টি জানাজানির পর নড়ে চড়ে বসেছে রাজশাহী মহানগর যুবলীগ।

রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নিউ গভ. ডিগ্রী কলেজে ইতু ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করার সময় ওই কলেজে ছাত্রশিবিরের নেতা ছিলেন ইশরাফুল আলম ইমন এবং গোলাম মোর্ত্তজা। ইমন পরবর্তীতে ছাত্রশিবিরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ইতুও সে সময় রাবিতে অধ্যয়নরত ছিলেন। মোর্ত্তজা পরবর্তীতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদকের পদ পান।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ইমন এবং মোর্ত্তজা ছাত্রশিবিরের দুধ্বর্ষ ক্যাডার ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে ২০১৩-১৪ সালেও নাশকতামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আর নিউ গভ. ডিগ্রী কলেজের সাবেক ছাত্রশিবির নেতা ইমন এবং মোর্ত্তজার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন এই ইতু।

নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে যুবলীগ নেতা ইতু জানান, তিনি ওই চাঁদার রশিদ দেখেছেন। তিনি দাবি করেন, ছাত্রশিবিরকে চাঁদা প্রদানের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্য ও ষড়যন্ত্রমূলক।

তিনি সাংবাদিককে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, চাঁদার রশিদটা মিলিয়ে দেখলেই হবে, চাঁদার রশিদ কি আসলেই এমন হয়?

  • 419
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে