ব্যবসায়ীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে স্বর্ণবার ছিনতাই করা অভিযুক্ত ৬ ডিবি কর্মকর্তা

প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২১; সময়: ৯:১২ অপরাহ্ণ |
ব্যবসায়ীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে স্বর্ণবার ছিনতাই করা অভিযুক্ত ৬ ডিবি কর্মকর্তা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : চট্টগ্রামের স্বর্ণ ব্যবসায়ীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকার সোনার বার ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে ফেনী গোয়েন্দা পুলিশের ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ছিনতাইয়ের সময় প্রাণভিক্ষা চেয়ে শারীরিক নির্যাতনের পর রক্ষা পান ব্যবসায়ী। ভুক্তভোগী স্বর্ণ ব্যবসায়ী দায়ের করা মামলার এজাহারে এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দেন।

রোববার (৮ আগস্ট) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফতেহপুর রেলওয়ে ওভারব্রিজের সামনে ফেনী গোয়েন্দা পুলিশের ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় ছিনতাই হওয়া ২০টি বারের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৫টি বার উদ্ধার করেছে ফেনী মডেল থানা পুলিশ।

ফেনী মডেল থানা পুলিশ জানায়, ডিবি পুলিশের কাছ থেকে ব্যবসায়ীর ছিনতাই হওয়া ২০টি বারের মধ্যে ১৫টি বার ইতোমধ্যে উদ্ধার করেছে ফেনী মডেল থানা পুলিশ। ফেনী থানার ওসির নেতৃত্বে ছিনতাইয়ে অভিযুক্ত ওসি ডিবির বাসার আলমারি থেকে ১৫টি বার উদ্ধার করেছে পুলিশ।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত ওসি ডিবি সাইফুল ইসলাম পুলিশকে জানায়, তার নির্দেশে এসআই মোতাহের, এসআই নুরুল হকের দুটি টিম ঘটনাস্থলে গেলেও স্বর্ণের বার ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা তারা চারজনসহ এসআই মিজানুর রহমান ও এএসআই অভিজিৎ বড়ুয়া জানতো এবং অন্যরা জানতো না।

ছিনতাই হওয়া ২০টি স্বর্ণের বারের মোট ওজন ২ কেজি ৩৩০ গ্রাম। যার বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি ২৭ লাখ ৮৪ হাজার ৬৩৬ টাকা।

এর আগে ঘটনার পর ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী গোপাল কান্তি দাস মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার হাজারী লেনের ইকুইটি কোহিনূর মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ‘আলো জুয়েলার্স’র স্বত্বাধিকারী তিনি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের চকরিয়া উপজেলায়। রোববার (৮ আগস্ট) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে একটি প্রাইভেট-কারে করে চট্টগ্রাম থেকে ২০ পিস স্বর্ণের বার নিয়ে অলঙ্কার তৈরির জন্য ঢাকার তাঁতিবাজারের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। যাত্রা পথে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ফেনী মডেল থানার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফতেহপুর রেলওয়ে ওভারব্রিজের সামনে পৌঁছালে ওয়্যারলেস ও পিস্তলসহ গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের জ্যাকেট পরিহিত চারজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি তার গাড়ি থামাতে সিগন্যাল দেয়।

এজাহারে আরও বলেন, গাড়ি থামানোর পরই জ্যাকেট পরিহিত তিনজন গাড়ির ভেতরে ঢুকে। গাড়ির ভেতরে থাকা একজন পুলিশ ওই ব্যবসায়ীর মাথায় পিস্তল ধরে ও অন্য আরেকজন গাড়ি চালক শওকতকে বেধম মারধর করে। মারধরের একপর্যায়ে তারা নিজেদের ফেনী ডিবি পুলিশের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বলেন, তোদের কাছে অবৈধ মালামাল আছে, তাড়াতাড়ি বের কর।

তখন অবৈধ মালামাল না থাকার বিষয়টি জানিয়ে আমার কাছে থাকা ২০ পিস বৈধ স্বর্ণের কথা জানাই। তখন তারা ‘ডিবির ওসি স্যার আসতেছে, উনি এলে বিস্তারিত আলাপ হবে- এমন কথা বলে। এভাবে ২০ থেকে ৩০ মিনিট চলার পর সাদা রঙের একটি গাড়িতে সাদা পোশাকে একজন কর্মকর্তা আসতেই তারা জোর করে আমাকে ওই গাড়িতে উঠায়। এছাড়া যারা সিগন্যাল দিয়ে দাঁড় করিয়েছিল তাদের ছিল নীল রঙের আইআরএক্স হায়েস।

ব্যবসায়ী জানায়, গাড়িতে ওঠানোর পর ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তা স্বর্ণের বারগুলো দেখতে চাইলে তাকে দেখানো মাত্র তিনি কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে বলেন, তোর কাছে যতই বৈধ কাগজপত্র থাকুক না কেন এ মুহূর্তে তোকে ক্রসফায়ারে দেব অথবা ৫০০ থেকে ৭০০ পিস ইয়াবা দিয়ে চালান দেব।

তখন আমি ভয় পেয়ে তাদের কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলে তারা বলে, স্বর্ণের বারগুলো তো পাবিই না, তোর এই গাড়ি, ড্রাইভার ও তোর নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য ১ কোটি টাকা দিতে হবে।

ব্যবসায়ী আরও জানায়, ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে ফ্লাইওভারের নিচে রেলগেট সংলগ্ন নির্জন এলাকায় নিয়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে তারা। নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়লে একপর্যায়ে তারা আমাকে দিয়ে এটা বলতে বাধ্য করে যে, আমার কাছে তারা ১২ পিস স্বর্ণের বার পেয়েছে যার বৈধ কাগজ দেখালে তারা আমাকে ছেড়ে দেয়। একই সঙ্গে আমার দেয়া বক্তব্য জোর করে ভিডিও ধারণ করে এবং ঘটনাটি কারও কাছে প্রকাশ করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

ব্যবসায়ী গোপাল কান্তি দাস বলেন, গাড়িটি থামার পর তারা চোখ খুলে দিলে গাড়ি থেকে নেমে জায়গাটি বারৈয়ারহাট দেখতে পাই। ওই সময় তারা আবারও আগের মতো জোর করে স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ধারণ করে। সবশেষে রাত প্রায় সোয়া ৮টার দিকে আমার গাড়িতে চালক শওকতকে তুলে দিয়ে সোজা বাড়ি ফিরে যেতে বলে। ওই সময় তারা বলে, এখানে যা হয়েছে সব ভুলে যাও। এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় তারা। পরবর্তী সময়ে তিনি গাড়ি নিয়ে সোজা চট্টগ্রামে নিজ বাসায় ফিরেন।

চট্টগ্রাম ফিরে স্বজন ও ব্যবসায়ীদের ঘটনা খুলে বলেন। এ সময় স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পরামর্শে মঙ্গলবার ফেনী মডেল থানায় হাজির হয়ে বিষয়টি থানার ওসিকে মৌখিকভাবে জানানো হয়। তখন ওসি বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ওইদিন দুপুর ১টা ২০ মিনিটে পুলিশ লাইনে কর্মরত ডিবির কর্মকর্তাদের জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় হাজির করলে ডিবির ওসি মো. সাইফুল ইসলাম, এসআই মোতাহের হোসেন, এসআই নুরুল হক ও এএসআই মাসুদ রানাকে শনাক্ত করতে সক্ষম হন ওই ব্যবসায়ী। তাদের রোববারের ঘটনা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা স্বর্ণের বার ছিনিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করে এবং বারগুলো ওসি ডিবির বাসায় রয়েছে বলে জানায়।

ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে পুলিশ জব্দকৃত স্বর্ণের বারগুলো তাদের হেফাজতে নেয়। বাকি পাঁচটি বার পাওয়া যায়নি।

  • 367
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে