নগরবাড়ী আধুনিক নৌবন্দর নির্মাণ কাজে স্থবির

প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২১; সময়: ৬:১৭ অপরাহ্ণ |
নগরবাড়ী আধুনিক নৌবন্দর নির্মাণ কাজে স্থবির

রাজিউর রহমান রুমী, পাবনা : পাবনার নগরবাড়িতে আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক নৌবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের কাজ স্থবির হয়ে পরেছে। ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতায় এই স্থবিরতা। ভূমিদাতারা জমির অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের অর্থ না পাওয়ায় নেমেছে আন্দলনে। এতে রয়েছে কাজ বন্ধ।

গত জুন মাসে প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে মাত্র ২৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। ফলে প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকায় বর্ধিত মেয়াদেও এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এটি সরকারের একটি মেগা প্রকল্প।

নৌ পরিবহণ মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা যায়, পাবনার “নগরবাড়িতে আধুনিক সুবিধাদিসহ নদীবন্দর নির্মাণ” শিরোনামে ২০১৮ সালে এই মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ব্যায় ধরা হয় ৫১৩ কোটি টাকা। উত্তরাঞ্চলে নৌপথে পণ্য পরিবহন সুবিধা বাড়াতে দেশের সবচেয়ে আধুনিক এই নদীবন্দর।

তিন বছর মেয়াদী এই মেগা প্রকল্পের মেয়াদ গত জুনে বছর শেষ হয়েছে। এই সময়ে কাজ হয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের সময়কাল এক বছর বৃদ্ধি করেছে সরকার। সেই সঙ্গে বেড়েছে ব্যয়ও। আগের বাজেটের সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা।

এদিকে, নতুন মেয়াদেও কাজের অগ্রগতি থমকে গেছে জমিদাতাদের আন্দোলেনে । তাদের অভিযোগ গত তিন বছরে জমি অধিগ্রহনের ক্ষতিপূরণের একটি টাকাও পায় নাই। উপায় অন্তর না দেখে আন্দোলনে নেমেছেন তারা। ফলে প্রকল্পের সব ধরনের কাজ গত কয়েকমাস ধরে বন্ধ রয়েছে।

তারা জানান, এই প্রকল্পের জন্য নগরবাড়িতে যমুনা নদী পাড়ে মোট ৩৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এই ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝিয়ে দেয়ার কথা। প্রকল্প থেকে জেলা প্রশাসককে টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্ত অজ্ঞাত কারনে আইনের জটিলতা দেখিয়ে ক্ষতিগ্রস্থদেও এই টাকা দেয়া হচ্ছেনা। প্রকল্পের লোকজন জোরপূর্বক জমি দখলে নিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলনে নামতে হয়েছে।

বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন করে তারা প্রতিকার চাইছেন। ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিক ও পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিকউল্লাহ্ বলেন, প্রকল্প কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণ করা মোট ৩৬ একরের মধ্যে ২৮ একর জমি ৬০ থেকে ৭০ জনের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। তারা কেউই ক্ষতিপূরণ পাননি।

নগরবাড়ির রঘুনাথপুরের বাসিন্দা আরশেদ আলী শেখ বলেন, “আমাদের পরিবাবের উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া ৭২ ডেসিমেল জমি বন্দরের নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কতৃপক্ষ আমাদের ফসল নষ্ট করে, গোডাউন ভেঙে মাটি ভরাট কাজ করেছে। কিন্তু একটি টাকায় ক্ষতিপূরণ দেয়নি।

একই এলাকার আমির হোসেন, মোহাম্মদ রওশন, দেলোয়ার হোসেন, শাহীন শাহ,আব্দুল কুদ্দুসসহ বেশ কয়েক জন জমি মালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ক্ষতিপূরনের টাকা না দিয়ে জমি দখলে নিয়ে নেয়ায় আমাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। নদীপাড়ের এ জমিগুলো গুদাম ভাড়া, ফসলাদি আমাদের আয়ের একমাত্র পথ।

কিন্তু কোন বিকল্প ব্যবস্থা না করেই ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি দখল করে নেয়া হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই সকল জমি মালিক ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। ক্ষতিপূরণ না পেলে প্রাণ গেলেও কাজ করতে দেওয়া হবে না।

বিআইডাব্লিউটি’র নতুন বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিন পাঠান জানান, প্রকল্প কতৃপক্ষ ইতিমধ্যেই পাবনা জেলা প্রশাসনের কাছে ভূমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের টাকা হিসেবে ৯০ কোটি টাকা প্রদান করেছে।

বিআইডাব্লিউটি’র ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানের এখতিয়ার নেই, নিয়ম অনুযায়ী জেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে প্রয়োাজনীয় পদক্ষেপ নেবে। কাজ বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে কাজ স্থগিত ছিলো। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। নির্ধারিত নতুন সময় সীমার মধ্যেই কাজ শেষ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন তারা।

জমিদাতাদের ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি, রাজস্ব) আফরোজা আক্তার জানান, পাবনা আদালতে বরিশালের বাকেরগঞ্জের থানাপাড়া গ্রামের মরহুম মহিম চৌধুরীর ছেলে পরিচয়ে তারেক চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি অধিগ্রহণকৃত পুরো জমির মালিকানা দাবি করে মামলা দায়ের করায় ক্ষতিপূরণ প্রদান স্থগিত স্থগিত রয়েছে।

মামলায় তারেক চৌধুরী দাবি করেছেন , তার পূর্ব পুরুষ রঘুনাথপুর গ্রামে বসবাস করতো এবং নির্মানাধীণ নতুন বন্দর যে জমিতে তৈরি হচ্ছে তা তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন। কেবল আদালতের আদেশ পেলেই ক্ষতিপূরণ দেয়া সম্ভব।

তবে, ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিকউল্লাহ বলেন, রঘুনাথপুর গ্রামের বাসিন্দারা তারেক চৌধুরী কিংবা তার পূর্বপুরুষের কাউকেই চিনতে পারেনি। গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরার এই ব্যাক্তিদের দেয়া পরিচয়ের কেউ এ গ্রামে কখনো বসতি ছিলো না বলে নিশ্চিত করেছেন।

জমি অধিগ্রহণের অর্থ বরাদ্দের আগে তারা কখনো এসব ভূমির মালিকানাও দাবী করেননি। এটি গ্রামবাসীকে ঠকিয়ে অধিগ্রহণের অর্থ লুটের ষড়যন্ত্র। এ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য আদালতে জমা দিয়েছি।

এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারী কোন প্রকল্প কাজে জমি অধিগ্রহণ করতে চাইলে একটি চক্র রাতারাতি জমির মালিকানা দাবী করে আবেদন করে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত্য মালিকরা পরেযায় বিপাকে। পরে তারা এই চক্রের সাথে সমযথা করতে বাধ্য হয়।

নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, প্রকৃত মালিকরা অবশ্যই ক্ষতিপূরণ পাবেন। এ ব্যপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

  • 95
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে