কাবুলে ঢুকে পড়েছে তালেবান

প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২১; সময়: ২:৫৩ অপরাহ্ণ |
কাবুলে ঢুকে পড়েছে তালেবান

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করা শুরু করেছে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালেবান। শহরটির চারপাশ দিয়ে একযোগে রাজধানীতে প্রবেশ করছে তারা। আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তালেবান বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও আলজাজিরা।

মার্কিন সেনাসহ সকল বিদেশি সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার মধ্যেই আফগানিস্তানজুড়ে সরকারি বাহিনী ও তালেবান যোদ্ধাদের মধ্যে যুদ্ধের তীব্রতা আরও বেড়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা দখলে নিচ্ছে তালেবান। এই পরিস্থিতিতে আফগান রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করা শুরু করেছে তালেবান যোদ্ধারা।

রোববার (১৫ আগস্ট) ভোরে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় নানগারহার প্রদেশের রাজধানী শহর জালালাবাদ দখলে নেয় তালেবান যোদ্ধারা। আফগানিস্তানের পঞ্চম বৃহত্তম এই শহরটি রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ৮০ মাইল পূর্বে অবস্থিত।

এর আগে শনিবার চতুর্থ বৃহত্তম আফগান শহর মাজার-ই-শরীফ দখলে নেয় তালেবান। এরপর রোববার দুপুরের দিকে রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করা শুরু করে গোষ্ঠীটির যোদ্ধারা। আফগানিস্তানের বড় শহরগুলোর মধ্যে একমাত্র কাবুলই তালেবানের দখলে যেতে বাকি ছিল।

আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শহরের সকল দিক থেকে রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করা শুরু করেছে তালেবান যোদ্ধারা।

এছাড়া কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থান করা তালেবানের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করে আলজাজিরাকে জানিয়েছেন, তালেবান যোদ্ধাদেরকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে আদেশ দেওয়া হয়েছে এবং বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যারা কাবুলের বাইরে চলে যেতে চায়, তাদেরকে সেই সুযোগ করে দেওয়ারও আদেশ দেওয়া হয়েছে।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বাহিনী তাদের বাকি সেনাদের আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর আগুয়ান তালেবান যোদ্ধাদের সামনে সরকারি বাহিনীর প্রতিরোধ ধসে পড়েছে।

সরকার সমর্থক দুই প্রভাবশালী মিলিশিয়া বাহিনীর নেতা আতা মোহাম্মদ নূর ও আবদুল রশীদ দোস্তামও পালিয়েছেন। নূর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেছেন, মাজার-ই-শরিফ যে প্রদেশের রাজধানী, সেই বলখ প্রদেশ ষড়যন্ত্র করে তালেবানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে শনিবার এক বিবৃতিতে তালেবান বলেছে, তাদের একের পর এক অঞ্চল জয়, এটাই দেখাচ্ছে যে জনগণের কাছে তারা কতটা জনপ্রিয়। তালেবানের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আফগান জনগণ ও বিদেশি সবাই নিরাপদে থাকতে পারবে বলেও আশ্বস্ত করেছে তারা।

ইসলামিক আমিরাত (নিজেদেরকে এ নামেই পরিচয় দেয় তালেবান) সবসময়ই তাদের (জনগণ ও বিদেশি) জানমাল ও সম্মানের সুরক্ষা দেবে। জাতির জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করবে। কূটনীতিক এবং আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার কর্মীদেরও কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না, বলেছে তারা।

তবে এই আশ্বাস যে কাজে দিচ্ছে না, তা বোঝা যাচ্ছে কাবুলে বাড়তে থাকা উদ্বাস্তুদের ভিড় দেখে। বিভিন্ন প্রদেশের হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিতে ছুটে এসেছেন রাজধানীতে। পুরো দেশ ফের কট্টর ইসলামি শাসনে ঢুকে যাবে, এমন উদ্বেগও তাদের মধ্যে।

রোববার তালেবান নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন প্রদেশ থেকে রাজধানীতে আসা অসংখ্য আফগানকে ট্যাক্সি থেকে মালপত্র নামাতে দেখা গেছে। অসংখ্য পরিবারকে দেখা গেছে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস মজুদ করে রাখতে শহরতলীগুলোতে ছিল মানুষের ভিড়।

অসংখ্য মানুষকে খোলা আকাশের নিচে, রাস্তার ধারে বা গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় তাঁবুতে গাদাগাদি করে ঘুমাতে দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কাবুলের এক বাসিন্দা। তাদের চোখে মুখে আতঙ্ক দেখতে পাবেন আপনি, বলেছেন তিনি।

এ পরিস্থিতিতে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের সরকার তাদের দূতাবাস খালি করে ফেলা এবং আফগানিস্তানে থাকা দেশগুলোর নাগরিক ও তাদের সঙ্গে কাজ করা আফগানদের যত দ্রুত সম্ভব দেশটি থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা কার্যকরে তৎপরতা বাড়িয়েছে।

শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নাগরিক এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ‘সুশৃঙ্খলভাবে ও নিরাপদে’ সরিয়ে নিতে দেশটিতে ৫ হাজার সেনা মোতায়েনের অনুমতি দিয়েছেন। নতুন করে দেশটিতে যাদের পাঠানো হচ্ছে তাদের মধ্যে ৮২ এয়ারবোর্ন ডিভিশনের এক হাজার সদস্য আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যও আফগানিস্তানে তাদের দূতাবাস খালি করার কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। দেশটিতে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত রোববার সন্ধ্যায় আফগানিস্তান ছাড়বেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমগুলো। ইরানি এক কর্মকর্তা জানিয়েছে, তারাও সোমবারের মধ্যেই তাদের কাবুল দূতাবাস খালি করে ফেলবেন।

মার্কিন কর্মকর্তারা এখন আফগানিস্তানে তাদের সঙ্গে কাজ করা ব্যক্তি ও যাদের যাদের শিগগিরই দেশটি থেকে সরিয়ে নেওয়া দরকার বলে মনে হচ্ছে তাদের তালিকা করছেন; এজন্য তারা অনেকের কাছে নামও চাইছেন বলে বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুইজন রয়টার্সকে বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এ তালিকায় সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের নামও থাকতে পারে।

বাইডেন বলেছেন, কাতারে আলোচনায় তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের ঝুঁকিতে ফেলবে এমন যে কোনো পদক্ষেপের পাল্টায় তালেবানকে ‘দ্রুত ও ব্যাপক মার্কিন সামরিক উপস্থিতির’ মুখে পড়তে হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।

তালেবান বাহিনী ধারণার চেয়েও দ্রুতগতিতে একের পর এক আফগান শহর দখল করে নেওয়ায় দেশের ভেতরেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

ডেমোক্র্যাট এ প্রেসিডেন্ট এখন বলছেন, নিজের ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার দায়িত্ব এখন আফগান সামরিক বাহিনীর। অন্য এক দেশের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে চিরকালের জন্য মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতি আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয় না, শনিবার এমনটাই বলেছেন বাইডেন।

পরিস্থিতি নিয়ে এদিন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনসহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

গনি ও ব্লিনকেনের মধ্যে আফগানিস্তানে সহিংসতা হ্রাসে জরুরি প্রচেষ্টা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আফগান সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে আলোচনার আয়োজন করা কাতার তালেবান বাহিনীকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে।

যে কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে গনিকে পদত্যাগ করতে হবে শর্ত দিয়েছে তালেবান; তাদের এ শর্ত মেনে নেওয়ার কোনো ইঙ্গিত এখন পর্যন্ত আফগান প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

  • 2
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে