সেই চিরচেনা রাজশাহী

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২১; সময়: ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ |
সেই চিরচেনা রাজশাহী

তারেক মাহমুদ : প্রায় দুই মাস পর রাজশাহীতে খুলেছে দোকান ও শপিংমল। রাজশাহীর রেলওয়ে স্টেশন থেকে নির্ধারিত গন্তব্যে ছেড়েছে ট্রেন এবং টার্মিনাল থেকে বাস। খুলেছে সব ধরনের দোকানপাট। সরকারি- বেসরকারি সব অফিস খুলেছে। সর্বত্রই প্রাণচাঞ্চল্য, মানুষের কর্ম ব্যস্ততা। বুধবার (১১ আগস্ট) ও (বৃহস্পতিবার ১২ আগস্ট) সেই চিনচেনা রাজশাহীকে দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশেষ লকডাউনের কারণে দীর্ঘ দুই মাস পর রাজশাহীতে শতভাগ আসন নিয়ে ট্রেন ও বাসে যাত্রীরা নির্ধারিত গন্তব্যে যাওয়ার আগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উঠেছে। কিন্তু যাত্রা শুরু করার আগে আসনে বসে কিছু যাত্রী তাদের মুখের মাস্ক খুলে ফেলেছেন। যাত্রীদের মতই একই অবস্থা ছিল লক্ষ্য করা গেছে বাস-ট্রেনের চালক ও স্টাফদেরও ক্ষেত্রেও। এমনকি স্টেশন ও বাস কাউন্টারের পরিবহণের অপেক্ষায় থাকা যাত্রিস্থানে এবং টিকিট বিক্রি ও পরিবহনে উঠার সময় ভিড় ছিল। অন্যদিকে নগরীর বাজারের অনেক দোকান ও শপিংমলে প্রবেশ করার সময় স্বাস্থ্যবিধি লক্ষ্য করা গেলেও ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মাঝে সামাজিক দূরত্বটা অনেকটা ছিল না।

জানা গেছে, টানা ১৯ দিনের বিধিনিষেধ শেষে বুধবার থেকে সারাদেশে লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। দেশের অন্যান্য স্থানের মানুষ ১৯ দিন বিধিনিষেধের মধ্যে পড়লেও রাজশাহীতে ছিল প্রায় দু’মাস। করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ১১ জুন আগেভাগেই স্থানীয় প্রশাসন রাজশাহীতে লকডাউন ঘোষণা করেছিল। সেই লকডাউন থাকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত। এর পরদিন ১ জুলাই থেকেই সারাদেশে বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার।

ইদের আগে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই ভোর ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। এরপর তা বেড়ে ১০ আগস্ট পর্যন্ত হয়। কার্যত প্রায় দু’মাস বিধিনিষেধের মধ্যেই ছিল রাজশাহী। সেটি শিথিল হওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। রাজশাহী সিরোইল বাসস্ট্যন্ড ও ভদ্রা রেলগেট ও রেলস্টেশনে যানবহন চলাচলের চিত্র দেখা গেছে। এছাড়াও সকাল থেকেই চালু হয়েছে সরকারি-বেসরকারি অফিসসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। খুলেছে মার্কেট, শপিংমল ও দোকানপাট। কিন্তু এই তিনটি স্থানে সঠিক স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই।

বুধবার (১১ আগস্ট) নগরীর সিরোইল বাসস্ট্যান্ড ও রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায় মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই গাদাগাদি করে কার্যক্রম করছে। বেলা ১১ টায় রেলস্টেশনে মানুষ টিকিট কাটতে গিয়ে মানেনি স্বাস্থ্যবিধি। সামাজিক দূরত্বের জন্য যে লাল দাগ দেওয়া রয়েছে সেখানে না দাঁড়িয়ে গা ঘেষাঘেষি করে টিকিট কেটেছে। কয়েকজন যাত্রি জানান, ব্যস্ততার জন্য লাল দাগ মানা যায়নি। এ রকম আরো অজুহাত দেখাচ্ছে মানুষ। সেখানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি না মানার জন্য কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি। ঢাকা বাসস্ট্যান্ডেও একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।

এর মধ্যে অনেকে মাস্ক না পরেই চলাফেরা করেছে। অনেকে আবার মাস্ক পকেটে বা হাতে রেখে চলাচল করেছেন। ছোট ছোট যানবাহন গুলোতেও মানা হয়নি সামাজিক দূরত্ব। বেলা ১২ থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত নগরীর সাহেববাজার, কাপড়পট্টি, নিউ মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, মার্কেট গুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। রাস্তায় ও দোকানগুলোর সামনে অনেক মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মেনেইে পণ্য কিনেছেন। এতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তেমন তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি।

অপরদিকে নগরীর শিরোইল বাসস্ট্যান্ডে দেখা গেছে, সেখান থেকে সকাল ৬:১৫ মিনিটে দেশ ট্রাভেলস, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, হানিফসহ দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যেতে। তবে অধিকাংশ যাত্রীর মুখে মাক্স থাকলেও, পরিবহনে উঠার সময় সামাজিক দূরুত্ব মানছে না যাত্রীরা। সকালে রাস্তায় বাস চলাচল কিছুটা কম দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে যাত্রীদের চাপ বাড়তে শুরু করে।

নগরীর কোর্ট স্টেশন এলাকার ঢাকাগামী যাত্রী হাফিজ উদ্দিন জানান, ইদের আগে বাড়িতে এসেছি। লকডাউনের কারণে আর ফিরতে পারিনি। লকডাউন শিথিল হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে ফিরছেন প্রাণের শহর ঢাকায়। তবে তিনি অভিযোগ করেছেন স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে। অনেকেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও ঠিকমতো মাক্স ব্যবহার করছেন না। আবার অনেকে মাক্স নাকের নিচে রেখেছেন। জীবাণুনাশক স্প্রে করার কথা থাকলেও, বেশিরভাগ বাসে যাত্রী ওঠানোর সময় চোখে পড়েনি কোনো জীবাণুনাশক স্প্রে’র।

তবে রাজশাহী দেশ ট্রাভেলস, ন্যাশনাল ট্রাভেলস ও হানিফ কাউন্টারের ম্যানেজাররা জানান, ৪০ আসন এবং ৫০ আসনের বাসে নেওয়া হচ্ছে শতভাগ যাত্রী। কেউ দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন না। মাস্ক ছাড়া কোনো যাত্রীকে বাসে উঠানো হচ্ছে না। বাসে স্প্রে ছিটিয়ে যাত্রীদের বাসে ওঠানো হচ্ছে। মাস্ক না পরার বিষয়ে জানতে চাইলে দেশ ট্রাভেলস পরিবহনের চালক বলেন, এতক্ষণ মাস্ক পরেছিলাম। মাত্র একটু নাক থেকে নামিয়েছি। শ্বাস নিতে একটু সমস্যা হচ্ছিল তাই। আর সকালে বাস রাস্তায় নিয়ে নামার আগে পুরো বাসের সিটে জীবাণুনাশক স্প্রে করেছি। যাত্রীদের মাস্ক না থাকলে বাসে যাতায়াত করতে দিচ্ছি না।

অপরদিকে বুধবার (১১ আগস্ট) সকাল ৭ টায় নগরীর রাজশাহী রেল স্টেশন থেকে ৮০০ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন। এর আগে সকাল ৬:৪০ মিনিটে ৪৬৬ টি যাত্রী নিয়ে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ট্রেন। এরপর বিকেল ৪ টায় পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এছাড়াও সারা দিনে ৮টি আন্তঃনগর ট্রেন এবং ৩টি মেইল-কমিউটার ট্রেন চলাচল করে।

সকালে রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় নাদিম মোস্তফা নামে এক যাত্রী বলেন, তিনি ৩৭৫ টাকায় টিকিট কাউন্টার থেকে শোভন চেয়ারের একটি টিকিট ক্রয় করেছেন। ঢাকায় যাচ্ছেন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে। তিনি জানান, গণপরিবহন চালু করায় আমাদের মতো সাধারণ মানুষের একটু সুবিধা হয়েছে। এখন কম খরচেই যাতায়াত করা যাচ্ছে। তবে অনেকেই দেখলাম স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। কারো মুখে মাস্ক আছে, কারো নেই। এভাবে চলতে থাকলে করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল জানান, সরকারি ভাবে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আমরা তার বাস্তবায়ন করবো। স্বাস্থ্যবিধি মানতে নগরীতে ৪ টি ভ্রাম্যমান টিম কাজ করছে। তা চলমান রয়েছে। বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পরে স্বাস্থ্যবিধি মানতে শুধু প্রশাসন কাজ করলে হবে না। সাবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। যার যার জায়গা থেকে স্বাস্থাবিধি মানতে প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে।

  • 37
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে