করোনার ভয়াল থাবায় গতিহীন রাজনীতি

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২১; সময়: ২:০৩ অপরাহ্ণ |
করোনার ভয়াল থাবায় গতিহীন রাজনীতি

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : করোনার ভয়াল থাবা পড়েছে রাজনৈতিক তৎপরতায়ও। এক সময়কার সরগরম রাজনীতির ময়দান এখন সুনসান। সভা-সমাবেশ কিছু নেই। নেই নেতাদের ঘিরে কর্মী-সমর্থকের চাঞ্চল্য। তবে করোনাকালীন সময়ে ত্রাণ তৎপরতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন সচল রাখার চেষ্টা করছে বিভিন্ন সংগঠন।

এছাড়া ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন, আলোচনা সভা চালিয়ে যাচ্ছে কোনো কোনো দল। যদিও গোনা কয়েকটি দল ছাড়া বাকি দলগুলো অনেকটাই নিরবতা পালন করছে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনার দাপটে প্রায় সব দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডই থমকে গেছে। এরই মধ্যে দেশের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের বহু নেতাকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কেউ কেউ সুস্থ হয়ে উঠলেও অনেকে মারাও গেছেন। এতে করোনার চাপা আতঙ্কও বিরাজ করছে রাজনৈতিক মহলে।

করোনার ভয়াল থাবায় স্থবির রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সীমিত কর্মসূচি পালন করলেও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রেখেছে। গত বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে জমকালো আয়োজনের প্রস্তুতি থাকলেও করোনার আঘাতে সেই কর্মসূচি সীমিতভাবে পালিত হয়।

ওই বছরের শেষ দিকে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু হলেও চলতি বছরের শুরুতে আবারো অবনতি হলে তা থমকে যায়। তবে করোনা মোকাবেলা ও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থেকে ব্যাপক সক্রিয় রয়েছে দলের নেতাকর্মীরা। চলমান শোকের মাস আগস্টেও দলীয় কর্মসূচিও পালিত হচ্ছে সীমত পরিসরে। তবে বৃহৎ পরিসরে আওয়ামী লীগ মানবিক কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে দাবি করছেন দলটির নেতারা।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দল আওয়ামী লীগ। দলীয় কার্যক্রম সীমত হলেও বৃহৎ পরিসরে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে অসহায় মানুষকে সহায়তা দিতে দলের প্রত্যেকটা নেতাকর্মী এখন মাঠে রয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, সহযোগী সংগঠনগুলো করোনার সুরক্ষা সারঞ্জাম বিতরণ থেকে শুরু করে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে নিয়োজিত রয়েছেন। করোনার এই দু:সময়ে মানবিক কর্মসূচিই হলো আওয়ামী লীগের রাজনীতি। যেকোন দুর্যোগে মানুষের পাশে দাড়ানোই দলের ঐতিহ্য। এই ঐহিত্য ধরে রাখতে করোনায় দলের বহু নেতাকর্মী করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করেছেন। এরপরও দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা মাঠে রয়েছেন।

এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি করোনার ভয়াল থাবায় যেন আরো পিছিয়ে যাচ্ছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দাবিতে আন্দোলন ও সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশসহ সব ধরণের কর্মসূচি স্থগিত রেখেছে বিএনপি।

করোনার কারণে দলটির সাংগঠনিক তৎপরতাও বন্ধ রয়েছে। স্থগিত রয়েছে সংগঠনের পুনর্গঠন প্রক্রিয়াও। তবে বিএনপির শীর্ষ নেতারা প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পৃক্ত থেকে সীমিত পরিসরে কর্মসূচি পরিচালনা করছেন। ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন ও আলোচনা সভাও চালাচ্ছে দলটি। নিয়মিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ড ও ইস্যুও প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে বিএনপি।

তবে করোনাকাল দীর্ঘায়িত হওয়ায় ক্রমেই যেন নিষ্ক্রিয় হচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। ফলে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র সর্বস্তরেই চলছে একধরণের স্থবিরতা। যদিও করোনাকালে দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে সরব রয়েছে বলে জানায় বিএনপির নেতারা।

এছাড়া দলীয় নেতাকর্মীরা ত্রাণ নিয়ে সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন বলেও জানান তারা। দলটির শীর্ষ নেতাদের দাবি, করোনায় দলের কেউ বসে নেই। সকলেই ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সভা ও আলোচনা অনুষ্ঠান ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

করোনাকালে দলীয় রাজনৈতিক তৎপরতার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, করোনায় ভুক্তভোগী মানুষের জন্য কাজ করতে বিএনপির নেতাকর্মীরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। দলীয় কর্মকাণ্ড স্থবির রেখে করোনা মোকাবিলায় সচেষ্ট আছে বিএনপি।

করোনায় বিএনপির মতো একই ধাঁচে চলছে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও (জাপা)। করোনায় বন্ধ রয়েছে সভা-সমাবেশ। দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানো এবং সাংগঠনিক বিভাগগুলোকে চাঙ্গার করার উদ্যোগের কথা বলা হলেও তা কার্যত বন্ধ রয়েছে। করোনা মোকাবিলায় সংসদের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে পার্টির ভূমিকা নিয়েও মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে খোদ নেতাদের মধ্যেই।

ফলে সমালোচনা এড়াতে মাঝেমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে করোনা মোকাবেলায় সরকারকে পরামর্শ দেয়ার চেষ্টা করছে জাপার চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। যদিও করোনাকালের বিগত সময়গুলোতে রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে পারিবারিক কোন্দলে ব্যস্ত রয়েছে জাপা।

সম্প্রতি জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পুত্র এরিক এরশাদ। এতে কো-চেয়ারম্যান হিসেবে এরশাদের সাবেক সহধর্মিনী বিদিশা সিদ্দিক ও এরশাদের আরেক পুত্র রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদকে করা হয়।

যদিও রওশন এরশাদকে না জানিয়েই তাকে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়েছে এবং তিনি চেয়ারম্যান হতে আগ্রহী নন বলে জানান জাপার চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

অন্যদিকে রওশন এরশাদ নিরব ভূমিকা পালন করছে। উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়েই দলের ভেতর অস্থিরতা বিরাজ করছে। তবে দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের দৃশ্যমান কোন কর্মসূচি নেই।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মৃত্যুদণ্ড হওয়ার পর অনেকটাই নিষ্ক্রিয় রয়েছে দলটি। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিছুটা সক্রিয় হলেও দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ব্যবহার করায় উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় আরেক দফা ধাক্কা খায় দলটি।

পরবর্তীতে জোট সঙ্গী বিএনপির ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে নির্বাচন করেও ভরাডুবি হলে আরো পিছিয়ে যায় জামায়াত। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেই বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করলেও চলমান করোনা মহামারিতে অনেকটাই গর্তের মধ্যে পড়ে যায় জামায়াত।

যদিও সুত্র বলছে, করোনাকালে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বেশ সক্রিয় রয়েছেন।

এদিকে করোনার থাবায় কমিউনিস্ট পাটি (সিপিবি)সহ বিভিন্ন বাম রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকান্ড স্থবির হয়ে গেছে। বিভিন্ন ইস্যুতে রাজপথে তারা বেশ সক্রিয় থাকলেও এখন বন্ধ রয়েছে তাদের সেই পদচারনা।

তবে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রক্রিয়া ও পরামর্শ এবং ইস্যু ভিত্তিক বিবৃতি দিয়ে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করছেন বামনেতারা। বামদলগুলো ছাড়াও ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোও বিবৃতি দেয়ার মধ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি সীমিত রেখেছে।

  • 393
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে