লড়াইয়ে অস্ত্র হাতে আফগান নারী গভর্নর

প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২১; সময়: ১১:০৫ অপরাহ্ণ |
লড়াইয়ে অস্ত্র হাতে আফগান নারী গভর্নর

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় বালখ প্রদেশের চারকিন্ট জেলার গভর্নর সালিমা মাজারি। এখানে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। তিন বছর ধরে শহরটির দায়িত্বে রয়েছেন সালিমা। আফগানিস্তানজুড়ে তালেবান যোদ্ধাদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর লড়াই চলছে।

তালেবানের সঙ্গে সালিমার লড়াই নতুন কিছু নয়। তবে গত মাস থেকে তালেবানের হাত থেকে শহর রক্ষায় নিয়মিত কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করছেন তিনি। দ্য গার্ডিয়ান-এর এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে সালিমার তালেবান প্রতিরোধের বিষয়টি।

আফগানিস্তানে মাত্র তিনজন নারী জেলা গভর্নরের একজন হিসেবে সামরিক নেতৃত্ব নিজ হাতে নিয়ে ইতিমধ্যে মনোযোগ কেড়েছেন ৪০ বছর বয়সী সালিমা। তিনি বলেন, ‘কখনো কখনো চারকিন্টে আমার অফিসে বসতে হয় এবং অন্য সময় আমাকে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধে যোগ দিতে হয়।’

সালিমার কাজ শুধু দৈনন্দিন আমলাতান্ত্রিক কাজ নয়। তাঁকে সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে হয়। সালিমা বলেন, ‘আমরা এখন যদি চরমপন্থী মতাদর্শ চাপ প্রয়োগকারী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই না করি, তবে তাদের পরাজিত করার সুযোগ হারাব। তারা সফল হবে। তাদের আদর্শ গ্রহণে সমাজের মস্তিষ্ক ধোলাই করবে।’

সালিমা ১৯৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। সোভিয়েত যুদ্ধের সময় তাঁর পরিবার আফগানিস্তান ছেড়ে যায়। তিনি তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অভিবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় বিভিন্ন ভূমিকা পালন করেছিলেন। ২০১৮ সালে আফগান সরকার যখন চারকিন্টের গভর্নর নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, তিনি তখন আবেদন করেন। তাঁর অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার কারণে নিয়োগ পান।

সালিমা বলেন, নারী গভর্নর হিসেবে বৈষম্যের মুখে পড়বেন বলে প্রথমে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। কিন্তু পরে চারকিন্টে আসার পর তাঁর সমর্থন দেখে তিনি আশ্চর্য হয়ে যান। পুরুষ অভিভাবক ও বোরকা ছাড়া যেখানে কেউ বাইরে আসে না, সেখানে নারী গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করাটা সহজ ছিল না।

দুই বছর আগে সালিমা তাঁর জেলার সুরক্ষার জন্য একটি নিরাপত্তা কমিশন প্রতিষ্ঠা করেন। এই কমিশন স্থানীয় মিলিশিয়া বাহিনীতে নিয়োগ দেয়। তিনি জেলার সব মানুষের মতামত নিয়ে চারকিন্টের পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টা চালান। এতে সরকারি কর্তৃপক্ষের ওপর বাসিন্দাদের আস্থা বাড়ে।

সালিমা বলেন, ‘সাম্প্রতিক সহিংসতায় আমরা তালেবান আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছি এবং তাদের চারকিন্টের বাইরে রাখতে পেরেছি।’ তিনি চারকিন্টের উপকণ্ঠে তার সৈন্য মোতায়েন করে রেখেছেন, যাতে তারা আক্রমণ প্রতিহত করতে পারে।

এখন পর্যন্ত চরকিন্ট আফগানিস্তানের একমাত্র জেলা, যা একজন নারী নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন এবং এটি কোনো গোষ্ঠী এখনো দখলে নিতে পারেনি। তবে অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে বলে সজাগ রয়েছেন সালিমা। গত সপ্তাহে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি প্রাদেশিক রাজধানীর দখল নিয়েছে তালেবান যোদ্ধারা।

বালখ প্রদেশজুড়েও লড়াই শুরু হয়েছে। গত বছর সালিমা তাঁর অঞ্চলে ১০০ তালেবান সেনাকে আত্মসমর্পণ করতে সফল আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু এ ধরনের আলোচনা সব সময় সফল হয় না বলেও জানান তিনি।

তালেবানদের বর্বরতার বিরুদ্ধে একজন শক্তিশালী নারী হিসেবে দাঁড়ানোর খ্যাতি সালিমার জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তালেবানের কয়েকটি হামলায় তিনি বেঁচে গেছেন। সালিমা বলেন, ‘আমি ভয় পাই না। আমি আফগানিস্তানে আইনের শাসনে বিশ্বাসী।’

  • 29
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে